রাঙামাটি জুরাছড়ি উপজেলার দুমদুম্যা ইউনিয়নের করল্যাছড়ি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কল্পনা চাকমা(৪৫)। ইউএনডিপি-সিএইচটিডিএফ ও আরএইচডিসি এবং এলাকাবাসীর যৌথ উদ্যোগে ২০১০ সালে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিনা বেতনে পাঠদান করে আসছেন।
আশা একটাই বিদ্যালয় জাতীয়করণ হলে একসময় দুঃখ মুছে যাবে। কিন্ত বিদ্যালয়গুলোর সরকারের জাতীয় করণের কোন উদ্যোগ বা অগ্রগতির না দেখায় আশায় মাঝে নিরাশার চাবুক মারছে ক্রমান্বয়ে।
শিক্ষক জয়ন্ত তঞ্চঙ্গ্যা (৩০) বলেন, ‘মা-বাব, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সংসার। আয় বলতে টিউশনির সামান্য টাকা আর জুমচাষ। প্রায় সময় ধার করতে হয়। ইতিমধ্যে অনেক টাকা ঋণ হয়ে গেছে। মুদির দোকানে বাকি পড়েছে। দোকানিও আর পণ্য দিতে চান না। এই কষ্টের দিন কবে যে শেষ হবে বুঝতে পারছি না।’ তাঁর মতো উপজেলার ইউএনডিপি-সিএইচটিডিএফ ও আরএইচডিসি এবং এলাকাবাসীর যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ২৫টি বেসরকারী বিদ্যালয়ের ৯৯ জন শিক্ষকেরও।
মঙ্গলবার জুরাছড়ি বিশ্রামাগারে ইউএনডিপি-সিএইচটিডিএফ ও আরএইচডিসি এবং এলাকাবাসীর প্রতিষ্ঠিত বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে মতবিনীময় সভায় এমন হতাশা ব্যাঞ্জক অভিমত প্রকাশ করেন শিক্ষকরা।
২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা মোতাবেক সারা দেশে দ্বিতীয় ধাপে ১ হাজার ৭১৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হলে, তৃতীয় ধাপে বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণের শিক্ষকদের কিছুটা আশার বুক বাঁধে।
উপজেলার ইউএনডিপি-সিএইচটিডিএফ ও আরএইচডিসি এবং এলাকাবাসীর যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়গুলো হলো, দুরহাটছড়া, চালকা পাড়া, শৈয়াল পাড়া, বারুদগোলা, পেকপাড়া, ডানে জুরাছড়ি, আমতলা, চেয়ারম্যান পাড়া, বালোশ পাড়া, শিলছড়ি মোন পাড়া, ভূয়াতুলীছড়া, বাদলহাটছড়া, আমতলা বাদলহাটছড়া, ছোট কড়ইদিয়া, নাকশাতলী, আনন্দ পাড়া, চুমাচুমি, মন্দিরাছড়া, কুলুকপানিছড়া, শীমেইতলী, বালুছড়া, করল্যাছড়ি,দুলুছড়ি, কলাবনছড়া, ঘিলালুদি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।
দুরহাটছড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মল্লিকা চাকমা বলেন, ২০১০ সালে থেকে ইউএনডিপি-সিএইচটিডিএফ ও আরএইচডিসি একজন শিক্ষককে কিছুটা সম্মানি দিয়ে ছিলেন। বিগত বছর জুন মাস হতে সেই সম্মানিও বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া বাকী তিন শিক্ষক প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিনা বেতনে পাঠদান করে যাচ্ছি।
দুমদুম্যা ইউনিয়নের শীমেইতুলী বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্নেহ কুমার চাকমা বলেন, ‘তৃতীয় ধাবে বিদ্যালয়গুলো জাতীয় করণের আশায় বিদ্যালয়ের বিভিন্ন তথ্য ও কাগজ দিয়েই যাচ্ছি। সময় কাল ক্ষেপনে আশার মাঝে নিরাশার চাবুক মারছে এখন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানায়, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তৃতীয় ধাপে জাতীয় করণের লক্ষ্যে উপজেলার ইউএনডিপি-সিএইচটিডিএফ ও আরএইচডিসি এবং এলাকাবাসীর যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন তথ্য ও কাগজ ছায়া কপি জেলা পরিষদ, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যলয় পাঠানো হয়েছে। এসব কাগজপত্রদি তদন্ত স্বাপেক্ষে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী কর্মকর্তার প্রতিস্বাক্ষরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানোর কথা রয়েছে।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রিটন চাকমা বলেন, একজন মানুষের বেঁেচ থাকার জন্য প্রয়োজন মৌলিক অধিকার শিক্ষা। পিছিয়ে পড়া পার্বত্য এলাকার এনজিও পরিচালিত ২৫টি বিদ্যালয়ে ১৪শ প্রায় শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করছে। সুতরাং এসব বিদ্যালয় দ্রুত জাতীয় করণের উদ্যোগ নেওয়া জরুরী।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আশিষ কুমার ধর বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে চাওয়া ইউএনডিপি-সিএইচটিডিএফ ও আরএইচডিসি পরিচালিত ২৫টি বিদ্যালয়ের সরজমিনে তদন্ত স্বাপেক্ষে ইতোমধ্যে সকল তথ্য ও বিদ্যালয়ের ছায়া কপিসহ প্রেরণ করা হয়েছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.