রাঙামাটি চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অবকাঠামোগত ভবন এবং বিচারকদের আবাসন সংকটের কারণে বিচারিক কাজে ব্যাহত হচ্ছে। তারপরও গত বছর মামলার রেকর্ড পরিমাণ মামলার নিস্পত্তি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, রাঙামাটি চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পরিচালনায় অফিস রুম, এজলাসও রয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। বিচারকদের আবাসন সমস্যাসহ নানা সংকট বিরাজমান। দ্বিতলবিশিষ্ট পুরাতন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনে কাজ চললেও পরবর্তীতে তৃতীয় তলায় চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নিজস্ব কোনো ভবন নেই। ইতোমধ্যে ৫০ শতক জায়গা অধিগ্রহণ করা হলেও নকশা জটিলতার কারণে এ আদালত ভবনটি নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না।
একই ভবনে গাদাগাদি করে পরিচালিত হয় সবগুলো আদালতের বিচারিক কাজ। আলাদা কক্ষ না থাকায় বিচারকদের বসার সংকুলান হয় না। আমলি আদালতসহ মোট ১৩টি আদালতের বিচারিক কাজ চালাতে হয় মাত্র ৩টি এজলাসে বসে। এছাড়া বিচারকদের আবাসিক ভবন সংকট প্রকট রয়েছে। তাদের জন্য নেই কোন যানবাহনের সুবিধা। বিচারকরা থাকেন ভাড়া বাসায়। ফলে নিরাপত্তার সংকটও বিরাজমান।
রাঙামাটি চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সূত্রে জানা গেছে,২০০৭ সালে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ হয়। পরে ২০০৮ সালের ১ জুলাই রাঙামাটি চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত স্থাপনের পর মামলা নিষ্পত্তির হার অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত এই আদালতে মামলা নিষ্পত্তির হার প্রায় ১০৯ ভাগ- যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৩৫ শতাংশ বেশী। ২০১৪ সালে মামলার নিষ্পত্তির হার ছিল প্রায় শতকরা ৭৪ ভাগ। তার আগের বছর এই হার ছিল প্রায় ৭৫ শতাংশ।
সূত্র মতে,যদি সব পদে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ থাকলে তবে মামলার নিষ্পত্তির হার আরও বাড়ত। রাঙামাটি চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিচারাধীন মামলা ছিল ১৯৬৪টি। গত বছর আরও মামলা দায়ের হয় ১৩৩৩টি। সে হিসেবে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২০১৫ সালে ৩২৯৭টি মামলার বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সেগুলোর মধ্যে একই বছর ১৪৫৭টি মামলার নিষ্পত্তি করা হয়। বছর শেষে বিচারাধীন থেকে যায় ১৮৪০টি মামলা। আগের বছরে অনিষ্পত্তির সংখ্যা ছিল ১৯৬৪টি মামলা।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাষ্ট(ব্লাষ্ট) রাঙামাটি জেলা ইউনিটের প্রধান সমন্বয়কারী এ্যাডভোকেট জুয়েল দেওয়ান জানান, জনস্বার্থে ব্লাষ্টের পক্ষ থেকে তিন পার্বত্য জেলায় জজ আদালত স্থাপনের জন্য হাইকোর্টে রিট করা হয়। এতে হাইকোর্ট থেকে তিন পার্বত্য জেলায় জজ আদালত স্থাপনের নির্দেশ দেয়ার পর ২০০৮ সালের ১ লা জুলাই এ আদালত স্থাপিত হয়। কিন্তু গত ৮ বছরে এ আদালতের অবকাঠামো থেকে বিচারকদের অফিস কক্ষ, বিচারিক এজলাস কক্ষ ও বিচারকদের আবাসন ব্যবস্থা করা হয়নি।
এসব সংকটের কারণে বিচারিক কার্যক্রম ব্যাঘাত ঘটছে। তিনি আরও জানান,বিশেষ করে পৃথক পৃথক বিচারিক এজলাস কক্ষ না থাকায় একজন বিচারকের বিচার কাজ শেষ না হওয়ায় পর্ষন্ত ওই কক্ষের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয়।
ফলে একদিকে ন্যায় বিচার প্রনিধানযোগ্য হচ্ছে না। অন্যদিকে দুরদুরান্ত থেকে আসা বিচারপ্রার্থীরা আদালতের আসলেও ওই দিন নিজের জায়গায় ফেরত যেতে না পারায় আর্থিকসহ নানান হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। তাই অতিদ্রুত পৃথক আদালত ভবন নির্মানের প্রয়োজন।
রাঙামাটি চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সামসউদ্দিন খালেদ বলেন, এ আদালতের অবকাঠামোগত এবং বিচারকদের আবাসন সংকটের কারণে বিচার কার্যক্রমে ব্যাহত হচ্ছে। বিচারকদের জন্য প্রয়োজনীয় যানবাহনের সুবিধাও নেই।
এ আদালত ভবনটি বহুতল বিশিষ্ট অত্যাধুনিকভাবে নির্মাণের জন্য সরকার ৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও কেবলমাত্র নকশা জটিলতার কারণে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। ভবন নির্মাণে জমি অধিগ্রহণও হয়েছে। আদালত ভবন নির্মাণে গণপূর্ত বিভাগকে দায়িত্বশীল উদ্যোগ দরকার বলে মনে করেন তিনি।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.