স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি বরকল উপজেলার দুই মুক্তিযোদ্ধা

Published: 07 Dec 2016   Wednesday   

স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও রাঙামাটির বরকলের দুই মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি মিলেনি। আজও পর্ষন্ত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তাদের নাম অর্ন্তভূক্ত হয়নি। তার হলেন বরকল উপজেলা বাসিন্দা রায়মোহন চাকমা ও মানিক মজুমদার। 

 

এই দুই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের অভিযোগ,বরকল উপজেলার দুর্গম অঞ্চলে বসবাসের কারণে যোগাযোগের দূর্গমতা এবং লেখাপড়া জানা না থাকায় তাদের দেখভাল করতে কিংবা বুদ্ধি পরামর্শ দেয়ার কেউ নেই। তাই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় দুজনের নাম অর্ন্তভূক্ত হয়নি এতদিন।


বরকলের মুক্তিযোদ্ধা রায়মোহন চাকমা জানান, ১৯৭১ সালে মাতৃভুমি রক্ষার টানে নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে স্বাধীনতার সংগ্রামে ঝাপিঁয়ে পড়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভারতের দেমাগ্রি হয়ে ভারতের মিত্র বাহিনীর সাথে বরকল উপজেলার ৩নং আইমাছড়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী আন্দার মানিক এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ কনে। মুক্তি বাহিনী বরকল উপজেলার প্রথমে সাইচাল এলাকার পাক বাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণ করে। এতে পাকবাহিনীর অনেক সৈন্য হতাহত হয় এবং বাকিরা পালিয়ে যায়। পরে ই ক্যাম্প আমাদের দখলে আছে মুক্তি বাহিনীর। কিন্তু সেই যুদ্ধে রাঙ্গুঁনিয়ার বাসিন্দা মোঃ ইউছুফ নামে একজন সহযোদ্ধা শহীদ হন।


তিনি আরো জানান, এভাবে ১৫৫নং হেডভরিয়া মৌজার বাংলা ছড়া নামক স্থানে পাকবাহিনীর সাথে তীব্র লড়াইয়ে পাকবাহিনীরা বেশী হতাহত হলে পিছু হঠটে বাধ্য হয়। এ যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর ৩জন শহীদ হন। এভাবে আমাদের আক্রমণ যখন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে লাগল তখন জুরাইছড়ি উপজেলার পানছড়ি,বড়াছড়ি ও যক্ষা বাজার এলাকায় পাকবাহিনীর ক্যাম্প দখল করার সময় পাক বাহিনীর সাথে মরণপণ যুদ্ধ হয়।

 

সেই যুদ্ধে পাকবাহিনীরা যেমনি হতাহত হয়েছিল তেমনি আমাদের মিত্রবাহিনীর সৈন্যও শহীদ হন। এভাবে পাকবাহিনী সকলেই পরাস্ত হলে একের পর এক এলাকা দখল করার পর কাপ্তাই উপজেলাও আমাদের দখলে আসে। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ শেষে দেশ স্বাধীন হলে বাড়িতে ফিরে আসি। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেলাম না। যুদ্ধের সেই দিনগুলো এখনি কেবল স্মৃতি হিসাবে বুকে আকঁড়ে ধরে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়ার আশায় আছে মুক্তিযোদ্ধা রায়মোহন চাকমা।


যুদ্ধের দিনগুলোতে তার সহযোদ্ধা উখিয়া উপজেলার ওয়ালা পালং গ্রামের এমআই দুলাল কান্তি দে,লোহাগাড়া উপজেলার কেপিএমএর ইঞ্জিনিয়ার মোঃ ছিদ্দিক বর্তমানে ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায় থাকেন।


সাতকানিয়া উপজেলার মোঃ সরোয়ার কামালসহ সহযোদ্ধা আরো অনেকেই মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেলেও দেশ স্বাধীনের ৪৫ বছরে ও স্বীকৃতি মেলেনি। জীবদ্দশায় মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাবে কিনা জানেনা মুক্তিযোদ্ধা রায়মোহন চাকমা।


মুক্তিযোদ্ধা মানিক মজুমদারের কন্যা দীপালী মজুমদার আক্ষেপ করে জানান, তার পিতা দেশের জন্য যুদ্ধ করে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেলেন না। স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও এ অসহায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কেউ খোঁজ খবর নেয়নি। মানিক মজুমদার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়ার আশায় আশায় অবশেষে ১৯৯০ সালে বার্ধক্য জনিত কারণে মারা গেছেন। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি মিলবে কিনা জানেনা মানিক মজুমদারের পরিবার।


মুক্তিযোদ্ধা দুলাল কান্তি দে-এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,রায়মোহন চাকমা ও মানিক মজুমদারসহ এক সাথে ছিলাম ও দেশের জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। কিন্তু দেশ স্বাধীনের এতো বছরেও তাদের নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অর্ন্তভূক্ত হয়নি। মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পায়নি তা অত্যান্ত দুঃখ জনক। তাদের নাম জাতীয় মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া দরকার।


উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হেমায়েত আলম জানান, যুদ্ধকালীন সময়ে আমি বরকল উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা না হলেও উপজেলা কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব নেয়ার পর এলাকার মানুষদের কাছ থেকে খবর নিয়ে জেনেছি রায়মোহন চাকমা ও মানিক মজুমদার প্রকৃত মৃক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। সেই কারণে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তাদের নাম অর্ন্তভূক্ত করা প্রয়োজন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত