থানচির দুর্গত দুই ইউনিয়নে ত্রান বিতরণ শুরুঃ ত্রাণ সামগ্রি পরিবহনের খরচ দ্বিগুন গুনতে হচ্ছে

Published: 29 May 2016   Sunday   

বান্দরবানে থানচি উপজেলার খাদ্য সংকট এলাকা রেমাক্রি ও তিন্দু ইউনিয়নে দুর্গগতদের মাঝে সরকারের পক্ষ ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবহনের খরচ না দেওয়ায় ওই দুর্গম দুই ইউনিয়নে ত্রাণ সামগ্রি পৌঁছানো যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে ইঞ্জিন চালিত বোটের ভাড়া হিসেবে বস্তা বস্তা চাল দেওয়া হচ্ছে।


এদিকে রোববার সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে ১০মে:টন চাল দুর্গত এলাকায় পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে মোট ২৬ মে:টন চাল পাঠানো হয়েছে। তার আগে ১৬ মে:টন চাল প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা দেওয়া হয়। তারমধ্যে রেমাক্রি ও তিন্দুতে নৌপথে ১০ মে:টন চাল নেওয়া হয়েছে। নৌপথ ও হেলিকপ্টারে করে পর্যায়ক্রমে আরো চাল পাঠানো হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।


জানা যায়, থানচির রেমাক্রি ও তিন্দু ই্উনিয়নে সড়ক যোগাযোগ নেই। দুর্গম দুই ইউনিয়নে যাওয়ার একমাত্র উপায় নৌপথ। তবে বর্তমানে সাঙ্গু নদীতে হাঁটু পরিমান পানি রয়েছে। আবার কোথাও কোমর পরিমাণ পানি রয়েছে। পানি কমে যাওয়ায় বা কম থাকাতে সাঙ্গু নদীর উজান বেঁয়ে ইঞ্জিন চালিত বোটে করে যাওয়াও কষ্টসাধ্য হয়ে দাড়িঁয়েছে। এতে খাদ্য পরিবহনের খচর দ্বিগুন গুনতে হচ্ছে।


সূত্র জানায়, দুর্গম রেমাক্রি ও তিন্দু ইউনিয়নে দুর্গতদের জন্য চাল নিয়ে যেতে বস্তা প্রতি (৫০ কেজিতে এক বস্তা) খরচ পড়ছে ৩১০ টাকা থেকে ৫৬০ টাকা। থানচি সদরের খাদ্য গুদাম থেকে নৌঘাটে পৌছাতে একটি বস্তা খরচ পড়ে ৩০ টাকা। এরপর নৌঘাট থেকে রেমাক্রি বাজার পর্যন্ত প্রতি বস্তায় ইঞ্জিন চালিত বোটে খরচ পড়ে ২৮০ টাকা। থানচি থেকে রেমাক্রি বাজার পর্যন্ত পৌছাতে বস্তা প্রতি মোট খরচ হয় ৩১০ টাকা। আর বড় মদক বা ছোট মদকে পৌছাতে খরচ পড়ে ৫৬০ টাকা।


এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার থেকে যে পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে সেই পরিমাণ চাল জনপ্রতি দেওয়া হচ্ছে। পরিবহন খরচ মেটাটে চালের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এছাড়া দুর্গত এলাকার মানুষদের জন্য দেওয়া হলেও যাদের কোনো খাদ্য সংকট নেই তাদেরকে দেওয়া হচ্ছে এই চাল। এছাড়া দুর্গম এলাকায় পাড়ায় পাড়ায় গিয়েও চাল বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। আর যে স্থানে বিতরণ করছে সেই জায়গাতে এসেও দুর্গত মানুষরা চাল নিয়ে যেতে পারছেন না। দুর্গম ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানা গেছে। দুর্গম এলাকায় যারা বেশী খাদ্য সংকটে রয়েছে তাদের কাছেও পৌছানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। যারা বেশী খাদ্য সংকটে রয়েছে তারা সেই পরিমাণ চাল পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।


