গোলগাল মিষ্টি চেহারার দীপা চাকমা হাসিমুখে ক্রেতাদের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাপড় দেখাতে ব্যস্ত। তার মধ্যে বিরক্তির কোনো চাপ নেই। দেখে মনে হয় কতই না উপভোগ করছেন তাঁর পেশাটাকে। কিন্তু বিক্রয়কর্মীদের দুঃখের কাহিনী কারো মনে কি ধ্বনিত হয়? তাঁদের স্বপ্ন-সাধ সমাজ নামের শক্ত দেয়ালে আঁচড়ে পড়ে ভাঙছে আর ভাঙছে।রাঙামাটি শহরের টেক্সটাইল মার্কেটের ‘একটি বিক্রয় কেন্দ্রের’ কর্মী দীপা চাকমার উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে এলেও হাসিমুখেই সব কাজ করতে হয় তাকে। জীবন যুদ্ধ আজ তাঁকে এ স্থানে নিয়ে এসেছে।তিনি জানেন এ যুদ্ধে হেরে গেলে চলবে না। কারণ তাঁর এবং ছোট ভাইবোনদের অনেক ফরমায়েশ মিটাতে হয় এ আয় দিয়ে।দীপা চাকমার মতো আরও অনেক নারী বিক্রয়কর্মী বিভিন্ন বিক্রয় কেন্দ্রে কাজ করছেন। তাঁদের সুখ-দুঃখ, চিন্তা-ভাবনা আর স্বপ্ন-সাধ হয়তো ভিন্ন।
কিন্তু প্রতিটি বিক্রয়কর্মী যে জীবন যুদ্ধে অবতীর্ণ তা তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।কাজের এক ফাঁকে দীপা চাকমা জানান, ‘আমার স্বপ্ন ছিল উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে আজ আমি এ স্থানে। স্বপ্ন পুরোপুরি স্বার্থক করতে না পারলেও সুযোগ হলে শিক্ষায় আরও কিছুদূর এগিয়ে যাওয়া আমার ইচ্ছা রয়েছে।’তিনি আরও জানান, রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজে এইচএসসি পর্যন্ত পড়লেও পরীক্ষা উত্তীর্ণ হতে পারেননি। বাবা মারা যাওয়ার পর নামতে হয়েছে জীবন যুদ্ধে। তাঁরা পাঁচ ভাইবোন। তবে রাঙামাটির শহরতলী রাঙাপানি গ্রামের একটি বাড়িতে ছোট দুই ভাইবোনকে নিয়ে থাকেন দীপা চাকমা।তিনি জানান, বিক্রয়কর্মীর চাকরিতে প্রচুর খাটুনি থাকলেও বেতন খুবই কম। তাই আবার যে এইচএসসি পরীক্ষা দেবেন তার সে সামর্থ্য হচ্ছে না। খাওয়া, বাড়ি ভাড়া আর ছোট ভাইবোন ও নিজের চাহিদার কিছুটা অংশ মেটাতে বেতনের টাকা শেষ হয়ে যায়।দীপা চাকমা জানান, একটি মেয়ে রাত আটটা থেকে নয়টা পর্যন্ত বাইরে থাকবে তেমন মানসিকতা আমাদের সমাজে এখনো গড়ে উঠেনি। অথচ আমাদের বিক্রয় কেন্দ্রে কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরতে হয় ওই সময়ে। তাই মাঝে মাঝে কটূ মন্তব্যও শুনতে হয়। কেউ চিন্তা করে দেখে না আমাদের একটা পেশা আছে। আর তার দায়িত্বও আছে।টেক্সটাইল মার্কেটের বিক্রয়কর্মীরা জানান, তাদের অনেকে অবজ্ঞা করেন। কিন্তু তারা যে জীবনের প্রয়োজনে, পরিবারের প্রয়োজনে এ পেশায় এসেছেন এবং আগামীর স্বপ্ন বুনে চলেছেন তা কেউ চিন্তা করছে না। টেক্সটাইল শিল্পের মতো ক্রম সম্প্রসারমান ব্যবসায় বিক্রয়কর্মীদের দুঃখ গাঁথা সমাজ কি মূল্যায়ন করবে?
–হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.