শুক্রবার রাঙামাটিতে দৈনিক গিরিদর্পণ পত্রিকার ৩৩ বছর পূর্তিতে উদযাপিত হয়েছে।
রাঙামাটি প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে দৈনিক গিরিদর্পণ সম্পাদক এ,কে,এম মকছুদ আহমেদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ ফিরোজা বেগম চিনু। এতে উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা, জেলা প্রশাসক মোঃ সামসুল আরেফিন, রাঙামাটি পৌরমেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী, পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান,প্রবীন সাংবাদিক সুনীল কান্তি দে, রাঙামাটি প্রেসক্লাব সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন রুবেল, রাঙামাটি বার এসোসিয়েশনের সভাপতি প্রতিম রায় পাম্পু, দৈনিক রাঙামাটির সম্পাদক আনোয়ার আল হক, পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পাদক ফজলে এলাহী প্রমুখ।
ফিরোজা বেগম চিনু এমপি বলেন, সাংবাদিকতার মতো কঠিন পেশা আর কিছুই নেই। জীবনের শুরুতে আমি দৈনিক গিরিদর্পন পত্রিকার মাধ্যমে আমার সাংবাদিকতা শুরু করি। কিন্তু এই কঠিন পেশায় আমি নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনি। তিনি বলেন, সাংবাদিকতা পেশা এমন একটি পেশা একটি সংবাদ কারোর পক্ষে গেলে তিনি ভালো বলবে আর কারো বিপক্ষে গেলেই সে খারাপ বলবে।
তিনি আরও বলেন, কে খারাপ বললো কেউ মন্দ বললো সেই দিকে না তাকিয়ে সমাজের কল্যাণে কল্যাণকর সংবাদ প্রকাশ করলে হাজারো মানুষ আপনাকে ভালো বলবে। তিনি নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার জন্য তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের আহবান জানান।
তিনি বলেন, পার্বত্যাঞ্চলের সংবাদপত্রের গুরু এ,কে,এম মকছুদ আহমেদ না থাকলেও হয়তো পার্বত্যাঞ্চলে আজ এতোগুলো পত্রিকা প্রকাশিত হতো না। তিনি সাহস জুগিয়েছেন বলেই আজ পার্বত্যাঞ্চলে অনেক সংবাদ পত্রের জন্ম হয়েছে। তিনি বলেন, দৈনিক গিরিদর্পণ শত বছর বেচে থাক এবং পত্রিকার সম্পাদক এ,কেএম মকছুদ আহমেদ মানুষের ভালেবাাসা শ্রদ্ধা নিয়ে শত বছর বেঁচে থাকেন তার কামনা করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিষদ বৃষ কেতু চাকমা বলেন, পার্বত্যাঞ্চলের শান্তি প্রতিষ্ঠায় দৈনিক গিরিদর্পন যে ভূমিকা রেখে চলেছে তা শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। তিনি বলেন, দৈনিক গিরিদর্পন পত্রিকা পাহাড়ের মানুষের কথা বলে বলেই দৈনিক গিরিদর্পণ আজ পাহাড়ের মানুষের কাছে এতো জনপ্রিয়। তিনি দৈনিক গিরিদর্পণ পত্রিকার সাফল্য ও উন্নতি কামনা করে পত্রিকার জন্য রাঙামাটি জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ভালোবাসা সব সময় থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ সামসুল আরেফিন বলেন, দৈনিক গিরিদর্পন এমন একটি দিনে প্রকাশিত হয়েছে যেটা আমাদের দেশের স্বাধীনতার সাথে জড়িত। পত্রিকা প্রকাশের এই দিনটি জেনে করা হোক অথবা না জেনে করা হোক না কেন পত্রিকার জন্মটাই একটি বড় অধ্যায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, সাংবাদিকতা পেশা একটি ব্যবসা। এই ব্যবসায় কতো লাভ হলো কতো লোকসান হলো তা চিন্তা করে পত্রিকা প্রকাশ করা সম্ভব হয় না। তার পরও পত্রিকার সম্পাদক প্রকাশক, সাংবাদিকরা তার পেশা নিয়ে পরের দিন আবারো ছুটে চলে সংবাদ সংগ্রহের জন্য। দিন দিন এই পত্রিকার ভালো ভালো সংবাদ গুলোর জন্যই পত্রিকার ব্যাপ্তি বৃদ্ধি পায় এবং মানুষের মনের মাঝে এই পত্রিকা স্থান করে নেয়। তিনি বলেন, সাংবাদিকাত একটি মহান পেশা। এই পেশাকে সঠিকভাবে পালন করতে পারলেই একজন সাংবাদিকের কৃতিত্ব।
তিনি রাঙামাটির এম,এ আলী স্বাধীনতা পুরস্কার লাভের কথা উলে¬খ করে বলেন, এম এ আলী স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করায় রাঙামাটির মানুষ আরো বেশী গর্বিত হয়েছে। পার্বত্যাঞ্চলে স্বাধীনতা যুদ্ধের অনেক স্মৃতি রয়েছে। ৭ বীর শ্রেষ্ঠের মধ্যে একজন রাঙামাটির বুড়িঘাটে সমাধি রয়েছে। তিনি দৈনিক গিরিদর্পণ স্বাধীনতা দিবসের দিনে বিশেষ ক্রোড় পত্রের মাধ্যমে রাঙামাটির স্বাধীনতার যে ইতিহাস তুলে ধরে তা আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার সাঈন তারেক হাসান বলেন, এ,কে,এম মকছুদ আহমেদ সাংবাদিকতা পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হয়েছেন। দীর্ঘ এতো বছর ধরে একটা পত্রিকা ঠিকিয়ে রাখা কতো কষ্ট সেটা তিনি ছাড়া আর কেউ বুঝবে না। তিনি আরও বলেন, আমরা সকাল বেলা একটি পত্রিকা হাতে পেয়ে সংবাদ নিয়ে পর্যালোচনা করি। কিন্তু একটি পত্রিকা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠাকের হাতে গিয়ে পৌছাতে সম্পাদক ও পত্রিকার সাথে কর্মরত সংবাদকর্মীরা যে কতো কষ্ট ভোগ করতে হয় তা আমরা কেউ জানি না। তিনি বলেন, দেশের খুব কম জায়গা আছে যেখানে এতো বছর একটা পত্রিওকা চলে আসছে। সেই ক্ষেত্রেও পার্বত্যাঞ্চলের মতো জায়গায় দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে একটি পত্রিকার সম্পাদনা করার মতো কষ্ট আর কিছুই নেই। তিনি বলেন, দৈনিক গিরিদর্পণ সম্পাদক এ,কে,এম মকছুদ আহমেদ পার্বত্যাঞ্চলের জন্য পত্রিকা প্রকাশ করে অনেক ত্যাগ করে গেছেন। এই সুনাম আগামী গুলোতেও ধরে রাখার আহবান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, সাংবাদিতা পেশা একটি মহান পেশা এই পেশাকে কিছু কিছু মানুষ নষ্ট করে দেয়ার চেষ্টায় রয়েছে। তিনি বলেন, এই মহান পেশার দায়িত্ব নিয়ে গেলে একজন সংবাদকর্মীর যোগ্যতা ও শিক্ষার মেধা, প্রশিক্ষণ খুবই প্রয়োজন। তিনি রাঙামাটির সাংবাদিক সংস্থাগুলোকে নতুন নতুন উদীয়মান সংবাদকর্মীদের যোগ্যতা দেখে তাদের কাজে লাগানোর আহবান জানান। তিনি দৈনিক গিরিদর্পন পত্রিকার ৩৪ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে সম্পাদক এ,কে,এম মকছুদ আহমেদকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান।
প্রবীন সাংবাদিক সুনীল কান্তি দে, বলেন, এ,কে,এম মকছুদ আহমেদ দৈনিক গিরিদর্পণ পত্রিকার আগে আরো একটি পত্রিকার সম্পাদনা করেছেন। সেটি হলো সাপ্তাহিক বনভূমি। তিনি বলেন, সাপ্তাহিক বনভূমিতে লেখার কারণে আমি আমার জীবন থেকে ৪ টি বছর হারিয়ে ফেলেছি। দীর্ঘ ৪টি বছর আমাকে অন্ধকারে জীবন কাটাতে হয়েছে। আমার মতো আরো কোন সাংবাদিককে যাতে এই অন্ধকার জীবনে যেতে না হয় সেই কামনা করি সব সময়। তিনি বলেন, এই পেশা একটি পবিত্র পেশা এই পেশাকে সম্মান জানাতে হবে। আমরা যেন তোন ভাবে কারো বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করে বাহবা নেয়ার চাইতে কারো জীবনের ভালো সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেয়া অনেক বড়ো কথা। তিনি দৈনিক গিরিদর্পন দীর্ঘ ৩৩ বছর পার্বত্য অঞ্চলের জন্য যে শ্রম দিয়ে গেছে তা শুধু এ,কে,এম মকছুদ আহমেদের জন্য সম্ভব হয়েছে। তিনি পত্রিকার সম্পাদনার মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিরাট ভূমিকা রেখে গেছে এবং আগামীতে রেখে যাবে।
পরে কেক কেটে জন্ম দিনের শুভ সূচনা করেন ফিরোজা বেগম চিনু এমপি এ সময় অন্যান্য অতিথিরাও উপস্থিত ছিলেন। ফিরোজা বেগম চিনুএমপি এ,কে,এম মকছুদ আহমেদকে কেক খাই দিয়ে পত্রিকা এবং তার দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
এর আগে সাংসদ ফিরোজা বেগম চিনুর পক্ষ থেকে দৈনিক গিরিদর্পণ সম্পাদককে ফুলের শুভেচ্ছা জানানো হয়। এর পর রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক সামসুল আরেফিন, পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন, পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান, রাঙামাটির প্রবীন সাংবাদিক সুনীল কান্তি দে, রাঙামাটি প্রেসক্লাব সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন রুবেল, রাঙামাটি বার এসোসিয়েশনের সভাপতি প্রতীম রায় পাম্পু, দৈনিক রাঙামাটির সম্পাদক আনোয়ার আল হক, পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পাদক ফজলে এলাহী ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
এ ছাড়া রাঙামাটি প্রেসক্লাব, খাগড়াছড়ির পত্রিকা অরণ্যবার্তা, রাঙামাটি সাংবাদিক ফোরাম, রাঙামাটি রিপোর্টাস ইউনিটি, রাঙামাটি সাংবাদিক ইউনিয়ন, দৈনিক রাঙামাটি পক্ষে সম্পাদক মোঃ কামাল, নির্বাহী সম্পাদক জিমি কামাল, সম্পাদক আনোয়ার আল হক, হিল নিউজ পত্রিকার পক্ষ থেকে মোঃ সোলায়মান, সিএইসটি মিডিয়ার সম্পাদক নির্মল বড়–য়া, রাঙ্গামাটি মানবাধিকার পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থা, প্রিয় রাঙামাটি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র সেনা, বাংলাদেশ ইসলামী যুব সেনা, আহলে সুন্নাত জামাত, হযরত শাহছুফি আব্দুল হাকিম আবদুল্লাহ ফকির (রাঃ) মাজার কমিটির আব্দুল সাত্তার, রাঙ্গামাটি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মায়াধন চাকমা, সমাজকর্মী বিজয় রতন দে সহ অসংখ্য সংঘঠন ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.