পাহাড় ধসের ঘটনায় রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া কিছু কিছু পরিবার নিজ উদ্যোগে বসত ভিটায় ফিরতে শুরু করেছেন।
এদিকে, রাঙামাটি জেলায় ক্ষতিগ্রস্থ সড়কগুলোতে জরুরী সংযোগের স্বার্থে ভেঙ্গে যাওয়া ১১৩টি স্থানে মেরামতের জন্য ১৪কোটি ১লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে বলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সুত্রে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গেল ১৩ জুন ভারী বর্ষনে পাহাড় ধসে রাঙামাটি শহরের ভেদভেদীর যুব উন্নয়ন বোর্ড এলাকা,মুসলিম পাড়া.শিমুলতলী এলাকা,সাপছড়ি,মগবান,বালুখালী এলাকায় এবং জুরাছড়ি,কাপ্তাই,কাউখালী ও বিলাইছড়ি এলাকায় দুই সেনা কর্মকর্তা ও ৩ সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের মৃত্যূ হয়। এ ঘটনার পর সারাদেশের সাথে সড়ক যোগযোগের এক সপ্তাহ বিচ্ছিন্ন থাকার পর রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে হালকা যানবাহনের জন্য খুলে দেয়া হয়।
পাহাড় ধসের ঘটনায় রাঙামাটি শহরের ভেদেভদী, যুব উন্নয়ন বোর্ড শিমুলতলী,রুপনগর, মুসলিম পাড়া,মোনঘর এলাকা,ওমদা মিয়া হিলসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ১৯টি আশ্রয় কেন্দ্রে ক্ষতিগ্রস্থ ৩ হাজার ২শ জন নারী-পুরুষ ও শিশু আশ্রয় নেন। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা আশ্রিতদের জন্য সরকার ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি নাস্তাসহ দুবেলা খাওয়া দেয়া হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হওয়ায় আশ্রিতদের মধ্যে যাদের বাড়ীঘর ভাল রয়েছে তারা নিজ নিজ উদ্যোগে বাড়ী ফিরতে শুরু করেছেন। বিশেষ করে রাঙামাটি সরকারী কলেজ ও বিএডিসি আশ্রয় কেন্দ্রসহ কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্র থেকে যাদের ঘরবাড়ী পাহাড় ধসে সম্পুর্ন বিধস্ত হয়নি তারাই নিজ উদ্যোগে ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। আবার অনেক পরিবার যাদের ঘরে মালামাল ও হাঁস-মুরগি রয়েছে তারা দিনে বেলায় অবস্থান করলেও রাতের বেলায় আবার আশ্রয় কেন্দ্রে ফিরে আসছেন বলে জানা গেছে।
রোববার রাঙামাটি সরকারী কলেজ ও বিএডিসি আশ্রয় কেন্দ্রে ঘুরে জানা জানা গেছে, রাঙামাটি সরকারী কলেজ আশ্রয় নেয়া ৮১টি পরিবারের মধ্যে বর্তমানে ২৫টি পরিবার আশ্রয়ে রয়েছেন। বিএডিসি আশ্রয় কেন্দ্রে ৯৮টি পরিবারের মধ্যে বর্তমানে ৭৩টি পরিবার রয়েছেন। এছাড়াও ভেদভেদী পৌর উচ্চ বিদ্যালয়সহ কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্র থেকে দিন দিন আশ্রিত পরিবার কমতে শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
শহরের রুপনগরের নিজ বসত ভিটায় ফিরে যাওয়া মোঃ মোজাফর,পারভিন আক্তার,ফয়েজ ভান্ডাীর,খাদিজা ও জাহানারা জানান, এতদিন তারা আশ্রয় কেন্দ্রে ছিলেন। এখন একটু নিরাপদ বোধ করায় এবং নিজেদের ঘরবাড়ি ভাল থাকার কারণে তারা নিজেদের বসত ভিটায় ফিরে গেছেন।
বিএডিসি আশ্রয় কেন্দ্রের টিম লিডার শেখ শুক্কর জানান, আশ্রয় কেন্দ্র থেকে অনেকে নিজেদের ঘরবাড়ীতে ফিরে যাচ্ছেন। গতকালও (রোববার) আশ্রিত ২৬টি পরিবার যে যার বাড়ী ঘরে ফিরে গেছেন। এর মধ্যে বাঙালী পরিবার ১৬টি এবং পাহাড়ী পরিবার ১০টি। এ কেন্দ্রে মোট বাঙালী ৭২টি পরিবার এবং পাহাড়ী ২৬টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন।
রাঙামাটি সরকারী কলেজে আশ্রয় কেন্দ্রের টিম লিডার মোঃ ছগির হোসেন জানান, ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে যারা ফিরে গেছেন তারা তাদের ভগ্ন্ বাড়ি ঘরে ফেলা আসা জিনিসপত্রের পাশাপাশি হাঁস মুরগির তত্বাবধানের জন্য ফিরে যাচ্ছেন।
জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার খোন্দকার ইফতিকার উদ্দীন আরাফাত জানান, আশ্রয় কেন্দ্রগুলো থেকে শতকরা ৫০ভাগ অশ্রিত লোকজন চলে গেছেন। তাদের অনেকের ঘরবাড়ি ভাল থাকায় ও বৃষ্টিবাদল কিছুটা কমে যাওয়ায় তারা চলে যাচ্ছেন। আবার অনেক আশ্রিত লোকজন তাদের আত্বীয়-স্বজনদের বাসায় চলে গেছেন।
রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক এখনো চালু হয়নিঃ
গত ১৩ জুন পাহাড় ধসের ঘটনায় জেলার আভ্যন্তরীণ রাঙামাটি-মহালছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কের কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫টি স্থানে ভেঙ্গে যাওয়ায় এখনো ওই সড়কেন যানবাহন চালু করা যায়নি। ফলে ওই সড়কের যাতায়াতকারী লোকজনদের দুর্ভোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতোমধ্যে ওই সড়কের মানিকছড়ি এলাকার পর থেকে সড়কের প্রায় দেড় থেকে দুই কিলোমিটার জুড়ে রাস্তায় মারাতœক ভেঙে যাওয়া স্থান কাজ শুরু করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এ ব্যাপারে রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী, মোঃ আবু মুছা জানান, এ সড়কের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। তবে পুরোপুরি যানবাহন চলাচল চালু করতে আরো কয়েক দিন সময় লাগতে পারে।
জরুরী ভিত্তিতে সড়ক মেরামতের ১৪কোটি ১লাখ টাকার প্রকল্পঃ
রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ এমদাদ হোসেন জানিয়েছেন, পাহাড় ধসের ঘটনায় রাঙামাটি জেলায় ক্ষতিগ্রস্থ সড়কগুলোতে জরুরী সংযোগের স্বার্থে ভেঙ্গে যাওয়া ১১৩টি স্থানে মেরামতের জন্য ১৪কোটি ১লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বরাদ্দের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর কাছে প্রকল্প বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো জানান, রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের সাপছড়ির শালবাগান এলাকায় ভেঙ্গে সড়কে বেলী সেতুর কাজ কয়েক দিন পর শুরু করা হবে। ৫০মিটার দৈর্ঘ্যর এ সেতুর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২কোটি ৩৬ লাখ ৪৯ হাজার টাকা।
তিনি আরো বলেন, রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের ৩৩টি স্থানে ১১ ৭৩মিটার,রাঙামাটি-মহালছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কের কমপক্ষে ৪১ স্থানে মেরামতের জন্য ১১শ ৪৪মিটার,ঘাগড়া-বরইছড়ি সড়কের আট স্থানে ৪শ১৫ মিটার,বাঘাইছড়ি-দীঘিনালা সড়কের ৩টি স্থানে ৭৫মিটার,রাঙামাটি শহরাঞ্চলে বিভিন্ন স্থানে ১২০মিটার,বাঙাহালিয়া-রাজস্থলী সড়কের ১৯টি স্থানে ৩৩০মিটার এবং বগাছড়ি-নানিয়ারচর সড়কের ৩টি স্থানে ৭৫ মিটার। এ জরুরী কাজ স¤পন্ন করার জন্য তিনি পুরো জুলাই মাস সময় লাগবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
তিনি জানান, রাঙামাটি জেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে পূর্নাঙ্গভাবে ঢেলে সাজানোর উদ্দেশ্য সড়ক ও সেতু বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ইউসুফ আগামী কয়েক দিনের মধ্যে রাঙামাটি সফরে আসছেন। তিনি রাঙামাটিতে অবস্থান করে এ বিষয়ে দেখভাল করবেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.