রেমাক্রি ইউপি সেক্রেটারী উ চ প্রু মারমা জানা,অফিস থেকে একটি টাকাও পরিবহনের খরচ দেওয়া হয় না। এত চাল দুর্গম এলাকায় নিয়ে যেতে আমার পক্ষেও এতটাকা দেওয়া সম্ভব নয়। দুর্গতদের জন্য এই চালও পরিবহনের খরচ হিসেবে বাইরে বিক্রি করাও অপরাধ। তাই বাধ্য হয়ে পরিবহন খরচ মেতাটে টাকার পরিবতে বোট চালকদের চালের বস্তা দেওয়া হচ্ছে।


থানচি বোট চালক সমিতির সদস্য ও বোট চালক লালপিয়াং বম, উশৈমং মারমা, হ্লাচিংমং মারমা, থোয়াইহ্লাপ্রু মারমা জানান, বড় নৌকা বা বোট দিয়ে সাঙ্গু উজানে রেমাক্রি ও তিন্দু যাওয়া অসাধ্য। ছোট ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা বোট ছাড়া যাওয়া সম্ভব নয়। এই ছোট ইঞ্জিন চালিত নৌকায় ৫-৬টি বস্তা পরিবহন করা যায়। এর চাইতে বেশি নিতে গেলে নৌকা ডুবে যেতে পারে কিংবা আটকে যেতে পারে।


অন্যদিকে ইউপি সেক্রেটারী জানান, পরিবহনের জন্য কোনো বরাদ্ধ বা অর্থ নেই। তাই বাধ্য হয়ে পরিবহন খরচ হিসেবে টাকার পরিবর্তে বোট চালকদের চালের বস্তা দেওয়া হচ্ছে।


জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিকে এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সরকার থেকে জনপ্রতি ২০ কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। ওই পরিমাণ চাল বিতরণ করতে হবে। এই পরিমাণ চাল এদিক-ওদিক করা যাবে না। পরিবহনের জন্য খরচ নির্ধারণ বা ধার্য্য করে দেওয়া আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তার জন্য কোনো অর্থ বরাদ্ধ নেই। তারপরও যে পরিমাণ চাল দেওয়া হচ্ছে সেই পরিমাণ দিতে হবে।


তিনি আরো বলেন,রোববার সেনাবাহিনীর সহায়তায় দুর্গম এলাকার মানুষের জন্য হেলিকপ্টারে করে ১০ মে:টন চাল পাঠানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে নৌপথে ও হেলিকপ্টারে করে দুর্গত এলাকায় সহযোগিতা পাঠানো হবে।

 

চাল বিতরণে অনিয়ম হচ্ছে কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, অনিয়ম করার কোনে সুযোগ নেই। অনিয়ম হচ্ছে জানতে পারলে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

 

উল্লেখ্য, বান্দরবানের দুর্গম থানচি উপজেলার তিন্দু ও রেমাক্রি ইউনিয়নে দুই ইউনিয়নে প্রায় এক হাজার ৫শ পরিবারের তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলার রেমাক্রি ও তিন্দু ইউনিয়নের ৯৫ শতাংশ পরিবার জুম চাষের ওপর নির্ভরশীল। গত বছর জুমে (পাহাড়ে বিশেষ কায়দায় চাষ) আগুন (পাহাড়ে জঙ্গল কেটে, আগাছা পরিষ্কার করতে) দেওয়ার সময় বৃষ্টি হয়। যার কারণে জঙ্গল বা আগাছা আগুনে পুড়ে গিয়ে ছাই হয়নি। ওই অবস্থায় জুমে ধান রোপণ করেন জুম চাষিরা। অতি বৃষ্টিতে আগাছা বড় হওয়ায় ধান উৎপাদন ভালো হয়নি। যা হয়েছে তাও পোকার আক্রমণে নষ্ট হয়েছে। যার কারণে জুমিয়ারা ঘরের গোলায় ধান জমা রাখতে পারেননি। এতে গত দুই মাস আগে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দেয়। অনাহারে বর্তমানে অনেকে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রগুলোর দাবী।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত