প্রধামন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ সহায়তার আশ্বাসের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের রেশন প্রদানের নিশ্চয়তার প্রেক্ষিতে লংগদুতে অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্থ তিনটি গ্রামের পাহাড়ী লোকজন বুধবার সরকারী ত্রাণ গ্রহন করেছেন।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান ক্ষতিগ্রস্থ ২১৩টি পাহাড়ী পরিবারকে সরকারী ত্রাণ সহায়তা হিসেবে পরিবার প্রতি ৩০ কেজি করে খাদ্য শষ্য, ২ বান্ডিল ঢেউটিন, ৬ হাজার করে গৃহ নির্মাণ অনুদান এবং ২ টি করে কম্বল বিতরণ করেন। লংগদু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাদ্দেক মেহেদী ইমাম, লংগদু ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কুলিন মিত্র চাকমা,আটারকছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মঙ্গল কান্তি চাকমাসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় হেডম্যান, কার্বারীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থার ত্রাণ সহায়তা নিলেও এতদিন সরকারীভাবে কোন ত্রাণ সহায়তা গ্রহন করেননি। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ পাহাড়ীরা সরকারের পক্ষ থেকে পূর্ন নিরাপত্তাসহ যথাযথ পূর্নবাসনের আশ্বাস না পাওয়া পর্ষন্ত ভিটেমাটিতে ফিরে না যাওয়ার অনড় থাকেন। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় সরকারের কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের দলের মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নেতৃত্ব ১৪ দলের একটি প্রতিনিধি দল, মন্ত্রী পরিষদের গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এরপরও সরকারীভাবে কোন পূর্ন আশ্বাস না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ পাহাড়ীরা তাদের দাবী-দাওয়া নিয়ে অনড় থাকেন।
মানিকজোড় ছড়া এলাকায় আশ্রয় নেয়া ক্ষতিগ্রস্থ সমীরণ চাকমা জানান, সরকারের পক্ষ থেকে পূর্ন আশ্বাসের পর সরকারী ত্রাণ গ্রহন করেছে। ক্ষতিগ্রস্থ এখনো নিজেদের ভিটেমাটিতে না পারলেও মানিকজোড় পাড়া এলাকায় কিছু কিছু ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার টঙ তৈরী করে সেখানে দিনযাপন করছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির উপজেলা শাখার সাধার সম্পাদক মনি শংকর চাকমা জানান, জেলা প্রশাসক প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ক্ষতিগ্রস্থ প্রতি পরিবারকে ঘর নির্মানের জন্য ৫লাখ টাকা এবং একমাসের এসব অর্থ প্রদানের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন। এছাড়া জেলা প্রশাসকের বিশেষ বরাদ্দ থেকে রেশন প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন। এসব প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন সরকারী ত্রাণ সহায়তা গ্রহন করেছেন। তবে আগামী একমাসের মধ্যে এসব প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করা না হলে পরবর্তীতে কোন সরকারী ত্রাণ সহায়তা নেবে না ক্ষতিগ্রস্থরা।
আটারকছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মঙ্গল কান্তি চাকমা জানান, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থদের ঘরবাড়ি নিমার্ণ ও ক্ষতিগ্রস্থদের রেশন প্রদানের প্রতিশ্রুতিতে সরকারী ত্রান গ্রহন করেছে ক্ষতিগ্রস্থ পাহাড়ীরা।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান জানান, লংগদুর ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য প্রধানমন্ত্রী দপ্তর থেকে একটি প্যাকেজের মাধ্যমে ঘরবাড়ি নির্মাণ পূর্নবাসন এবং জেলা প্রশাসকের বিশেষ বরাদ্দ থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের রেশন প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গেল ১জুন খাগড়াছড়ি জেলার খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের চার মাইলের যৌথ খামার এলাকা থেকে রাঙামাটির লংগদু উপজেলা সদর ইউনিয়ন শাখার যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভাড়ায় চালিত মোটর বাইক চালক নুরুল ইসলাম নয়নের লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই দিন তিনি মোটরসাইকেলে যাত্রী নিয়ে লংগদু থেকে খাগড়াছড়ি যান। গেল ২ জুন স্থানীয় বাঙালীরা নয়নের লাশ নিয়ে লংগদু সদরে মিছিল বের সময় তিনটিলা,পূর্ব ও পশ্চিম মানিকজোড় ছড়া ও বাত্যা পাড়া গ্রামে হামলা,লুটপাত ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে অন্ততপক্ষে দুই শতের অধিক ঘরবাড়ী আগুনে পুড়ে যায় এবং গুনমালা চাকমা নামে এক বৃদ্ধ অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যূ হয়। এ ঘটনায় দুটি পৃথক মামলা দায়ের পর এ পর্ষন্ত ২৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.