কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির ৫৪ বছরেও রাঙামাটি সদর উপজেলার বালুখালী, মগবান ও বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের ৩৫ হাজার মানুষ আজো বিদ্যূৎ সুবিধা পায়নি। অথচ রাঙামাটি শহরের খুব কাছের এ তিনটি ইউনিয়নের অবস্থান হলেও সেগুলো অন্ধকারে নিমজ্জিত। ফলে বিদ্যূৎ সুবিধা বঞ্চিত ইউনিয়নবাসীর দিন দিন ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জানা গেছে, ১৯৬০ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় কর্ণফুলী নদীর উপর বাধ দিয়ে তৈরী করে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। হ্রদ সৃষ্টির ফলে প্রায় ২৫৬ বর্গমাইল এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। ফলে সেই সময় ৫৪হাজার একর জমি ও এক লাখের লোকজন উবাস্তুতে পরিনত হওয়াসহ ঐতিহাসিক চাকমা রাজার রাজ বাড়ী পানির নিচে তলিয়ে যায়। তৎকালীন সরকার ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপুরণসহ বিনামূল্য বিদ্যূৎ সরবরাহ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরনের দূরের কথা রাঙামাটি শহরের পাশে মগবান, বালুখালী ও বন্দুক ভাঙ্গা ইউনিয়নবাসী কাংখিত সেই বিদ্যূৎ সুবিধা পাননি। ফলে শহরের পাশে হয়েও বিদ্যূৎ সুবিধা না পৌঁছায় এ তিনটি ইউনিয়ন পশ্চাৎপদ ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। সূত্র আরও জানায়, কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির পর উদ্ধাস্তুদের মধ্যে থেকে কিছু লোকজন বালুখালী, মগবান ও বন্দুক ইউনিয়নে বসতি গড়ে তোলেন। বর্তমানে এই তিনটি ইউনিয়নে লোকসংখ্যা রয়েছেন প্রায় ৩৫হাজার। কিন্তু হ্রদ সৃষ্টির ৫৪ বছর পরও এই ইউনিয়নে বিদ্যূৎ সুবিধাসহ অন্যান্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বরাবরই বঞ্চিত রয়েছেন। অথচ বালুখালী ও বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়ন থেকে দুরত্ব হচ্ছে ৭ থেকে ৮কিলোমিটার এবং বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়ন থেকে মাত্র এক থেকে দেড় কিলোমিটার দুরত্বে অবস্থিত কাপ্তাই জল বিদ্যূৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি। তিনটি ইউনিয়ন থেকে ডাকালে দেখা মিলে রাঙামাটি শহরের বিদ্যূতের আলোর ঝিলিক। কিন্তু এ তিনটি ইউনিয়নবাসী বাতির নিচে অন্ধকারে নিমজ্জিত রয়েছেন। ইউনিয়নবাসীকে হারিকেন আর কুপির বাঁতি জ্বালিয়ে রাত যাপন করতে হচ্ছে। ফলে তিনটি ইউনিয়নে বিদ্যূৎ না থাকায় একটি দিকে পশ্চাৎপদ অবস্থায় রয়েছে। অন্যদিকে এখনো লাগেনি কোন আধুনিকতার ছোঁয়া। ৬নং বালুখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিজয় গিরি চাকমা জানান,১৯৬০ সালে কাপ্তাইয়ে বাধ দেয়ার সময় বিনামূল্য বিদ্যূৎ দেয়া হবে বলে বলা হয়েছিল। বর্তমানে আমার বয়স ৪৭ বছর। এই ৪৭ বৎসর বয়সেও এখনো বালুখালীতে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছায়নি। এই হ্রদ থেকে উৎপাদিত বিদ্যূৎ সমতলসহ অন্যান্য স্থানের লোকজন বিদ্যূতের সুবিধা সরাসরি ভোগ করছেন। অথচ কাপ্তাই বাধের পাশেই বাসবাস করেও বিদ্যূতের সরবরাহ থেকে বঞ্চিত রয়েছি। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। রাঙামাটির সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও মগবান ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান অরুন কান্তি চাকমা ক্ষোভের সাথে জানান, মগবানসহ তিনটি ইউনিয়নবাসীর বিদ্যুতের দাবিতে অনেকবার সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ,মন্ত্রীর কাছে বহুবার দরখাস্তও দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোন কাজই হয়নি। আসলে এ তিন ইউনিয়নবাসী বৈষম্যর শিকার। তা না হলে যুগ যুগ ধরে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় বসবাস করতে হচ্ছে কেন? বিদ্যুৎ সুবিধা না পৌঁছার কারণে ইউনিয়নবাসীদের মাঝে দিন দিন ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে কোন সময় জনমনের এ ক্ষোভের বিস্ফোরন ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি প্রধানমন্ত্রী ও বিদ্যুৎমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে তিন ইউয়িনে বিদ্যূৎ সুধিবা পৌঁছে দেয়ার দাবি জানান। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পার্বত্য চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী অতিক্রম চাকমা জানান, ২০০৯-১০ সালের অর্থ বছর থেকে ২০০১৫ সাল পর্ষন্ত ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকার ব্যয়ে তিন পার্বত্য জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় যেখানে বিদ্যুৎ নেই সেখানে বিদ্যূৎ সুবিধা পৌঁছে দেয়ার লক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহন করা হয়। তবে এ প্রকল্পের মধ্যে এই তিন ইউনিয়ন অর্ন্তভূক্ত ছিল না।
–হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.