রাঙামাটিতে বিদ্যূতের ভোগান্তি চরম আকার ধারন করেছে। একদিকে বিদ্যূতের ঘন ঘন লোডশেডিং অন্যদিকে তীব্র গরমে রাঙামাটির শহরবাসীর জীবন এখন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে।
জানা গেছে, বর্তমানে রাঙামাটি শহরে ১২ থেকে ১৩ মেগাওয়াট বিদ্যূতের চাহিদা থাকলেও মাত্র ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেই বিদ্যুৎ সরবরাহ সঠিকমত পাচ্ছেন না রাঙামাটির শহরবাসী। প্রতিনিয়ত লোডশেডিং-এ রাঙামাটির শহরবাসী বিদূতের চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। অন্যদিকে ভ্যাপসা গরমে শহরবাসী জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। বিদ্যূতের ঘন ঘন লোডশেডিং-এর কারণে সামনের পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা ব্যাহত হচ্ছে। ব্যবসা-বানিজ্যের চরম ক্ষতির শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ঘন ঘন লোডশেডিং এর কারণে ইলেকট্রন্ক্সিস সামগ্রি নষ্ট হচ্ছে।
সূত্র জানায়, রাঙামাটিবাসীর বহু ত্যাগের বিনিময়ে ১৯৯৬০ সালে কর্ণফুলী নদীর উপর বাঁধ দিয়ে কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টি করে নির্মাণ করা হয় কাপ্তাই জল বিদ্যূৎ উৎপাদন কেন্দ্র। বর্তমানে বর্ষা মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই কাপ্তাই জল বিদ্যূৎ উৎপাদন কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু রাঙামাটিবাসীর যে টুকু বিদ্যূৎ সরবরাহের কথা সেই পরিমাণ বিদ্যূৎ দেয়া হচ্ছে না।
এদিকে, রাঙামাটি শহরে নিরবিচ্ছন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবীতে গেল বৃহস্পতিবার মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষ। মাববন্ধনে বক্তারা কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ প্রকল্পে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরেও রাঙামাটিতে বিদ্যুতের যে হারে লোডশেডিং করা হচ্ছে তাতে এলাকাবাসীর জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। বক্তারা অবিলম্বে রাঙামাটি শহরে বিদ্যুতের লোডশেডিং বন্ধ করা না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন।
এদিকে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং-এ অতিষ্ঠ হয়ে গেল শনিবার সন্ধ্যার দিকে স্থানীয় বিক্ষুদ্ধ জনতা ভেদভেদিস্থ রাঙামাটির বিদ্যূৎ বিতরণ বিভাগের(বিউবো) নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সামনে গিয়ে বিউবো`র কর্মকর্তাদের গালাগাল করেন এবং এক পর্যায়ে বিউবো`র কার্যালয়ে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। তবে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় বলে জানা গেছে।
রাঙামাটি প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন রুবেল বলেন, রাঙামাটিবাসীর সর্বোচ্চ ত্যাগে বিনিময়ে নির্মাণ করা হয় কাপ্তাই বাধ। এ বাধের কারণে সৃষ্টি হয় কাপ্তাই হ্রদ। বর্তমানে এ হ্রদের পানির উচ্চতা সর্বোচ্চ রয়েছে। কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকেও সর্বোচ্চ বিদ্যূৎ উৎপাদিত হচ্ছে। কিন্তু রাঙামাটিবাসী সেই বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। বিদ্যূতের লোডশেডিং এখন রাঙামাটি শহরবাসীর জীবনে নিত্য সঙ্গী হয়ে দাড়িয়েছে। বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ রাঙামাটিবাসীর সাথে এক ধরনের প্রতারণা করে চলেছেন।
বিদ্যূৎ উন্নয়ন বোর্ডের রাঙামাটি বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ কান্তি মজুমদার জানান, রাঙামাটিতে বিদ্যূৎ সঞ্চালন লাইন অনেক পুরানো। যেগুলো টানা হয়েছিল যখন রাঙামাটি শহরে বিদ্যূতের চাহিদা ছিল ৪থেকে ৫মেগাওয়াট। কিন্তু বর্তানে রাঙামাটি শহরে ১২ মেগাওয়াট বিদূতের চাহিদা রয়েছে। পুরোনো এ সঞ্চালণ লাইন দিয়ে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যূৎ সরবরাহ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি আরো জানান, বিভিন্ন সময়ে বিদ্যূতের তারের উপর গাছ পড়ে বিদ্যূৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। রাস্তার পাশে এসব গাছ কাটতে গেলে গাছের মালিকরা বাধা সৃষ্টি করছে। যার কারণে কত সময়ে বিদ্যূতের বিভ্রাট ঘটছে।
কিছুু দিনের মধ্যে রাঙামাটিতে বিদ্যূতের এ সমস্যা কাটিয়ে উঠার সম্ভব হবে বলে জানিয়ে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.