বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুদিন ব্যাপী রাঙামাটির রাজ বন বিহারে ৪৩ তম দানোত্তম কঠিন চীবর দান শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে এই ধর্মীয় অনুষ্ঠান সফল করতে উপাসক-উপাসিকা কার্যনির্বাহী পরিষদ যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
উল্লেখ্য, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ভগবান গৌতম বুদ্ধের জীবব্দশায় মহাপূর্নবতী বিশাখা কর্তৃক প্রবর্তিত ২৪ ঘন্টার মধ্যে সূতা কাটা শুরু করে কাপড় বয়ন, সেলাই ও রং করাসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয়ে থাকে বলে একে কঠিন চীবর দান হিসেবে অভিহিত করা হয়। এ পদ্ধতিতে দান করলে কায়িক-বাচনিক এবং মানসিক পরিশ্রম অধিকতর ফলদায়ক হয় বলে বৌদ্ধ শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে। তাই প্রবর্তিত ঐতিহাসিক নিয়ম অনুসারে এখানে মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ধর্মপ্রাণ নারী-পুরুষ চরকায় তূলা থেকে সূতা বের করে বেইনের (কোমড় তাঁত) মাধ্যমে সেই সূতা দিয়ে কাপড় বুনন ও রং করে চীবর হিসেবে দান করে থাকেন। এ জন্য এ দানকে কঠিন চীবর দান হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। ১৯৭৭ সাল থেকে রাঙামাটির রাজ বন বিহার এ অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়ে আসছে।
রাজ বনবিহার উপাসক-উপাসিকা কার্যনির্বাহী পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, দু’দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিতব্য রাজ বন বিহারের ৪৩তম দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে আগামী শুক্রবার দুপুর ১টায় রাজ বন বিহারের পাশে অবস্থিত বেইন ঘরে বেইন কর্মীদের পঞ্চশীল গ্রহন। বিকাল আড়াইটার দিকে পঞ্চশীল গ্রহনের মাধ্যমে কঠিন চীবর তৈরীর বেইন ঘর উদ্ধোধন করবেন চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়। চরকায় সূতা সূতা কাটা উদ্ধোধন করবেন রানী ইয়েন ইয়েন। এর সূতা লাঙানো, সূতা সিদ্ধ, রং করণসহ যাবতীয় কাজ শুক্রবার সকাল ৬টা পর্ষন্ত করা হবে।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার সকালের দিকে বুদ্ধ পতাকা উত্তোলন, ভিক্ষু সংঘের প্রাতঃরাশ, পঞ্চশীল গ্রহন, বুদ্ধ মূতিৃ দান, অষ্টপরিস্কার দান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। দুপুরের দিকে রাজ বন বিহার প্রাঙ্গনে আয়োজিত হবে কঠিন চীবর উৎসর্গ ও ভিক্ষু সংঘের উদ্দেশ্য দান, বিশ্ব শান্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনা ও ভিক্ষু সংঘের ধর্ম দেশনা। ধর্ম দেশনা দেবেন রাজ বনবিহার আবাসিক ভিক্ষু সংঘের প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবিরসহ অন্যান্য ভিক্ষুরা। অনুষ্ঠানের শেষে শ্রদ্ধেয় শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের ধর্ম দেশনা( রেকর্ডকৃত) বাজানো হবে।
উপাসক-উপাসিকা কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য এ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা জানান, এ দুদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানে তিন পার্বত্য জেলা থেকে ধর্মপ্রাণ লোকজনের যোগদান ছাড়াও দেশ-বিদেশের কয়েক লাখ ধর্মপ্রাণ লোকজন এ পূর্নানুষ্ঠানে শরিক হওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে রাজবন বিহার পরিচালনা কমিটি যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.