বান্দরবানের লামায় বন্যা প্লাবিত হয়ে পানি বন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। এক মাসের ব্যবধানে ফের টানা তিন দিনের ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে লামা পৌর এলাকাসহ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের শতশত ঘরবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে।
মাতামুহুরী নদী, লামাখাল, ইয়াংছা খাল, বগাইছড়িখাল ও পোপা খালসহ বিভিন্ন স্থানের পাহাড়ি ঝিরিগুলোতে অস্বাভাবিক ভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। সোমবার থেকে লামা- আলীকদম উপজেলায় বিদ্যুৎ বন্ধ রয়েছে।
টানা বর্ষণ অব্যাহত থাকলে ভয়াবহ বন্যাসহ পাহাড়ধসে মানবিক বিপর্যয়ের আশংকা রয়েছে। মঙ্গলবার সকালে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত টানা বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে।পাহাড়ে ঝুঁকিতে বসবাসকারী ও পনিবন্দী মানুষকে নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে। বন্যার করনে লামা উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানি বন্দী হয়ে আছে। এ বন্যার কারনে মানুষ অনেক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখিনে পড়বে। টানা বৃষ্টির কারণে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসও দেখা দিয়েছে। বর্ষণের পানির স্রোতে সড়ক ভেঙ্গে ও সড়কের উপর পাহাড় ধসে পড়ে বিভিন্ন স্থানে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, লামা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ফাজিল মাদ্রাসা ও চেয়ারম্যান পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঁচ শতাধিক পানিবন্দী পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।
লামা বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি মোঃ আমান উল্লান বলেন, যে পরিমাণ পানি হয়েছে তাতে শুধু বাজার ব্যবসায়ীদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হবে কয়েক কোটি টাকা। মাতামুহুরী নদীর গতিপদ পরিবর্তন ছাড়া বারবার সৃষ্ট এই বন্যা ঠেকানো সম্ভব নয়। ব্যবসায়ীদের আশ্রয় নেওয়ার কোনো জায়গা নেই। লামা বাজারে একটি স্থায়ী ভাবে আশ্রয় কেন্দ্র করা প্রয়োজন।
রুপসীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ছাচিং প্রু মার্মা জানান, পাহাড়ি ঢলে সমগ্র এলাকা এখন পানির নিচে। পানি আরো বাড়বে। পাহাড়ি বাঙ্গালি মানুষের দুর্ভোগ চরমে।
৩ নং ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার বলেন, গতকাল সোমবার থেকে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। প্রচুর স্থানে পাহাড় ধস হয়েছে তবে প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। এ সময় ত্রাণের প্রয়োজন ছিল। অধিকাংশ মানুষ ক্ষয়ক্ষতির শিকার।
লামা পৌরসভার মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, লামা বাজারসহ পৌর এলাকা এখন পানির নিচে। সোমবার থেকে পানিবন্দী মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সবাইকে নৌকা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। শুধু পৌর এলাকার প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ভুক্তভোগী মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ত্রাণ, নিরাপদ পানি ও শুকনো খাবারের অভাব দেখা দিয়েছে।
লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খিন ওয়ান নু বলেন, মুষলধারে বৃষ্টির কারনে লামা বন্যা প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল নাগাদ মাতামহুরী নদীর পানি বিপদসীমা ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। ভারী বর্ষণে উপজেলার বিভিন্ন স্থানের পাহাড় ধসে প্রানহানির আশঙ্কায় উপজেলা প্রশাসন, লামা পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোর পক্ষ থেকে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদেরকে নিরাপদে আশ্রয় নেয়ার জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে। বন্যা কবলিতদেরকে আশ্রয় নেয়ার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের আবাসিক কোয়ার্টারসমূহ খুলে দিয়েছে প্রশাসন।
তিনি আরো জানান, বন্যা পরিস্থিতিতে সার্বক্ষনিক তদারকি করেছি। যে কোন দুর্ঘটনার খবর পাওয়া মাত্র সহায়তা করার জন্য ফায়ার সার্ভিস ও অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। খাদ্য গুদামে প্রায় একশত মেট্রিক টন চাল ও গম মজুদ রয়েছে। বন্যা কবলিত মানুষদের খিচুড়ী দেওয়া হয়েছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.