গেল ১৩ জুন পাহাড় ধসে রাঙামাটি শহরের রুপনগর এলাকায় সালাহ উদ্দীন ও তার স্ত্রী রহিমা বেগমের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। বেচে যায় ১৭ মাস বয়সী সুমাইয়া আর চার বছরের মিম। সুমাইয়া আর মিম এখনো অবুঝ বলে জানে না নিষ্ঠুর প্রকৃতি তাদের বাবা-মায়ের জীবন কেড়ে নিয়েছে। বাবা-মাকে চির দিনের জন্য চলে যেতে হয়েছে না ফেরার দেশে। তাই এখন দুজনেরই ঠাই হয়েছে চাচার কাছে।
আবার একই আশ্রয় কেন্দ্রে নানী সালেহা খাতুন সাথে আশ্রয় নিয়েছে দুই বছরের ফারিয়া ও ছয় বছরের রাকিব। তাদের বাবা দরবেশ আলীও একই দিনে পাহাড় ধসে মারা গেছেন। আর মা রাবেয়া বেগম অনেক দিন আগে তাদের ত্যাগ করে অন্যত্র চলে গেছেন। তাদেরও ঠাই হয়েছে নানীর কাছে। শুধু সুমাইয়া,মীম,রাকিব ও ফারিয়াই নয়। নিষ্ঠুর প্রকৃতি তান্ডবলীলায় জীবন কেড়ে নিয়েছে এরককম অনেক পরিবারের স্বজনকে।
পাহাড় ধসের ঘটনার পর পর রাঙামাটি সরকারী কলেজ আশ্রয় কেন্দ্রে সুমাইয়া ও মিম আশ্রয় নেয় চাচা কাউসারের সাথে। অবার একই কেন্দ্রে ফারিয়া ও রাকিব অাশ্রয় নেয় নানী সুফিয়া খাতুনের সাথে। সেখানে কথা হয় সুমাইয়া ও মিমের চাচা মো: কাউসার এবং নিহত দরবেশ আলীর মা সালেহা খাতুনের সাথে।
কাউসার প্রতিবদককে জানান, শহরের রুপ নগর এলাকায় তার বড় ভাই সালাহ উদ্দীন ও ভাবী রহিমা বেগম গেল ১৩ জুন পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়ে মারা যান। তাদের পরিবারের ছয় জনের মধ্যে ৪ জন বেচে যান। এখন মা সুফিয়া খাতুন, মিম ও সুমাইয়াকে নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানেই তাদের নিয়ে দিন যাপন করছেন।
এসময় চাচার কোলে ছিল সুমাইয়া। কথা বলার সময় একটু পর পর কান্না করে উঠছে সুমাইয়া। জিজ্ঞাসা করাতে কাউসার জানান, মাকে খুজছে তাকে না পেয়ে বার বার কান্না করছে।
তিনি আরো জানান, সুমাইয়া ও মিমের মাবাবা মারা যাওয়ার পর এখন তার কাছে রয়েছে। তাদের যাবতীয় দায়িত্ব এখন তিনিই নিয়েছেন। কাঠ মিস্ত্রির কাজ করে অল্প আয় রোজগার হলেও সুমাইয়া ও মিমকে মানুষের মত মানুষ করার চেষ্টা করবেন।
কাউসার বলেন, যদিও তার বিয়ের বয়স হলেও এখন বিয়ে করেননি। আর এ ঘটনার পর বিয়ের প্রশ্নই আসে না। এখন একটাই চিন্তাই সুমাইয়া ও মিমকে বড় করে মানুষের মত মানুষ করা। আর চেষ্টা করবো তারা যেন বাবা-মায়ের শুণ্যতা বোধ না করে।
তিনি জানান, সুমাইয়া ও মিমের মাবাবা মারা যাওয়ার কথা শুনে অনেকেই লালন-পালনের জন্য নিতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের নিতে দিইনি। কারণ তাদের দুজনের দায়িত্ব তিনিই নিয়েছেন। তার একটাই অনুরোধ সুমাইয়া ও মিমের প্রতি কেউই দয়া বা মমতা হলে তাদের সাহায্য করতে পারেন। একেবারেই তাদের নিয়ে গিয়ে লালনপালন করাটা সম্ভব নয়।
পাহাড় ধসে ঘটনায় একই এলাকায় মারা যান দরবেশ আলী। রাঙামাটি সরকারী কলেজের আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন নিহত দরবেশ আলীর মা সালেহা খাতুন (৭০) জানান, পাহাড় ধসে ছেলে দরবেশ আলীকে হারিয়ে এখনো শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এখন দু বছর ও ছয় বছরের নাতি-নাতিনীকে নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে দিন কাটাচ্ছেন। জানেন না কত দিন সেখানে থাকবেন। তিনি আরো জানান, তার ছেলের স্ত্রী রাবেয়া বেগম অনেক দিন আগে স্বামীকে ত্যাগ করে অন্যত্র চলে গেছেন। এখন সে কোথায় আসে জানি না। ঘটনার পর আমাদের কোন খোজও নেয়নি সে।
উল্লেখ্য, গেল ১৩ জুন পাহাড় ধসে রাঙামাটি শহরের ভেদভেদীর যুব উন্নয়ন বোর্ড এলাকা,মুসলিম পাড়া.শিমুলতলী এলাকা,সাপছড়ি,মগবান,বালুখালী এলাকায় এবং জুরাছড়ি,কাপ্তাই,কাউখালী ও বিলাইছড়ি এলাকায় ৫ সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের মৃত্যূ হয়। এতে জেলায় ১৬শ থেকে ১৭ শ ঘরবাড়ি সম্পূর্ন ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। শুধুমাত্র রাঙামাটি শহরের ১৯টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৩হাজার ২শ জন ক্ষতিগ্রস্থ আশ্রয় গ্রহন করেছেন। এর মধ্যে পুরুষ ১ হাজার ৫৬ জন,মহিলা ৯শত ২৪ জন এবং শিশু ১হাজার ২২জন রয়েছেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.