দেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশের পার্বত্য জনপদের ভৌগলিক ও জন-বৈচিত্র্যের কথা নানা মহলে নানাভাবেই বিধৃত। কখনো কখনো জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে ভুলভাবেও উপস্থাপিত হয়ে আসছে। এসব ভ্রান্তি আর অন্ধকারের মাঝেই লেখক প্রভাংশু ত্রিপুরা’র লেখালেখির স্পৃহা জেগে উঠে। ১৯৬০ সালে ‘বাংলা একাডেমী’ প্রতিষ্ঠিত হবার পর প্রথমবারের মতো পার্বত্য এলাকা থেকে তিনিই সন্মানজনক ‘বাংলা একাডেমী’ পুরস্কারে ভূষিত হন। পুরস্কার অর্জনের পর তাঁর প্রথম প্রতিক্রিয়াটিই ছিলো এরকম ‘ পুরস্কার লেখককে দায়বদ্ধ করে কিন্তু লেখকরা কখনো পুরস্কারের আশায় লিখেন না’।‘গবেষণায় সামগ্রিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ’ বাংলা একাডেমী তাঁকে এই পুরস্কার দিয়েছে। নিভৃতচারী গবেষক ও প্রাবন্ধিক প্রভাংশু ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার মদন কার্বারী পাড়ায় ১৯৫১ সালের ৬ এপ্রিল জন্মগ্রহন করেন। নানা বাস্তবতায় বর্তমানে খাগড়াছড়ি শহরের ‘মায়ুংতৈকু’ পাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা। ইতিহাস, সমাজ ও সংস্কৃতি তাঁর মুখ্য গবেষণার বিষয় হলেও তিনি ছোট গল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা ও গান লিখে সমতলী এবং আদিবাসী বোদ্ধা পাঠক মহলে সমাদৃত হয়েছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে ‘কক বরক আদি শিক্ষা’, ‘ত্রিপুরা জাতি ও সংস্কৃতি’, ‘ত্রিপুরা লোককাহিনী, ‘ত্রিপুরা জাতির মাণিক্য উপাখ্যান’, ‘ত্রিপুরা জাতির মানব সম্পাদ’, ‘ত্রিপুরা জাতির লোক সঙ্গীত’, ‘ত্রিপুরা আর্য়ুবেদ ও বৈদ্যশাস্ত্র’, ‘ত্রিপুরা তন্ত্রসার’, ‘পার্বত্যাঞ্চলের ত্রিপুরা লোকালয় পরিচিতি’, ‘ত্রিপুরা লোকাচার ও গার্হস্থ্যবিধি’, গল্প সংকলন ‘ভাগ্য বিড়ম্বনা’, ধর্মীয় নাটক ‘ঈশারা’, ‘প্রবন্ধ বিচিত্রা’, কক বরক গীতি সংকলন খুম সাংদারি’, ‘খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ইতিহাস’, এবং কয়েক খন্ডের ত্রিপুরা লোককাহিনী অন্যতম। এছাড়া দেশী-বিদেশী অসংখ্য জার্ণাল ও পত্র-পত্রিকায় তাঁর অসংখ্য জ্ঞানগর্ভ লেখা প্রকাশিত হয়ে আসছে। ২০০৩ সালে ‘ত্রিপুরা লোককাহিনী’ বইটি ভারতের কলকাতা ও আগরতলা থেকে একযোগে প্রকাশিত হয়েছিলো। লেখাপড়া করেছেন পানছড়ি বাজার উচ্চ বিদ্যালয়, পানছড়ি হাইস্কুল এবং পরে খাগড়াছড়ি সরকারী কলেজে। তাঁর বাবার নাম ঋষি শ্রীসন্দ মোহন ত্রিপুরা ও মাতার নাম শ্রীমতি কুমুদিনী ত্রিপুরা। তিনি পরিবারের বড়ো সন্তান হিসেবে অল্প বয়সেই কর্মজীবন শুরু হরেন। ১৯৭৫ সালে প্রেয়সী শঙ্খলতা ত্রিপুরা’র সাথে তিনি যুগলবন্দী হন। সুখী নীড়ে তাঁর এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক হয়েছেন। কর্মজীবনে ১৯৭৬ সালে বেতার উপস্থাপক, ১৯৭৯ সালে সিনিয়র প্রযোজক পদে বাংলাদেশ বেতারের চট্টগ্রাম কেন্দ্রে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি একই কর্মস্থলে মূখ্য প্রযোজক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি হিলবিডিটোয়েন্টিফোর ডটকমের খাগড়াছড়ির বিশেষ প্রতিবেদকের নেয়া নতিদীর্ঘ সাক্ষাৎকারটি ছাপা হল।
প্রশ্ন : লেখক হবার অণুপ্রেরণা কোথায় পেলেন আর কেনোই বা লেখক হলেন?
