বান্দরবানে বর্নাঢ্য আয়োজনে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে তিন দিন ব্যাপী বোমাং সার্কেলের ঐতিহ্যবাহী খাজনা আদায় উৎসব রাজপুন্যাহ মেলা। এটি হচ্ছে বোমাং সার্কেলের ১৭ তম রাজার ১৩৮তম রাজ পুন্যাহ।
সকাল ১০টায় ঐতিহ্যের ধারাবাহিক নিয়ম অনুযায়ী রাজা ইঞ্জিনিয়ার উ চ প্রু রাজ পোষাকে সজ্জিত হয়ে তরবারী হাতে বাদ্যের তালে তালে উজির নাজীর ও সৈন্য সামন্ত নিয়ে রাজার মাঠে নির্মিত রাজ সিংহাসনে আরোহন করেন। এসময় রাস্তার দুই পাশে শত শত নারী-পুরুষ ও প্রজাসাধারন দাঁড়িয়ে রাজাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
মেলায় প্রধান অতিথি ছিলেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। বিশেষ অতিথি ছিলেন,পার্বত্য বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি।
অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, সেনা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নকিব আহাম্মদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মোঃ মিজানুল হক চৌধুরী, পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান, বান্দরবানের সাবেক পুলিশ সুপার কামরুল আহসানসহ সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্টানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও রাজ পরিবারের সদস্যরা।
এসময় রাজা সিংহ খচিত সিংহাসনে বসে একে একে ১শ ৯টি মৌজার হেডম্যান,কারবারীসহ প্রজা সাধারনের কাছ থেকে অনুষ্ঠানিকভাবে জুমের খাজনা(কর) আদায় করেন।
এসময় বোমাং সার্কেলের মৌজা হেডম্যান,কারবারীসহ প্রজা সাধারন নগদ টাকা,জুমে উৎপাদিত নান শষ্য,মুরগী ও চোলাই মদসহ বিভিন্ন উপঢৌকন রাজার বাহাদুরের হাতে তুলে দেবেন।
এদিকে, রাজার হাতে খাজনা তুলে দিতে এবং রাজাকে এক নজর দেখতে জেলার বিভিন্ন উপজাতীয় পল্লী থেকে হাজার হাজার নারী পুরুষ বান্দরবানে অবস্থান নিয়েছে।
এছাড়াও রাজপুন্যাহ মেলা দেখতে বান্দরবানে ভীড় জমিয়েছে হাজার হাজার দেশী বিদেমী পর্যটক। ৩দিন ব্যাপী রাজপুন্যাহ মেলা উপলক্ষ্যে প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও থাকছে সার্কাস,মৃত্যুকুপ,হাউজি খেলা,পপসংগীতসহ নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
তবে রাজপুণ্যাহ মেলা শুরুর প্রথম দিনে বোমাং রাজা উচপ্রু জুমের কর আদায়ের জন্য সিংহাসনে বসার আগ মুহুর্তে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ও কনকনে শীতে রাজপুণ্যাহর পুরা আনন্দকে কিছুটা ম্লান করে দিয়েছে। বৈরি আবহাওয়ার কারনে জনসমাগম কম।
এদিকে রাজ পুন্যাহ মেলাকে ঘিরে সকল ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করেছে প্রশাসন।
বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিক উল্যাহ জানান,রাজপুন্যাহ মেলায় সকল ধরনের পরিস্থিতি মোকারেলায় তিনস্থরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়াও ১৫টি সিসি ক্যামরার মাধ্যমে পুরো মেলাকে নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি রাশেদ খান মেনন বলেন, ব্রিটিশ শাসন আমল থেকে পার্বত্য তিন জেলায় রাজ প্রথার সৃষ্টি। আর রাজ প্রথার সৃষ্টি লগ্ন থেকে রাজারা আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রজাদের কাছ থেকে জুমের খাজনা আদায় করে আসছে।
বর্তমানে এই রাজ পুন্যাহ মেলা সকল সম্প্রদায়ের মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে। তিনি আরো বলেন,পার্বত্য এলাকার রাজাদের রাজ্য নেই,নেই কোন অর্থ এবং শাসন করা ক্ষমতা। রাজ প্রথা ধরে রাখতে রাজাকে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ,বিচারিক ক্ষমতাসহ নানা সুযোগ সুবিধা দিতে হবে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.