কাপ্তাই উপজেলার ছোট্ট রোহান(৬) পাহাড় ধসের ঘটনার ৩ দিন আগে তার বাবার কাছে বায়না ধরেছিল ঈদের জামা কিনতে সে এবার চট্টগ্রাম শহরে যাবে। বাবা মো সবুজ মিয়া রাজি হয়ে যান। কিন্তু রোহানের আবদার মা রুবিনাকে সাথে নিতে হবে।।বাবা সবুজ মিয়া রাজি হয়ে যান।ছোট্ট রোহানের শেষ আবদার দাদু নুরনবী(৬৫) কে নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে যাবে।
বাবা সবুজ তাতে রাজি হন। কথা ছিল গেল ১৬ শুক্রবার সবাই মিলে চট্টগ্রাম শহরে যাবে। কিন্তু ১৩ জুনের প্রয়লঙ্কারি ঝড়,তুফান এবং পাহাড় ধস সব ধ্বংস করে দিল। মাটিচাপা পড়ে রোহান, তার মা রুবিনা,রোহাদের দাদু নুরনবী সবাই একসাথে মৃত্যুবরণ করেন। সবুজ মিয়া সেদিন কর্মস্থলে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু প্রাণে বাঁচলে ও তার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে।
সবুজের মতো কাপ্তাই এর পাহাড়ধসে মৃত অনেক পরিবারের থেকেও ঈদ হারিয়ে গেছে। একইভাবে কাপ্তাই এ পাহাড় ধসে অাহত ব্যাক্তি এবং ঘরবাড়ি হারোনো লোকজনের থেকে ঈদ অানন্দ হারিয়ে গেছে।
পাহাড় ধসে রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে যেদিকে চোখ যায় শুধু ধ্বংসলীলা। পাহাড় ধস,রাস্তা ধস,ভেঙ্গে পড়েছে সকল যোগাযোগ ব্যবস্হা। গেল ১০ দিনেও সর্বত্র যোগাযোগ ব্যবস্হা স্বাভাবিক হয়নি। কাপ্তাইয়ে ১৮টি তাজা প্রাণ অকালে ঝরে গেছে। আহত হয়েছেন কয়েক শতাধিক। ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সহস্রাধিক। কত টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণ করা এখনও সম্ভব হয়নি।
এই ধ্বংসের মধ্যেও মুসলিম ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদুল ফিতর দৌঁড় গোড়ায় এসে হাজির।অন্যান্য সময় এ রকম ঈদের সময় পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষের কেনাকাটায় ধুম পড়তো। ঈদে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতেন না। তারাও পছন্দের জামা কাপড় কিনে ঈদের দিন পরিচিতজনদের বাসায় ঘুরে বেড়াতেন। তবে এবার সব কিছু স্বপ্ন হয়ে গেছে।।ঈদের আনন্দ পাহাড় থেকে হারিয়ে গেছে।পার্বত্য এলাকার বড় বাজার গুলোতে ঈদের কেনাকাটা নেই।।ব্যবসায়ীরা নতুন কোন পসরা সাজাতে পারছেন না। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভরপুর পাহাড় যেন অন্ধকার ডুবে গেছে।।কারোর মুখে হাসি নেই কোথাও অানন্দ নেই।
কাপ্তাই পাহাড় ধসে মৃত অাবুল হোসেন,রোকসানা বেগম, রমজান অালীসহ অারো অনেক পরিবারের সাথে কথা বলে তারা জানান ঈদের অানন্দ নয় কিভাবে বেঁচে থাকবো কোথায় মাথা গুজাবো সেই চিন্তায় অামরা অস্থির।
কাপ্তাই উপজেলা মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি খোরশেদুল আলম কাদেরী বলেন মৃত পরিবারের জন্য বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যাক্তিগতভাবে কিছু সাহায্য সহোযোগিতা করেছেন।কিন্তু পাহাড় ধসে ঘরবাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া পরিবার গুলোকে ঘর তোলার ব্যাপারে সকলে সহোযোগিতার হাত প্রসারিত করতে হবে। ঈদের দিন মৃত পরিবারদের একটু শান্তনা দিলে ঐ পরিবারের হয়তো কিছুটা সান্তনা পাবে।
কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন, কাপ্তাই নৌ বাহিনী স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্কাউটস্ লিডার এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন এবারের ঈদটা এই অঞ্চলের মানুষের জন্য বেদনাদায়ক। সমাজের সকল বিত্তবান লোকরা এগিয়ে আসলে হয়তোবা তারা এই ঈদে প্রিয়জনদের সাথে একটু ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারবেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.