স্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে চিকিৎসক- নার্স কিছুই নেই। মাসে তো নয় বছরেও কর্মস্থলে আসেন না চিকিৎসকরা। অসুখ হলে যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো তারাই উপজেলা সদরের হাসপাতাল অথবা জেলা সদরের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যায়। আর যাদের টাকা পয়সা নেই তারা স্থানীয় হাতুঁড়ে চিকিৎক, বৈদ্য ও কবিরাজের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা করায়। এভাবে চলছে আমাদের জীবনের স্বাস্থ্য সেবা। রাঙামাটির বরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়নের ভূষণছড়া বাজার কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ব্যবসায়ী মোঃ আক্কাস আলী (৬০) বৃহষ্পতিবার ভূষণছড়া বাজারে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আলাপচারিতায় তার এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা সর্ম্পকে জানতে গিয়ে তিনি এসব কথা জানান। স্বাস্থ্য সেবার ব্যাপারে শুধু আক্কাস আলী নয় ভূষণছড়া মধ্য পাড়ার আব্দুল সামাদ (৩৮) সুরমা বেগম (২৪) ফার্মেসী দোকানদার মোঃ হাফিজ উদ্দিনেরও একই কথা। পন্ডিত পাড়া গ্রামের মুরব্বী ভৈরব জ্যোতি চাকমা বলেন, ভূষণছড়া ইউনিয়নের ৫টি ওয়ার্ডের পাহাড়ি-বাঙালীর প্রায় ১৪ হাজার মানুষের জন্য ভূষণছড়া গ্রামের স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রটি গুরুত্বপূর্ন। কিন্তু আমাদের র্দূভাগ্যে চিকিৎসা দেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠান থাকলেও চিকিৎসক নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভূষণছড়া বাজারের কয়েকজন দোকানদার দুঃখ করে বলেন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রটি সরকার স্থাপন করেছেন এলাকার মানুষদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য। বর্তমানে স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রতে চিকিৎসার পরিবর্তে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এলাকার উচ্ছৃংখল কিছু যুবক ও ব্যবসায়ীরা প্রতিরাতে মদ ও জুয়ার আড্ডাস্থলে পরিণত করেছেন বলে দোকানদারদের অভিযোগ। ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দিলিপ কুমার চাকমা ভূষণছড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে চিকিৎসক না থাকায় এলাকার মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, অবকাঠামোর সমস্যা হলেও চাকুরীজীবি হিসাবে চিকিৎকদের কর্মস্থলে উপস্থিত হয়ে চিকিৎসা সেবা দেয়া তাদের নৈতিক দায়িত্ব। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বোধিদত্ত বড়ুয়া বলেন ভূষণছড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রেটি স্বাস্থ্য বিভাগ ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উদ্যোগে পরিচালিত হয়ে আসছে। চিকিৎসা কেন্দ্রটিতে সরকারী অনুমোদিত একজন চিকিৎসক, একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন পরিদর্শিকা একজন ফার্মাসিস, একজন আয়া ও একজন পিয়ন থাকার কথা। আমার পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ থেকে ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভিজিটর আয়া ও পিয়ন তিনজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে ভিজিটর বণিতা চাকমা মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন। আয়া ও পিয়ন পদের দুজন বর্তমানে দায়িত্বে রয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ সুইমিপ্রু রোয়াজার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ভূষণছড়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত একজন চিকিৎসক নিয়োগ পেলেও ওই কেন্দ্রে থাকার ব্যবস্থা না থাকায় কর্মস্থলে স্থায়ীভাবে অবস্থান করে চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব নয়। তবে অতীতে চিকিৎসকরা বছরে একবারও কর্মস্থলে না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন বর্তমানে চিকিৎসকরা মাসে একবার হলেও উপস্থিত হয়ে চিকিৎসা সেবা দেয়ার চেষ্টা করছেন। তবে অবকাঠামোর সুবিধা থাকলে স্থায়ীভাবে অবস্থান করে স্বাস্থ্য সেবা দেয়া সম্ভব হতো বলে তিনি মনে করেন।
–হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.