প্রভাংশু ত্রিপুরা : সে অনেক কথা। নিজের চেতনাবোধ থেকে আমি লেখালেখি করি। প্রত্যন্ত গ্রামে বেড়ে উঠেছি। কিন্তু সেই বাড়ীতেই বংশ পরম্পরায় সংগৃহীত দুই সিন্ধুক বই ছিলো। তখনকার সময়ে একটি জুমিয়া (জুমচাষ নির্ভর) পরিবারের সন্তান হিসেবে এটা বিশাল প্রাপ্তি।দুই সিন্ধুকে লুকানো রামায়ণ-মহাভারত-পাঁচালী-পুঁথি ছাড়াও রবীন্দ্র-নজরুলের বই ছিলো।এই বইগুলোর সুঘাণ-ই আমাকে লেখক বানিয়েছে।
প্রশ্ন : আপনার অধিকাংশ লেখালেখিতে ত্রিপুরা ‘জন-জাতি’ অনেক বেশী প্রাধান্য পেয়েছে। এর কারণ কী?
প্রভাংশু ত্রিপুরা : উপমহাদেশে তো বটেই। বিশ্বে ‘ত্রিপুরা জাতি’ একটি ঐতিহ্যমন্ডিত জনগোষ্টি। অথচ এ জাতির ইতিহাস, শাসনকাল, সংস্কৃতি এবং সভ্যতা বিনির্মাণে ত্রিপুরা রাজন্যবর্গের অবদান সর্ম্পকে অনেক ভুল তথ্য যেমন বইপত্রে উঠে এসেছে, তেমনি অনেক ভুল ধারণাও সমাজে প্রচলিত ছিলো। একজন পাঠক ও সচেতন মানুষ হিসেবে, এসব আঁধার-কালিমা তাড়িয়ে আলোকিত পাঠকের কাছে ত্রিপুরাদের অনালোকিত ইতিহাস-সংস্কৃতি উন্মোচনের জন্যই নিজের হয়তো লেখক প্রভাংশু ত্রিপুরাকে পক্ষপাতিত্ব করতে হয়েছে।
প্রশ্ন : এ পর্যন্ত আপনার ২৪টি বই প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বিষয় বৈচিত্র্য, একটু বেশীই যেনো
প্রভাংশু ত্রিপুরা : লেখালেখি জীবনের শুরুতেই গবেষণামুলক কাজের দিকেই আমার মনোযোগ বেশী ছিলো। ফলে ত্রিপুরা জাতির ইতিহাস ও সংস্কৃতি, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ইতিহাস (দুই খন্ড), ত্রিপুরা লোকসংগীত, ত্রিপুরা জাতির মাণিক্য উপাখ্যান, ত্রিপুরা তন্ত্র-মন্ত্রসার, ত্রিপুরা আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র’র মতো কষ্টসাধ্যকর বইগুলো লিখতে পেরেছি। সম-সাময়িক আর কোন সহযোদ্ধা খুঁজে না পাওয়ায় আমাকেই সব বিষয়ের পেছনে দৌড়াতে হয়েছে। হয়তো সে কারণে সব বিষয়ে পাঠকদের জিজ্ঞাসাকে সমানভাবে পূরণ করা সম্ভব হয়নি।
প্রশ্নঃ লেখক না হলে কী হতেন?
