পার্বত্য বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সিদ্ধান্তে নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ জনসংহতি সমিতির

Published: 06 Feb 2015   Friday   

দেশী-বিদেশী ব্যক্তি বা সংস্থা পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ীদের সাথে সাক্ষাত বা বৈঠক করতে চাইলে স্থানীয় প্রশাসন এবং সেনাবাহিনী,বিজিবির উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং বিদেশী নাগরিকদের পার্বত্য চট্টগ্রাম ভ্রমণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেয়ার সিদ্ধান্তে তীব্র নিন্দা ওক্ষোভ প্রকশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। সমিতির পক্ষ থেকে সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত বৈষম্যমূলক, জাতি বিদ্বেষী এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পরিপন্থী বলে অভিহিত করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।

 

শুক্রবার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক  মঙ্গল কুমার চাকমার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বার্তায় এ কথা জানানো হয়েছে।

 

প্রেস বার্তায় উল্লেখ করা হয়,গত ৭ জানুয়ারী স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের  এক সভায় কোন দেশী-বিদেশী ব্যক্তি/সংস্থা কর্তৃক পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ীদের সাথে সাক্ষাত কিংবা বৈঠক করতে চাইলে স্থানীয় প্রশাসনএবং সেনাবাহিনী/বিজিবির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে এবং সাধারণ বিদেশী নাগরিকদের পার্বত্য চট্টগ্রাম ভ্রমণ করতে চাইলে অন্ততএকমাস পূর্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে অনুমতি নিতে হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। দেশের অপরাপর অঞ্চলে বিদেশী নাগরিকদের ভ্রমণে অনুমতি নিতে হয় না। সেখানে পার্বত্য চট্টগ্রামের বেলায় অনুমতি নেয়ার আইন জারি  করা বৈষম্যমূলক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত। এছাড়া কোন দেশী-বিদেশী ব্যক্তি বাসংস্থা কর্তৃক পাহাড়িদের সাথে সাক্ষাত করার সময় স্থানীয় প্রশাসন এবং সেনাবাহিনী/বিজিবির উপস্থিতি নিশ্চিত করার বিষয় সম্পূর্ণ বর্ণবাদী ও সাম্প্রদায়িকনীতিরই  বহি:প্রকাশ। এর মধ্য দিয়ে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদেরকে দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক হিসেবে বিবেচনা কর হয়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

 

প্রেস বার্তায় আরও বলা হয়, উক্ত সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের সচিবের বক্তব্যে অধিকাংশ চুক্তি ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হলেও সন্তু লারমা স্বীকার করেন না। পাহাড়ী নেতাদের বিরোধিতার কারণে ২২ বছরেও তিন পার্বত্য জেলায় পরিষদের নির্বাচনকরা সম্ভব হয়নি। এবং জনসংহতি সমিতির কাছে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত ও কল্পনা-প্রসূত। বস্তুত: পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ৭২টি ধারারমধ্যে মাত্র ২৫টি বাস্তবায়িত হয়েছে এবং অবশিষ্ট দুই-তৃতীয়াংশ ধারা এখনো অবাস্তবায়িত রয়েছে। কিন্তু সরকার বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় চুক্তির ৭২টি ধারারমধ্যে ৪৮টি ধারাবাস্তবায়িত হয়েছে বলে মিথ্যাচার করে চলেছে।

 

প্রেস বার্তায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়নে সরকার কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি উল্লেখ করে দাবি করা হয়, বিশেষত উপজাতীয় অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ, আঞ্চলিক পরিষদ ও তিনপার্বত্য জেলা পরিষদের আইনকার্যকরকরণ, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১-এর বিরোধাত্মক ধারা সংশোধন পূর্বক ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি,আভ্যন্তরীণ জুম্ম উদ্বাস্তু ও প্রত্যাগতজুম্ম শরণার্থীদের পুনর্বাসন, সেনা শাসন‘অপারেশনউত্তরণ’সহসকল অস্থায়ীক্যাম্পপ্রত্যাহার, অস্থানীয়দের নিকট প্রদত্ত ভূমি ইজারা বাতিলকরণ, পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল চাকরিতে জুম্মদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তিন পার্বত্য জেলার স্থায়ী অধিবাসীদের নিয়োগ,চুক্তির সাথে সামঞ্জস্য বিধানের জন্য অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আইনসমূহ সংশোধনসহ ইত্যাদি বিষয়গুলে াবাস্তবায়নে সরকার কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। অপরদিকে সরকারএখনো আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদ আইনসমূহ কার্যকর করেনি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচনবিধিমালা ও ভোটার তালিকা বিধিমালাও প্রণয়ন করা হয়নি। স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে তিন পার্বত্য জেলার ভোটার তালিকা প্রণয়নের কোন উদ্যোগই গ্রহণ করা হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মাধ্যমে পুলিশ (স্থানীয়) এবংআইন-শৃঙ্খলা বিষয়ি টপার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট হস্তান্তরের বিধান করা হয়েছে। কিন্তু উক্ত সভায় উল্টো উপজাতীয়/প্রাক্তন শান্তি বাহিনীর পুলিশ সদস্যদের অন্যত্র বদলিকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে যা সরাসরি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির লঙ্ঘন। এমনকি আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট আইন-শৃঙ্খলা বিষয়টি হস্তান্তর না করে সেনাবাহিনীর উপর আইন-শৃঙ্খলার পূর্ণ ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে যা আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের সমন্বয়ে প্রবর্তিত পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ শাসনব্যবস্থার পরিপন্থী।

 

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের চরম ব্যর্থতার দায় আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যন ও পাহাড়ি নেতৃবৃন্দের উপর চাপানোর হীন উদ্দেশ্যেই‘উপজাতীয় নেত্রীবৃন্দের বিরোধিতারকারণে পরিষদের নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি, জনসংহতি সমিতির কাছে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে বলে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মিথ্যাচার করছেন বলে প্রেস বার্তায় দাবি করা হয়েছে।

 

প্রেস বার্তায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উক্ত সভার গৃহীত সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে অনতিবিলম্বে উক্ত বর্ণবাদী, বৈষম্যমূলক ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পরিপন্থী সিদ্ধান্তাবলী প্রত্যাহারকরার জোর দাবি জানানো হয়েছে।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত