২৯৯নং আসনের সাংসদ ঊষাতন তালুকদার বলেছেন, ঐতিহ্যবাহী বিজু-সাংগ্রাইং-বৈসুক-বিষু,বিহু, সাংক্রাইন-এ উৎসবটি যুগ যুগ ধরে পালিত হয়ে আসছে আনন্দ করার জন্য। কিন্তু শাসকগোষ্ঠীর নানা ষড়যন্ত্রের কারণে বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জুম্ম জনগণ নিরানন্দ পরিস্থিতির মাঝে স্রেফ সামাজিক রীতি পালনে বিজু উৎসবটি পালন করতে বাধ্য হচ্ছে। উৎসবে আনন্দ করার কোনো পরিবেশ নেই পাহাড়ে। ঐতিহ্য-সংস্কৃতি নিয়ে চলছে নানা ষড়যন্ত্র।
তিনি আরও বলেন, সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না করায় জুম্ম সংস্কৃতি আজ হুমকির মুখে। জুম্ম জনগণ আজও অধিকারহারা। পার্বত্য চুক্তিতে জুম্ম জনগণের অধিকারের স্বীকৃতি রয়েছে। কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় জুম্ম জনগণ মৌলিক অধিকার বঞ্চিত। পার্বত্য চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো এখনও অবাস্তবায়িত। তিনি অবিলম্বে সরকারকে পার্বত্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান এবং জুম্ম জনগণকে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে শামিল হওয়ার আহবান জানান।
রোববার রাঙামাটিতে বিজু-সাংগ্রাইং-বৈসুক-বিষু,বিহু, সাংক্রাইন-এ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যো তিনি এসব কথা বলেন।
বিজু-সাংগ্রাইং-বৈসুক-বিষু,বিহু, সাংক্রাইন উদযাপন কমিটির উদ্যোগে রাঙামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গনে আয়োজিত র্যালী ও আলোচনা সভার উদ্ধোধক ও প্রধান অতিথি ছিলেন ২৯৯নং আসনের সাংসদ উষাতন তালুকদার। উদযাপন কমিটির সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান, শিক্ষাবিদ মংসানু চৌধুরী। বক্তব্যে রাখেন এমএন লারমা মেমোরিয়েল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা ও রাঙামাটি সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রীতা চাকমা।
আলোচনা সভা শেষে একটি বর্নাঢ্য র্যালী বের করা হয়। র্যালীটি পৌরসভা প্রাঙ্গন থেকে শুরু করে জেলা শিল্পকলা একাডেমী চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। র্যালীতে আদিবাসী নারী-পুরুষ ঐতিহ্যবাহী পোশাকে অংশ নেন। এর আগে প্রধান অতিথি বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠান উদ্ধোধন করেন। এর পর গিরিসুর শিল্পী গোষ্ঠীর শিল্পীদের নৃত্য পরিবেশন করেন।
উষাতন তালুকদার এমপি অভিযোগ করে আরও বলেন, শাসকগোষ্ঠী আঞ্চলিক ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে আজও শাসনতান্ত্রিক ক্ষমতায়ন হস্তান্তর করেনি। পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদকে কাগুজে বাঘ করে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশন আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেই। সাধারণ প্রশাসন, আইনশৃংখলা, ভূমি, পুলিশ বিভাগ পার্বত্য জেলা পরিষদে এখনও হস্তান্তর করা হয়নি। এখানকার আইনশৃংখলার ক্ষমতা জেলা প্রশাসকদের নয়, আঞ্চলিক এবং তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের। কিন্তু সেই ক্ষমতা দেয়া হয়নি।
তিনি বলেন, শুধু পাহাড়ি জনগণ নয়-, এখানকার সব জাতি, সম্প্রদায়, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সম্মিলিতভবে বিজু উৎসবটিকে পালন করতে যাচ্ছে। কিন্তু সরকার আদিবাসীদের দাবির ব্যাপারে উদাসীন। ফলে পাহাড়ের মানুষ চরম ক্ষোভ ও হতাশায়।
উল্লেখ্য, আগামী ১২ এপ্রিল থেকে তিন দিন ব্যাপী রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে এগার ভাষাভাষি চৌদ্দটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু-সাংগ্রাইং-বৈসুক-বিষু,বিহু, সাংক্রাইন শুরু হচ্ছে। বাংলা বর্ষের শেষ দুদিন ও নতুন বছরের প্রথম দিন এই উৎসব পালন করা হয়। এ উৎসবটি উচ্চারনগতভাবে বিভিন্ন নামের পালন করা হলেও এর নিবেদন ও ধরন কিন্তু একই। তাই উৎসবটি শুধু আনন্দের নয়, এ উৎসবটি সাংস্কৃতিক, কৃষ্টি, ঐক্যর ও মৈত্রী বন্ধনের প্রতীকও মনে পাহাড়ের আদিবাসীরা।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.