প্রভাংশু ত্রিপুরা : এটা বাড়তি একটা নেশা। পারিবারিক কারণে শিল্প-সংস্কৃতি ঘরানায় বেড়ে উঠেছি। লেখক না হলে, এখনকার মতো চাকরি-ই করতাম।
প্রশ্ন : বাংলা একাডেমীর মতো মর্যাদাবান স্বীকৃতি’র আগেও তো বেশ ক’টি পদক, সন্মাননা পেয়েছিলেন।
প্রভাংশু ত্রিপুরা : ২০০০ সালে আগরতলা বইমেলায় ত্রিপুরা রাজ্য সরকার কর্তৃক সন্মাননা পেয়েছি। ২০১১ সালের চট্টগ্রামের অবসর সাংস্কৃতিক গোষ্ঠি কর্তৃক ‘অবসর সাহিত্য পুরষ্কার, ২০১১ সালের ত্রিপুরা ষ্টুডেন্টস্ ফোরাম (টিএসএফ) প্রদত্ত সাহিত্য পদক, ২০১০ সালের ঢাকার লেখা প্রকাশন কর্তৃক চট্টগ্রাম বিভাগের শ্রেষ্ট্র গল্পকার পদকে ভূষিত হই।
প্রশ্ন : ‘বাংলা একাডেমী’ পুরস্কার অর্জনের পর এখন আপনার অনুভুতি?
প্রভাংশু ত্রিপুরা : যেহেতু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি, অবশ্যই তা গৌরবের এবং আনন্দের। পার্বত্য এলাকা থেকে প্রথম লেখক হিসেবে নির্বাচিত হবার পরও বলবো ‘এটি আমার কল্পনারও বাইরেও ছিলো’।এ মুল্যায়নটি নিঃসন্দেহে নিরপেক্ষ এবং সঠিক ছিলো। তাঁদের (বাংলা একাডেমী) দৃষ্টি যে পাহাড়-সমতলে বিস্তৃত, এটি তারই স্বাক্ষ্য বহন করে।
প্রশ্ন : কর্মজীবনের প্রায় চারদশক-ই চট্টগ্রামে কাটাচ্ছেন। যদি বলতেন, সেই নগরের নান্দনিক বন্ধুদের কথা।
প্রভাংশু ত্রিপুরা : বলাকা প্রকাশনকে ধন্যবাদ দিতে হয় কারণ তাঁরাই আমার মতো পার্বত্য এলাকার লেখকের বই প্রকাশ করে, বোদ্ধামহলে আমাকে জানার এবং বোঝার সুযোগ করে দিয়েছে। কারো নাম বলে কাউকে আলাদা করার ইচ্ছে না থাকলেও লেখক-সাংবাদিক জামালউদ্দিন, আদিবাসী গবেষক-কবি হাফিজ রশিদ খান এবং চট্টগ্রাম বেতারের আঞ্চলিক পরিচালক এস এম আবুল হোসেন ( খোকন কায়সার) আমাকে সাহচর্য্য আর পৃষ্ঠপোষকতায় ঋদ্ধ করেছেন।
প্রশ্ন : গবেষণার মতো দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে এলেন। তুলে আনলেন, ইতিহাস আর শেকড়ের কথা। দেশ ছাপিয়ে সীমানাও ছাড়তে হয়েছে বেশ ক’বার। বৈষয়িক সামর্থ্য কীভাবে উর্দ্ধে গেলেন?
প্রভাংশু ত্রিপুরা : এই গবেষণার কাজে আমাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। ত্রিপুরা, আগরতলা, কুমিল্লাসহ দেশের অনেক ঐতিহাসিক জনপদে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে। অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টির কারণে পয়সা খরচ হলেও সৃজনশীলতার টান আমাকে দমাতে পারেনি। আমি আর্টস’র ছাত্র ছিলাম। ছাত্র হিসেবে ভালো ছিলাম। দূর্গম পথ পাড়ি দিয়েই, লেখাপড়ার জাহাজ টেনেছি। তাই চেতনার সমুদ্রে সওয়ার হয়েছি বলেই আজকের এই আমি।
প্রশ্ন : পাহাড়ের অনেক মানুষের উদ্বাস্তু জীবন, রাজনীতি আর অধিকারের প্রশ্নটি
প্রভাংশু ত্রিপুরা : দেশের স্বাধীনতা উত্তর ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘পার্বত্য এলাকা’ আসলেই অশান্ত এবং অস্থির ছিলো। এই অস্বস্তিকর সময়ে আমরা (পাহাড়ীরা) সত্যিই এক অমানবিকতার অন্ধকারে ডুবে ছিলাম। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির’র মাধ্যমে কিছুটা স্বস্তি এবং আস্থা ফিরে এসেছে। তবে রাষ্ট্র এবং সরকারের অব্যাহত সদিচ্ছায়, পাহাড়ে প্রত্যাশিত শান্তি-স্বস্তি ও আস্থার জায়গা স্থায়ী হবে বলেই আমি আশাবাদী।
প্রশ্ন : পার্বত্যাঞ্চলের সাহিত্য ও সংস্কৃতি’র বর্তমান ধারা প্রসঙ্গে শুনতে চাই?
প্রভাংশু ত্রিপুরা : সাহিত্য এমন একটা বিষয় যা অতীত-বর্তমান ও ভবিষ্যতের মাঝে সেতু তৈরী করে। যে জাতির সাহিত্য-সংস্কৃতি ও ইতিহাস নেই, সে জাতির অগ্রগতি বিপন্ন বা বাধাগ্রস্ত হয়।
পাহাড়িয়া জনপদে সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চা সীমিত। রাজনৈতিক ক্রান্তিকালেই সাহিত্য সৃষ্টি হবার সুযোগ বেশী থাকে। পাহাড়ের অধিকারহীনতার সময়ে অনেক বেশী গল্প-উপন্যাস-কবিতা ও গবেষণা জন্ম হতে পারতো। কিন্তু তা হয়নি বলে এখানে প্রকাশনা শিল্প’র বিকাশ ঘটেনি।তাছাড়া সমতলী আর পাহাড়ীদের ভাষা-সংস্কৃতির বোঝাপড়ার ঘাটতি পাহাড়ীদের সাহিত্যর্চ্চায় পিছিয়ে দিয়েছে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, বায়ান্নো কিংবা নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, অনেক সাহিত্যের জন্ম দিয়েছে। কিন্তু পাহাড়ে তা হলোনা কেনো?
প্রভাংশু ত্রিপুরা : একবারে হয়নি তা, বলবোনা। তবে অনেক সময় তা মানের দিক থেকে সমতলের সমকক্ষ না হওয়ার অজুহাতে উপেক্ষিতও হয়েছে। সমতল-পাহাড়ের রাজনৈতিক মতাদর্শের ঘাঁটছড়া জোরালো হয়েছে। কিন্তু অধিকার নিয়ে কয়েক দশক লড়াই হলেও রচিত হয়নি ‘দ্রোহের গান ও কবিতা’।
প্রশ্ন : ২৪ গ্রন্থের পরে কোন দিকে যাচ্ছে, আপনার সাহিত্যেও তরী”
প্রভাংশু ত্রিপুরা : আমি এখন লোক সাহিত্যের দিকে এগুচ্ছি। পাহাড়ের প্রতিটি অঞ্চল, জনপদ, নদী-খাল, ব্যক্তিত্ব, হারিয়ে যাওয়া সব বিষয়ই আমার নতুন কাজে প্রাণ দেবে।‘পার্বত্য লোক-লোকালয়’, আমার নতুন বই। আগামী বছর প্রকাশিত হবে। এর পরই রাঙামাটি এবং বান্দরবান জেলার ইতিহাস নিয়ে পথ পাড়ি দেবো।সমতলের ত্রিপুরাদের ইতিহাস অবস্থান নিয়ে পৃথক চিন্তায় মনন বিকাশের কাজেও ভবিষ্যত মনোযোগের পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রশ্ন : লেখক প্রভাংশু ত্রিপুরাকে সমতলের মানুষ, অনেক বেশী বোঝেন। কিন্তু পাহাড়ে তিনি কিছুটা অজানাই থেকে গেলেন। এটি কেনো?
প্রভাংশু ত্রিপুরা : আমি স্বভাবজাত নিভৃতচারী। ঘরমুখো-নীরব পাঠক। নিজের মানুষ (আত্মীয়), আমাকে একান্তই নিজের আত্মীয় মনে করেন। আমিও তাই থাকতে চেয়েছি। তবে ইদানীং নতুন প্রজন্ম আমাকে লেখক অভিধায় কিছুটা আলাদাভাবে বোঝার চেষ্টা করছে।
প্রশ্ন : বেতারে সংযুক্ত থাকার সুবাদে আপনি পার্বত্য এলাকার সংস্কৃতির বিকাশেও ভূমিকা রেখেছেন। নিজেও অনেক জনপ্রিয় গানের গীতিকার।
প্রভাংশু ত্রিপুরা : আমি গান লিখলেও বেতারের অর্ন্তভুক্ত নই। কিন্তু অনেক জনপ্রিয় গানের গীতিকার যেমন প্রয়াত সুরেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, মহেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, সুগত চাকমা, শান্তিময় চাকমা ও অমর শান্তি চাকমা, আমার সম-সাময়িক।বেতারে চাকমাদের জুমনৃত্য, ত্রিপুরাদের কাটারক (মাঙ্গলিক নৃত্য), মারমাদের প্রদীপ নৃত্য’র আধুনিক মঞ্চায়ন’র মধ্য দিয়েই পার্বত্য এলাকার তৃণমুল সংস্কৃতিতে নতুন গতি সঞ্চার হয়েছে।
প্রশ্ন : ব্যক্তি অথবা লেখক হিসেবে আপনার তৃপ্তি-অতৃপ্তি’র প্রসঙ্গটি একটু বলুন।
প্রভাংশু ত্রিপুরা: লেখকদের সন্তুষ্টি আর অসন্তুষ্টির লড়াই চলমান। পুরস্কার বা সন্মানের আশায় কখনো লিখিনি। কোন লেখক-ই তা আশা করনে না। তবু ব্যক্তি এবং লেখক প্রভাংশু ত্রিপুরাকে ‘বাংলা একাডেমী’ পুরস্কার বু উচাটন করেছে। তাছাড়া পারিবারিক জীবনে অপরিমেয় সুখ আর শঙ্খলতা ত্রিপুরা’র সাহচর্য্য আমাকে লেখক হবার পথে সাহস জুগিয়ে চলেছে, নিরন্তর।
প্রশ্ন : দুঃসহ স্মৃতি, যা ভুলতে কষ্ট হয়
প্রভাংশু ত্রিপুরা : ১৯৮১ সালে কোন এক বর্ষামুখর রাতে জাতিগত সংঘাতের শিকার হয়েছিলো, আমাদের ‘মত্ন কার্বারী পাড়া’র সেই বাড়ী। ঘরে আগুন দেবে, এই শংকায় সব মুল্যবান বাদ্যযন্ত্র, বইগুলো ভয়ে বাঁশঝাড়ে লুকিয়ে রেখেছিলো মা-বাবারা। ক’দিন পরেই দেখা গেলো আমাদেও পূর্ব-পুরুষের সযত্নে লালিত সেসব মুল্যবান আকড়গুলো উইপোকা খেয়ে ফেলেছে।আর এই পরিণতিই আমাকে বঞ্চিত করেছে, অনেক জানার উপাত্ত ও জ্ঞানের সীমা থেকে। এই দুঃসহ স্মৃতি জীবনেও ভুলতে পারবো না।
প্রশ্ন : এই জীবনের আশাবাদ যদি থাকে
প্রভাংশু ত্রিপুরা : লেখক মাত্র আশাবাদী। আর সেই আশাবাদ পার্বত্যাঞ্চলের সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়েই। এই জীবনের আশাবাদ পূরণ হবে যদি, দেশের প্রতিটি আদিবাসী শিশু নিজেদের মাতৃভাষায় লেখাপড়ার সুযোগ পায়।বর্তমান সরকারের প্রগতিশীল মানসিকতার কারণে সেই মহৎ উদ্যোগটি বাস্তবায়নের পথে। আর এটি শুরু হলেই পাহাড়-সমতলের আদিবাসী মানসে জোয়ার বইবে নিজেদের সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায়।
–হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.