প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্বেও সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অভাবে কাপ্তাই সহ তিন পার্বত্য জেলায় আশানুরূপভাবে আগর চাষ করা হচ্ছে না। অথচ এ আগর চাষ করে এবং তা বিদেশে রপ্তানী করে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এক কথায় আগর চাষের মাধ্যমে পার্বত্যবাসী তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারে।
বর্তমানে দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শুধুমাত্র সিলেটের মৌলভী বাজারের বড়লেখায় আগর চাষ করা হয়। আগর গাছ উষ্ণমন্ডলীয় চির সবুজ বনাঞ্চলের বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। এটি সাধারণত লম্বায় ৪০ মিটার হয়। এর পরিধি ও বেড় আড়াই মিটার পর্যন্ত হতে পারে। আগর গাছের কান্ড একনলা ও সোজা হয়ে থাকে। এ গাছটি খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে। দক্ষিন ও দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার প্রায় প্রতিটি দেশে আগর গাছ জন্মায়।
আগরের কাঠ খুবই সুগন্ধযুক্ত বিধায় ”আগরবাতি” তৈরিতে এ গাছের কাঠ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া এ গাছের কাঠ থেকে ধনু ও লাঠি তৈরি করা হয়। এর কাঠ দিয়ে আগরবাতি, আতর ও সুগন্ধি তৈল উৎপন্ন করা ছাড়াও এটি উন্নতমানের পারফিউম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে এক তোলা আতরের দাম প্রায় দুই লাখ টাকা। আবার সম পরিমান নিম্নমানের আতরের প্রতি তোলার দাম ৭ থেকে আট হাজার টাকা। আগর গাছ কেটে খন্ড পুড়িয়ে যে ছরণ (নির্যাস) তৈরি হয় তার প্রতি কেজির দাম (মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে) প্রায় একলাখ টাকা। আবার শুধু কাঠখন্ডের প্রতি কেজির দাম ১শ’ থেকে ২ হাজার টাকা।
সব আগর গাছে আতর থাকেনা। বিশেষ ধরনের আগর সম্পর্কে অভিজ্ঞ যে কোন ব্যক্তি গাছ দেখে বুঝতে পারবেন এই গাছে আতর পাওয়া যাবে কিনা। আবার আগর গাছে লোহার পেরেক মেরে ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টির মাধ্যমে গাছে আতর আনার একটি পদ্ধতিও রয়েছে।
আতর হওয়া একটি গাছ ৫ থেকে ১০ লাখ এমনকি ২০/২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। বড় কোন গাছে আতরের সম্ভাবনা আঁচ করতে পারলে অনেক ব্যবসায়ী তা নিলামে ক্রয় করে থাকেন এবং প্রাপ্ত আতর বিদেশে রপ্তানী করে প্রচুর টাকা আয় করেন।
অতি মূল্যবান এই আগর গাছ চাষের জন্য পার্বত্য এলাকা অত্যন্ত উপযুক্ত বলে বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন। আর তাই বিগত আ’লীগ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রী পার্বত্যবাসীদের আগর চাষে উৎসাহ দেওয়ার জন্য ১৯৯৮ সালে কাপ্তাই সফর করেন। এ সময় তিনি স্থানীয় জনগণকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ”আপনারা বেশী বেশী করে আগর চাষ করুন, কারন আগর চাষ বদলে দিতে পারে আপনাদের জীবনধারাও”।
তার এই বক্তব্যে অনেক পাহাড়ী-বাঙ্গালী আগর চাষে উৎসাহী হলেও জোট সরকারের আমলে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও সহযোগিতা না পাওয়ায় তাদের অনেকেই আগর চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। তবে তত্তাবধায়ক সরকারের সময় সরকারী সহযোগিতা পাওয়ায় রাঙামাটি দক্ষিন বন বিভাগের আওতায় কাপ্তাই বনরেজ্ঞ এলাকায় অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কিছু এলাকায় আগর চাষ শুরু হয়।
কাপ্তাই বন রেঞ্জ কর্মকর্তা শাহজাহান আলী জানান, ২০০৭-০৮, ২০০৮-০৯ ও ২০০৯-১০ সালে তিন দফায় প্রায় দু’শটি প্ল¬ট আগর চাষের জন্য জন সাধারণের মাঝে বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ প্ল¬টেই আগর চাষ করা হয়েছে। তবে এসব আগর বাগানে আগর গাছের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে অন্যান্য ফষলাদির চাষ করা হচ্ছে। যা আগর চাষের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাপ্তাই ও রাঙামাটিসহ পার্বত্যা জেলায় সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় আগর চাষ করা হলে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে পারবে। স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে এ ব্যাপারে প্রচারনা চালিয়ে তাদের উৎসাহিত করা হলে ব্যক্তি মালিকানাধীন অনেক আগর বাগান সৃষ্টি করা সম্ভব। এ ব্যাপারে বর্তমান সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয়কে বিশেষ ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে বলে তারা মনে করেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.