পাহাড়ী সমাজে বিবাহের নিবন্ধনসহ সনদ প্রদানের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে চাকমা সার্কেল

Published: 27 Dec 2016   Tuesday   

পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ী সমাজে প্রথাগত বিবাহ বন্ধনের ক্ষেত্রে বিবাহের নিবন্ধনসহ সনদ চালুর জন্য প্রস্তাবনা করেছেন ঐতিহ্যবাহী প্রথাগত ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ। পাশাপাশি নেতৃবন্দ পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী সম্প্রদায়ের যে সমস্ত ঐতিহ্যবাহী প্রথাগত রীতিনীতি ও আইন রয়েছে সেগুলো দালিলিক আকারে রুপ দেওয়ার জন্যও গুরুত্বারোপ করেছেন।


মঙ্গলবার রাঙামাটিতে চাকমা রাজ কার্যালয়ে আয়োজিত প্রথাগত বিচার ব্যবস্থায় ডকুমেন্টশনের গুরুত্ব শীর্ষক পরামর্শমূলক কর্মশালায় কর্মশালায় অংশগ্রহনকারী নেতৃবৃন্দ এসব প্রস্তাবনা করেন।

 

কর্মশালায় নেতৃবৃন্দ বলেন,প্রচলিত প্রথাগত আইন ও রীতিনীতি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ীরা নিজ নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে সামাজিকভাবে বিবাহ বন্ধন সম্পন্ন করে থাকে। এ জন্য কোনো প্রকার প্রমাণিত দালিলিক নিবন্ধন বা তথ্য সংরক্ষণের প্রয়োজন হয় না এবং বাংলাদেশ সরকারের স্বীকৃত আইনেরও বৈধতা রয়েছে। তবে তথ্য সংরক্ষণসহ যে কোনো প্রয়োজনীয় নিবন্ধন হওয়া দরকার। তাই যার যার প্রয়োজনে যাতে বিবাহ সনদ সংগ্রহ করতে পারে সেজন্য প্রয়োজন নির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনার।


চাকমা সার্কেলের উদ্যোগে ও বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা গ্রীনহীলের সহযোগিতায় আয়োজিত কর্মশালার প্রধান অতিথি ছিলেন চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়। গ্রীনহীলের উপ-নির্বাহী পরিচালক যতন কুমার দেওয়ানের সভাপতিত্বে অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্যে রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান, বাংলাদেশ মানবধিকার কমিশনের সদস্য বাঞ্চিতা চাকমা, শিক্ষাবিদ মংসানু চৌধুরী, আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য অঞ্চল শাখার সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, সিএইচটি হেড্যম্যান নেটওয়ার্রে সহ-সভাপতি শক্তিপদ ত্রিপুরা, সিএইচটি হেড্যম্যান নেটওয়ার্রে সাধারন সম্পাদক শান্তি বিজয় চাকমা, সাবেক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অঞ্জুলিকা খীসা, বিশিষ্ট আইনজীবী জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা, এডভোকেট দীননাথ তঞ্চঙ্গ্যা, এডভোকেট ভবতোষ দেওয়ান প্রমুখ।


অনুষ্ঠানে কি নোট উপস্থাপনা করেন গ্রীনহীলের শিখা প্রকল্পের সমন্বয়কারী লিভিং ষ্টোন চাকমা। দিন ব্যাপী কর্মশালায় চাকমা সার্কেলের হেডম্যান,কারবারীসহ আইনজীবি ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।


প্রধান অতিথির বক্তব্যে চাকমা রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, বিবাহ সংক্রান্ত বিষয়ে চাকমা সমাজের ক্ষেত্রে কিছু কিছু প্রথাগত সিদ্ধ না এমন প্রচলন চলে এসেছে। যা প্রথাগত রীতিনীতিগুলো অমান্য করছে বিশেষ করে তথাকথিত আধুনিকতার নামে এবং শিক্ষিত সম্ভ্রান্তের নামে। এতে চাকমা জাতি সত্বাদের উপর আঘাত হানছে। তাদের প্রতিহত করতে হবে। তিনি আদিবাসী সম্প্রদায়ের মৌলিক প্রথাগত রীতিনীতি মেনে চলতে ঐক্য ও একতা প্রয়োজন বলে গুরুত্বারোপ করেন।


কর্মশালায় দালিলিক প্রয়োজনীয়তায় রেকর্ডভূক্ত রাখতে সার্কেল চিফসহ সংশ্লিষ্ট মৌজা হেডম্যান ও কারবারিদেরকে নিজেদের উদ্যোগে নিজ নিজ এলাকার বিবাহ নিবন্ধন সংরক্ষণের জন্য প্রস্তাব দেন চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়।


কর্মশালায় উল্লেখ করা হয়, সম্পাদিত বিবাহের নিবন্ধনসহ সঠিক তথ্য সংরক্ষণে রাখার সিদ্ধান্ত হয়। সংশ্লিষ্ট মৌজা হেডম্যান ও কারবারিরা নিজেদের উদ্যোগে তা ব্যবস্থাপনা করবেন এবং সেগুলো প্রতিবেদন আকারে পাঠাবেন সার্কেল চিফের কাছে। সেই তথ্য অনুযায়ী প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিবাহ সনদ দেবেন সার্কেল চিফ, সংশ্লিষ্ট মৌজা হেডম্যান ও কারবারি। তবে বিবাহ সনদ নেয়ার বাধ্যতামূলক কোনো শর্ত থাকবে না। কেবল যার যার প্রযোজ্য ক্ষেত্রে যে কেউ এ সনদ সংগ্রহ করতে পারবেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা.সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত