মানিকছড়ি ও লক্ষ্মীছড়ির বনাঞ্চলের কাঠ পারমিট ছাড়াই অবাধে পাচার হচ্ছে আন্তঃসড়কে অভিযোগ উঠেছে। আর কাঠের এ রমরমা ব্যবসাকে ঘিরে প্রাপ্ত লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে যত্রতত্র নিয়মবর্হিভূতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে অসংখ্য করাতকল! ফলে এসব স’মিলের আড়াঁলে অবৈধ ব্যবসার কারণে প্রতিনিয়ত রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। সরেজমিন ঘুরে এবং বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মানিকছড়ি ও লক্ষ্মীছড়ির বিশাল এলাকার বনাঞ্চলের কাঠ পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে উপজেলার আন্তঃসড়কগুলো। কারণ এলাকার সংঘবদ্ধ একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে আইনের তোয়াক্কা না করে পারমিট ছাড়াই এসব সড়ক দিয়ে অবাধে কাঠ পাচার করছে! আর এ রমরমা ব্যবসাকে ঘিরে যত্রতত্র গড়ে উঠছে অসংখ্য করাতকল। এসব করাতকলের মালিকরা প্রাপ্ত লাইসেন্সে উল্লেখিত ভূমির দাগ ও খতিয়ান মোতাবেক মিল না বসিয়ে অন্য এলাকায় গড়ে তোলেছে স’মিল। কাঠ চেরাই করার নামে দিনে মালিকের বাগান থেকে এসব কাঠ কেটে এনে স্তুপ করা মিলে। এসব স’মিল থেকে গোলকাঠ ও সাইজ করা রদ্দা বোঝাই ট্রাক রাতের অন্ধকারে সমতলে পাচার করা হয়। অবৈধ কাঠ ব্যবসায়ীরা সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে এভাবেই দিনের পর দিন রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। বনবিভাগের সূত্র মতে উপজেলায় লাইসেন্স প্রাপ্ত করাতকল ১১টি, অবৈধ ৩টি এবং নতুন অনুমোদন পেয়েছে ৬টি যা প্রতিস্থাপনের কাজ চলছে। এছাড়া বৈধ স’মিলের মধ্যে অন্তত ৫টি করাতকল শর্ত ভঙ্গ করে স্থাপন করা হয়েছে। যা থেকে যুগাধিককাল ধরে ব্যবসা চালিয়ে আসলেও কর্তৃপক্ষ তা খতিয়ে দেখেনি! সম্প্রতি সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে এসব অনিয়ম বেরিয়ে আসলে নড়েচড়ে বসেন সংশ্লিষ্টরা। তাঁরা বলছেন এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে অচিরেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। অন্যদিকে এসব অবৈধ ব্যবসাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য চাঁদাবাজ ও সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ। উপজেলার কর্তা ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে নির্ধারিত হারে চাঁদা দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এতে বাগানের প্রকৃত মালিকরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া যেসব বৈধ স’মিল রয়েছে বলে দাবী করা হচ্ছে তাতে ও অনিয়মের কমতি নেই। কোন স’মিলেই রেজিস্টার রাখা হয় না। ফলে কাঠের উৎস ও গন্তব্য জানার সুযোগ থাকছে না। যার ফলে কাঠের রমরমা বানিজ্যের প্রসার ঘটছে প্রতিক্ষণে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনৈক ব্যবসায়ী অবৈধ ব্যবসার কথা স্বীকার করে বলেন, বাগান থেকে কাঠ কেটে সরাসরি পাচার করা কঠিন, তাই চেরাই করার নামে স’মিলে এনে জমায়েত করে রাতের অন্ধকারে সমতলে পাচার করা সহজ ! বনবিভাগের মাঠ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, মানিকছড়িতে বৈধ ব্যবসায়ী ৪/৫ হলেও বাস্তবে দু’শতাধিক ব্যক্তি সরাসরি এ ব্যবসায় জড়িত। এখানে রিজার্ভ ফরেস্ট না থাকায় বনবিভাগে জনবল কম। ফলে অবৈধ কাঠ ধরা যাচ্ছে কঠিন। তাহলে ওরা কিভাবে এ ব্যবসা করছে এর জবাব মেলেনি কোথাও। স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ী রাজ্জাক মিয়া বলেন, বৈধ ভাবে ব্যবসা করলে বিপদ বেশি! অবৈধ ব্যবসায়ীরা অহেতুক প্রশাসনকে ভূল তথ্য দিয়ে পারমিট ট্রাকগুলোকে হয়রানী করে। অথচ তারা রাতের আধাঁরে আন্তঃসড়ক দিয়ে বেপরোয়া কাঠ পাচার করছে। এতে সরকার প্রতিনিয়ত রাজস্ব থেকে হচ্ছে বঞ্চিত। বনবিভাগ কিংবা পুলিশ সর্বত্রই অবৈধ ব্যবসায়ীদের দাপটে বৈধ ব্যবসায়ীরা কোনঠাসা। দৃষ্টি আকষর্নে মানিকছড়ির স-মিল সমিতির সভাপতি নিপ্রু মারমা জানান, করাত কলের আইন মেনে চলার চেষ্টা করছি। নিয়মিত রেজিষ্টার রাখার জন্য সবাইকে বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গাড়ীটানা বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা ননী গোপাল দাস অবৈধ ৩টি করাতকলের কথা স্বীকার করে বলেন, ওরা লাইন্সেসের জন্য আবেদন প্রস্তুতি নিচ্ছে। নিয়মিত রেজিস্টার রাখার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া তথ্য গোপন করে স্থাপিত স’মিলের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
–হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.