প্রিভিলেজ ষ্টাফ কমানোতে পার্বত্য শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যানের অসন্তোষ প্রকাশ

Published: 02 May 2016   Monday   
no

no

ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী এবং আভ্যন্তরীন উদ্বাস্তু পুনর্বাসন বিষয়ক টাস্কফোর্স- এর কার্যালয়ে প্রিভিলেজ স্টাফ কমিয়ে দেয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান ও সাবেক সাংসদ যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা এক চিঠিতে এ তথ্য জানা গেছে।

 

জানা গেছে, সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয় থেকে মতামত চেয়ে একটি পত্র পাঠানো হয় মন্ত্রী পরিষদ বিভাগে। পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের চিঠির জবাবে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সরকার গঠন ও রাষ্ট্রাচার অধিশাখার উপ সচিব নাজমুল হুদা সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত(পত্র নং ০৪.০০.০০০০.৪২১.৪১.০০৯.১৪.৭২ তাং ৭এপ্রিল ২০১৬ইং) এক পত্রে বলা হয়, ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী প্রত্যবাসন ও পুর্নবাসন এবং আভ্যন্তরীন উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরন ও পুর্নবাসন সম্পর্কিত টাস্কফোর্স এর সুনির্দিষ্ট জনবল ও কাঠামো রয়েছে এবং চেয়ারম্যান এর প্রাধিকার কোন পৃথক আইন বা বিধিবদ্ধ দ্বারা নির্ধারিত নয় সেহেতু মন্ত্রি পরিষদ বিভাগের ৫ আগস্ট ২০১৪ ইং তারিখের ০৪.০০.০০০০.৪২১.০০৯.১৪.২৭২ সংখ্যক প্রজ্ঞাপন মোতাবেক তার ক্ষেত্রে দ্যা মিনিষ্টার অফ স্টেস এন্ড  ডেপুটি মিনিষ্টার’স(রিমুনেরেশন এন্ড প্রিভিলেজেস) এ্যাক্ট ১৯৭৩ এর ১৪ধারা বলবৎ রাখার সুযোগ নেই।


এর পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপ সচিব পত্রটি পাঠানোর পর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সহকারী সচিব আলাউদ্দিন চৌধুরী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উপজাতীয় শরণার্থী এবং আভ্যন্তরীন উদ্বাস্তু পুনর্বাসন বিষয়ক টাস্কফোর্স এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়।

 

অন্যদিকে, কোন ধরনের আলাপ আলোচনা ছাড়া মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রনালয়ের এধরনের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি দিয়েছেন উপজাতীয় শরণার্থী এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু পুনর্বাসন বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা।

 

চিঠিতে টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, সদিচ্ছা এবং আন্তরিকতার কারনে তৃতীয় পক্ষের কোন মধ্যস্থতা ছাড়া ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক প্রশংসিত হন এবং “ইউনেস্কো শান্তি পুরষ্কার”-এ ভূষিত হন। তাই চুক্তি বাস্তবায়নের একটি গুরুত্বপূর্ন অনুষঙ্গ হচ্ছে “ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী এবং অভ্যন্তরীন উদ্বাস্তু পুনর্বাসন বিষয়ক টাস্কফোর্স” গঠন।


তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী সদয় হয়ে তাকে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান-এর দায়িত্বভার অপর্ন করেছেন। তার উপর অর্পিত দায়িত্ব তিনি যথাসম্ভব সততা, নিষ্ঠা এবং সকল প্রকার দূর্নীতির উর্ধ্বে থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পালন করার চেষ্টা করেছেন। দীর্ঘদিনের জটিলতা ভূমি সংক্রান্ত বিরোধের নিষ্পত্তি ছাড়া ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির প্রায় অধিকাংশ শর্তই বাস্তবায়িত হয়েছে। এখতিয়ার বিবেচনায় তা অবশ্য টাস্কফোর্সের আওতা বহির্ভূত। তবে, কর্মপরিধি বিবেচনায় ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির পর ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী এবং অভ্যন্তরীন উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব টাস্কফোর্সের। এসমস্ত কারনে টাস্কফোর্সের প্রচুর জনবলের প্রয়োজনীয়তা ও চাহিদা রয়েছে।


চিঠিতে যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, সরকারী রেকর্ড অনুযায়ী টাস্কফোর্সের সুবিধাভোগী ১২ হাজার ২২২ পরিবার ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী এবং প্রায় লক্ষাধিক পরিবারেরও বেশী অভ্যন্তরীন উদ্বাস্তু রয়েছে। তাই টাস্কফোর্সের কর্মপরিধি খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি এবং বান্দরবান এ তিন পার্বত্য জেলায় বিস্তৃত। উক্ত বিবেচনায় অস্থায়ীভাবে সৃিজত মাত্র ১২ (বার) জন কর্মচারী সম্বলিত একটি অস্থায়ী সদর দপ্তর (খাগড়াছড়িতে অবস্থিত) এবং সীমিত বাজেট দিয়ে সূচারুরূপে সম্পন্ন করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাছাড়া, অত্র সংস্থার চেয়ারম্যান পদাধিকারবলে “পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন, পর্যবেক্ষন ও পরীবিক্ষন কমিটি”-র একজন সদস্য। উক্ত কমিটির গুরুত্বপূর্ন কিছু টেকনিক্যাল ও দাপ্তরিক কর্মও রয়েছে। দায়িত্ব প্রদানে বিশ্বস্ত  প্রিভিলেজ এ্যাক্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্বারাই উক্ত অফিসের টেকনিক্যাল ও দাপ্তরিক কর্মকান্ড পরিচালিত ও সম্পাদিত হয়ে আসছে। কিন্তু, সূত্রোক্ত স্মারকমূলে তার আটজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা পারিবারিকভাবে বংশপরম্পরায় আওয়ামী রাজনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত, তাদের চাকুরী কেড়ে নেয়া হয়েছে। অথচ, বর্তমান সরকারের নীতি হচ্ছে “ঘরে ঘরে চাকুরীর ব্যবস্থা করা”।

 

চিঠিতে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে উপজাতীয়দের মনে নতুন করে সন্দেহের সৃষ্টি এবং আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলসমূহের প্রোপাগান্ডা প্রতিষ্ঠা পাবে। চিঠিতে তিনি অবিলম্বে টাস্কফোর্সে প্রিভিলেজ ষ্টাফ পুনর্বহালের দাবী জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।


উল্লেখ্য,১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী ভারত প্রত্যাগত এবং আভ্যন্তরীন শরণার্থীদের ২০ দফা প্যাকেজের পুর্নবাসন সংশ্লিষ্ট দাপ্তরিক কাজ সম্পাদনের লক্ষ্যে উপজাতীয় শরণার্থী এবং আভ্যন্তরীন উদ্বাস্তু পুনর্বাসন বিষয়ক টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। টাস্কফোর্স চেয়ারম্যানকে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা দিয়ে খাগড়াছড়িতে প্রধান কার্যালয় করা হয়। বিভিন্ন সরকারের সময় দলীয় লোকদের চেয়ারম্যান করে টাস্কফোর্স পুর্ন গঠন করা হয়। চেয়ারম্যান একান্ত সচিব, ব্যাক্তিগত সহকারিসহ ৯জন ষ্টাফ দেয়া হয়।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত