খাগড়াছড়িতে বিএনপি`র ধানের শীষ প্রতীকের ভরাডুবি

Published: 01 Jan 2016   Friday   
no

no

খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির দুর্গের পতন ঘটেছে। শক্তির মূল উৎস এখন হাতছাড়া। জেলা বিএনপি সম্ভবত অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে এখন সবচেয়ে বেশী সংকটে রয়েছে।

 

খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচনে জেলা নেতৃবৃন্দের তৎপরতা ও তৎপরবর্তী নির্বাচনী ফলাফল পর্যালোচনা করে এ বক্তব্যের সমর্থন মেলে।


বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার পতনের পর সেনা সমর্থিত সরকার, তারপর আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। মহাজোট সরকারের সময় গত ছয় বছর সারাদেশে বিএনপির দুর্দিন গেলেও খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি তখন বেশ দাপিয়ে মিটিং মিছিলে রাজপথ সরগরম করে রেখেছিল। নেতা-কর্মীদের রাখতে পেরেছিল বেশ চাঙ্গা।

 

বিএনপির সেই ছন্দপতন ঘটে গত বছর টানা তিন মাস আন্দোলনের সময় থেকে। গত এক বছরে উল্লেখযোগ্য কোন কর্মসূচি নিতে পারেনি জেলা বিএনপি। সর্বশেষ পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক (দলীয় প্রতীক দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের কাছে আবেগের বিষয়) নিয়ে নির্বাচনের অংশগ্রহণ করে জেলা বিএনপি। এ নির্বাচন দলের শক্তিমত্তার একটি এসিড টেস্ট হিসেবে পর্যালোচনা করছে অনেকে। এই এসিড টেস্টে প্রমাণিত হয়েছে খাগড়াছড়িতে বিএনপির মূল শক্তির উৎস হাতছাড়া হয়েছে।

 

খাগড়াছড়ি জেলা সদরে বিএনপির দুর্গ বলে পরিচিত এলাকাগুলো হচ্ছে- কলাবাগান, শালবাগান, কুমিল্লা টিলা, মুসলিমপাড়া ও সবুজবাগ। এ পৌরসভা নির্বাচনে এসব এলাকার ভোট কেন্দ্রে ধানের শীষ প্রতিপক্ষের চেয়ে অনেক কম ভোট পেয়েছে। কলাবাগান এলাকায় জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভূইয়ার বাসভবন। এলাকাটি বিএনপির অন্যতম ঘাটি হিসেবে পরিচিত। এ এলাকার ভোট কেন্দ্র পুলিশ লাইন্স স্কুল। এই কেন্দ্রে ধানের শীষ পেয়েছে ৪১১, নৌকা ১২৯ ও মোবাইল প্রতীক ৪৭৪।

 

শালবাগান এলাকার দুইটি কেন্দ্র শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ও ভোকেশনাল টেক্সটাইল কেন্দ্র। এই দুই কেন্দ্রে ধানের শীষ পেয়েছে যথাক্রমে ৩৭৬ ও ২৪২। নৌকা পেয়েছে ১৩৪ ও ৫৫। মোবাইল প্রতীক পেয়েছে ৯৮০ ও ১,১৭৭।

 

কুমিল্লা টিলায় ধানের শীষ পেয়েছে ১৩০, নৌকা ৫৫ ও মোবাইল প্রতীক ৫১৩। মুসলিম পাড়ায় ধানের শীষ পেয়েছে ১৯৬, নৌকা ৭৭ ও মোবাইল প্রতীক পেয়েছে ৫৮৫। সবুজবাগ এলাকার ভোট কেন্দ্র খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ। এ কেন্দ্রে ধানের শীষ ৪৩১, নৌকা ১৮৬ ও মোবাইল প্রতীক ৭৩৫। উল্লেখ্য যে; এসব এলাকা গত এক বছর আগেও বিএনপির নিরষ্কুশ কর্মী ও সমর্থক ছিল।

 

ভোটের সংখ্যার হিসাব প্রমাণ দেয় এসব এলাকায় বিএনপির কতো শক্তি রয়েছে। এছাড়াও নির্বাচনে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, জেলা বিএনপি সর্বশক্তি নিয়ে নেতাকর্মীরা ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিল। বোনাস হিসেবে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ গ্রহণ করে।

 

এমনকি জেলা বিএনপির সর্বশেষ অস্ত্র সাবেক সাংসদ ও জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভূইয়া ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি এসে বেশ কিছুদিন অবস্থান করে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহন, দিক নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধান করছেন। জেলা বিএনপি সব অস্ত্র প্রয়োগের পরও তাদের দুর্গের পতন রোধ করতে পারেনি।

 

নির্বাচনী ফলাফল জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্ভুদ্ধ অনেককে ভাবিতে তুলছে। তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন খাগড়াছড়িতে দলের দুর্গগুলো কী হাতছাড়া হতে চলেছে। এ বিষয়ে তাঁরা দলের উর্ধ্বতন নেতাদের গভীরভাবে পর্যালোচনা করার তাগিদ দিয়েছেন। আবার অনেকে যুক্তি দিয়ে এও বলছেন, বিএনপির দুর্গ এখনো অক্ষত আছে।

 

নির্বাচনে বিএনপির মূল প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীলীগ এসব কেন্দ্রে তেমন ভোট পায়নি। স্বতন্ত্রপ্রার্থী বেশী ভোট পেলেও তা সাময়িক। মূলত অর্থ ও বাঙালি চেতনাকে (পার্বত্য এলাকায় বাঙালিত্ব) পুঁজি করে স্বতন্ত্রপ্রার্থী সাময়িকভাবে এ ভোট পেয়েছে। আদর্শের ভিত্তিতে এসব এলাকার মানুষ এখনো জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্ভুদ্ধ।

 

উল্লেখ্য; এবারের পৌরসভা নির্বাচনে খাগড়াছড়ি পৌরসভায় বিএনপি ধানের শীষ প্রতীক তৃতীয় স্থান অর্জন করে। ৯ হাজার ৪১৪ ভোট পেয়ে স্বতন্ত্রপ্রার্থী রফিকুল আলম (মোবাইল প্রতীক) দ্বিতীয় বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন।

 

৫ হাজার ৫৩৭ ভোট পেয়ে আওয়ামীলীগের প্রার্থী শানে আলম (নৌকা প্রতীক) দ্বিতীয় এবং ৩ হাজার ১২৫ ভোট পেয়ে বিএনপির প্রার্থী এ্যাড. আবদুল মালেক (ধানের শীষ প্রতীক) তৃতীয় স্থান অর্জন করে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত