জনসাধারনের মতামতকে উপেক্ষা করে এবং দীর্ঘ ২২ বছরেও পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন না দিয়ে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের(সংশোধন) বিল জাতীয় সংসদে পাস করায় পার্বত্যবাসীর তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের মতে, নির্বাচন না দিয়ে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করে পার্বত্যবাসীর প্রকৃত কোন উপকারে আসবে না। উল্লেখ্য, আর্ন্তবর্তীকালীন তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদ বিল সংশোধনের লক্ষে গত ১ জুলাই জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। সর্বশেষ গেল রোববার ১জন চেয়ারম্যান ও ১৪ জন সদস্য করে আর্ন্তবর্তীকালীন পরিষদ গঠনে বিধান রেখে তিনটি বিল সংশোধিত আকারে জাতীয় সংসদে পাস হয়। বিলগুলো হল রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পষিদ(সংশোধন) বিল-২০১৪, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ(সংশোধন) বিল ২০১৪ ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ(সংশোধন) বিল-২০১৪। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ের শাসন পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা, গতিশীলতা ও নিশ্চিৎ করার লক্ষে ১৯৮৯ সালে এরশাদ শাসনামলে ১জন চেয়ারম্যানসহ ৩১ কার্য-নির্বাহী সদস্য করে তিন পার্বত্য জেলায় স্থানীয় সরকার পরিষদ গঠন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে আইন সংশোধন করে চেয়ারম্যানসহ ৩৪ সদস্যের পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠন করা হয়। এ পরিষদে চেয়ারম্যান হিসেবে একজন পাহাড়ি ও ২০ জন পাহাড়ি সদস্য নির্বাচিন হবেন বিভিন্ন সম্প্রদায় থেকে। এছাড়া ১০ জন বাঙালী, সংরক্ষিত হিসেবে ২ জন পাহাড়ি নারী ও ১ জন বাঙালী নারী সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৮ সালে। এরপর দীর্ঘ ২২ বছর পার হলেও তিনটি জেলা পরিষদের মধ্যে কোনটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। পরবর্তীতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সব শ্রেণী-পেশা ও গোষ্ঠীর প্রতিনিধির অংশগ্রহন নিশ্চিৎ করে জেলা পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনার দাবিতে বান্দরবানের পাহাড়ী প্রতিনিধি না অং খুমী বাদী হয়ে উচ্চ আদালতে এক রিট আবেদন পেশ করেছেন। এদিকে, জনসাধারনের মতামতকে উপেক্ষা ও দীর্ঘ ২২ বছরেও পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন না দিয়ে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের(সংশোধন) বিল জাতীয় সংসদে পাস করায় পার্বত্যবাসীর তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বিশিষ্ট নারী নেত্রী এ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা বলেন, আইন সংশোধন করে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্যদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে কোন উপকারে আসবে না। যতদিন পর্যন্ত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির পরিষদ আসবে না। ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের(ইউপিডিফ) মূখপাত্র মাইকেল চাকমা তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ বর্তমানে দুর্নীতি আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে উল্লেখ করে বলেন, সরকার তার এজেন্টা বাস্তবায়নের জন্য এ তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। এ পরিষদের মাধ্যমে কিছু সুবিধাবাদী প্রতিক্রিয়াশীল দালাল গোষ্ঠী সৃষ্টি ও দলীয় লোকজন পুর্ণবাসিত হয়েছে। তাই তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের যতদিন পর্ষন্ত সরকারের প্রভাবমুক্ত ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না ততদিন পর্ষন্ত এ জেলা পরিষদ জনকল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠবে না। জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা বলেন,জনসংহতি সমিতিও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের মতামতকে উপেক্ষা করে সরকার এক তরফাভাবে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের সংশোধনী এনেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক। কারণ সরকার যে জায়গায় চুক্তি বাস্তবায়ন করার কথা সেই জায়গায় সরকার চুক্তি লংঘন করে চুক্তিবিরোধী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এতে করে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা রাজনৈতিক ও শান্তি স্থাপনে কোন অনুকুল ভুমিকা রাখবে না। সরকার নিজেই এসব কান্ডের মধ্য দিয়ে পার্বত্য পরিস্থিতিকে আবারও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিক ধাবিত করছে। জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক মোঃ শাহ আলম বলেন, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের যতক্ষন পর্ষন্ত জনগনের ভোটের দ্বারা প্রকৃত নির্বাচন হবে না ততক্ষন পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানগুলো পার্বত্যবাসীর কোন উপকারে আসবে না। জেলা পরিষদের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা হচ্ছে দলীয় ১৫ জনকে মোটাতাজাকরণ করা। জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর জেলা পরিষদের ১৫ সদস্য করায় সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ১৫ সদস্য করায় জেলা পরিষদসমুহের কাজের গতি বাড়লো। পাশাপাশি এখানকার প্রতিটি সম্প্রদায় থেকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাবে এবং এলাকায় আরও উন্নয়ন ঘটবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি ও রাঙামাটির স্থানীয় সরকার পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গৌতম দেওয়ান পার্বত্য চুক্তির শর্ত লংঘন করে সরকার তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের সংশোধনী বিল পাস করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে আন্তরিক না বলে তা এই আইন পাসের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে। কারণ দীর্ঘ ২২ বছরেও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না করে সরকার আবারও দলীয় মনোনীত লোকদের পরিষদকে কার্যকর চাইছে। এটা থেকে বুঝা যায় চুক্তি বাস্তবাযন না করার একটা পদক্ষেপ। তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চুক্তির মধ্যে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের কোন আইন বা পদক্ষেপ নিতে হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদের সাথে আলোচনা করতে হবে। কিন্তু সরকার প্রকার প্রকার মতামত বা আলোচনা করেনি। এতে সরকার পার্বত্য চুক্তির শর্ত লংঘন করেছে।
–হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.