প্রায় ৩ কোটি টাকার ঋণ মাথায় নিয়ে লামা তৃতীয় পৌর পরিষদের যাত্রা শুরু হয়েছে। গেল ৩ জানুয়ারী আনুষ্ঠানিক ভাবে দায়িত্ব গ্রহনের মধ্য দিয়ে নতুন পরিষদ দায়িত্বভার গ্রহন করে।
দায়িত্ব গ্রহনের মাসেই পূর্বের পরিষদের অব্যবস্থাপনার খেসারত হিসাবে চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে লামা পৌরসভা। আর্থিক সংকটের কারণে কর্মকর্তা কর্মচারীদের জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারী মাসের বেতন ভাতা, উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদারদের বিল ও জামানত,কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আনুতোষিক এবং বিদ্যুৎ বিল প্রদান করতে পারছেনা সদ্য দায়িত্ব গ্রহনকারী পৌর পরিষদ।
প্রায় ৩ কোটি টাকার ঋণ ভারে ন্যুয়ে পড়েছে পৌরসভার সার্বিক আর্থিক ব্যবস্থাপনা। বিগত পৌর পরিষদের আর্থিক অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন নবনির্বাচিত মেয়র মোঃ জহিরুর ইসলাম।
উল্লেখ্য,গেল ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫ নির্বাচনে মোঃ জহিরুর ইসলামের নেতৃত্বে ৩য় পৌর পরিষদ নির্বাচিত হয়। সাবেক মহকুমা লামা সদরকে গত ২০০১সালে পৌর সভায় উন্নতি করা হয়।
পৌর সভার সচিব মাসুদ মুরশেদ জানিয়েছেন, রাজস্ব তহবিল সংকটের কারণে পৌরসভার কর্মকর্তা- কর্মচারীদের জানুয়ারী ও ফেব্রƒয়ারী মাসের বেতন ভাতা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। বিগত দিনে উন্নয়ন ও জামানত তহবিল হতে ঋণ নিয়ে বেতন ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে। যার কারণে উন্নয়ন প্রকল্পের বিল পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছেনা।
বর্তমানে লামা পৌরসভা হতে বিএমডিএফ বকেয়া ঋণ বাবদ পাবে ১কোটি ৪৪ লাখ ৬৩ হাজার এবং বকেয় বিদ্যুৎ বিল ২৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আনুতোষিক বকেয়া ১৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। পৌরসভার এডিপি তহবিল হতে ১৯ লক্ষ ৫০ হাজার, বিএমডিএফ তহবিল হতে ১০ লক্ষ ৮০ হাজার, শহর উন্নয়ন তহবিল হতে ২ লক্ষ টাকা রাজস্ব তহবিলে স্থানান্তর করে খরচ করা হয়েছে। কিন্তু রাজস্ব তহবিল হতে কোন তহবিলের স্থানান্তরিত টাকা ফেরত প্রদান করা হয়নি। এ ছাড়া ঠিকাদারদের বকেয়া বিল বাবদ পৌরসভার কাছে পাওনা প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা।
পৌরসভার রাজস্ব ঘাটতির কারণে বিভিন্ন তহবিল হতে ঋণ নিয়ে পৌরসভা পরিচালনা করতে হয়েছে বলে লামা পৌরসভার সাবেক মেয়র আমির হোসেন জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, পৌর সভার রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎস ট্রেড লাইসেন্স এবং হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ প্রায় কোটি টাকা পৌরসভা পাওনা রয়েছে। ৫০% এর অধিক হোল্ডিং ট্যাক্স ও ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন ফি বকেয়া থাকায় রাজস্ব ঘাটতি দিন দিন বাড়ছে। রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মচারীগন স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন ব্যতিরেখে একই সময়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। বকেয়া ও হাল সনের রাজস্ব আদায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের দায়সারা গোচর দায়িত্ব পালন রাজস্ব ঘাটতির অন্যতম কারণ বলে সচেতন নাগরিকগণ মনে করছে। দীর্ঘদিন ধরে পৌরসভার সচিব, সহকারী প্রকৌশলী ও হিসাব রক্ষকের পদ খালি থাকায় পৌর নাগরিকগণ চরম ভোগান্তির সম্মুখিন হচ্ছে। বিগত পৌর পরিষদের আমলে পৌরসভার কর্মচারীগণ দায়সারাভাবে দায়িত্ব পালন করায় রাজস্ব ঘাটতির পরিমান বৃদ্ধি পায়।
কর্মকর্তা- কর্মচারীদের তদারকির অভাবে পৌরসভার নাগরিকদের সেবার মান চরম নিন্ম পর্যায়ে পৌছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন ব্যতিরেখে পৌর সভার রাজস্ব আদায়ের সাথে সম্পর্ক যুক্ত একজন কর্মচারী একই সময়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত থাকায় এর বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে মহামান্য হাই কোর্টে পৌর নাগরিকদের পক্ষ থেকে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে। হাই কোর্ট উক্ত কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য স্থানীয় সরকার মস্ত্রনালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকা টোব্যাকো কোম্পানী তামাক পাতা হতে পৌরকর আদায় নাকরার জন্য মহামান্য হাই কোর্টে রিটপিটিশন দায়ের করলে পৌরকর আদায় আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে।
লামা পৌরসভার বর্তমান মেয়র মোঃ জহিরুল ইসলাম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, লামা পৌরবাসি আমাকে ভোট দিয়ে মেয়র বানিয়েছেন। তাই পৌরবাসির চাওয়া পাওয়ার কথা সব সময় বিবেচনা করতে হবে আমাকে। পৌর সভার উন্নয়ন এবং পৌরবাসীকে সেবা করার লক্ষে সকলের সহযোগিতায় কাজ করতে চাই।
তিনি আরো বলেন, দায়িত্ব গ্রহনের পর পৌরসভায় অনেক সমস্যা পরিলক্ষিত হয়। লামা পৌরসভার আর্থিক সংকট দুরিকরন ও নাগরিক সেবার মান উন্নয়নে সরকার এবং পৌর নাগরিকদের সহযোগিতা কামনা করেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.