রাজস্থলীতে আটক আরাকান আর্মির শীর্ষ নেতা রেনিন সোয়েকে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ

Published: 14 Oct 2015   Wednesday   

গ্রেফতারকৃত মিয়ানমারে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির শীর্ষ নেতা ডাঃ রেনিন সোয়েকে বুধবার বিকালে রাঙামাটির বিজ্ঞ অতিরিক্ত জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট সাবরিনা আলীর আদালতে তোলা হয়েছে। এতে আদালতের কাছে রিনেন সোয়ের বিরুদ্ধে পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন জানালে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

পুলিশ জানায়, সন্ত্রান দমন আইন ও বিদেশী অনুপ্রেবশ আইনের মামলার পলাতক আসামী আরাকান আর্মির শীর্ষ নেতা ডাঃ রেনিন সোয়ে রাজস্থলী উপজেলার ইসলামপুরস্থ আদর্শ নতুন পাড়ায় অবস্থান করছেন বলে জানতে পারেন যৌথ বাহিনীর কর্মকর্তারা। এক পর্যায়ে বিজিবির মেজর শাব্বির আহমেদ,মেজর কামাল পাশা ও রাজস্থলী থানার ওসি ওহিদ উল্লাহ সরকারের নেতৃত্বে বুধবার ভোর রাতে সাড়ে তিনটার দিকে অভিযান  চালিয়ে ইসলামপুরস্থ আদর্শ নতুন পাড়ার নির্মানাধীন একটি মসজিদ থেকে ডাঃ রেনিন সোয়েকে গ্রেফতার করা হয়।  এসময় তার কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ, ৪১ হাজার ভারতীয় মুদ্রা,নেদারল্যান্ডের পাসপোর্ট, ১টি আইডি কার্ড, ৬টি ক্রেডিট কার্ড ও ২টিমোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে রাজস্থলী থানায় নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বিরুদ্ধে বৈদেশিক মুদ্রা রাখার দায়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনের রাজস্থলী থানায় রেনিন সোয়ের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এদিকে, কোর্ট ইন্সপেক্টর মোমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে রাঙামাটি জর্জকোর্টের অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাবরিনা আলীর আদালতে গ্রেফতার ডাঃ রেরিন সোয়েকে হাজির করে পুলিশ ১০দিনের রিমান্ড  আবেদন জানায়। এতে বিজ্ঞ আদালত বুধবার থেকে ৫দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

উল্লেখ্য, গত ২৬ আগষ্ট বান্দরবানের থানছি উপজেলা বড়মদকে ১০টি এরাবিয়ান ঘোড়াকে আটককে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও মিনায়নমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার সূত্র ধরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ২৮ আগষ্ট যৌথ বাহিনীর সদস্যরা রাজস্থলী উপজেলা নয়া পাড়ার কলেজ রোডস্থ এলাকায় ডা. রান নিন সোয়ের প্রায় ৩ কোটি টাকার ব্যয়ে নির্মিত সুরম্য তিন তলা বাড়ীতে অভিযান চালায়। অভিষানের সময় বাড়ী থেকে আরাকান আর্মির পোশাক, ২টি ঘোড়া ও অন্যান্য সরঞ্জামাদিসহ আরাকান আর্মির সহযোগী সদস্য অংওয়েন রাখাইনকে আটক করে। পরে ৩০ আগষ্ট বাড়ীর দুই কেয়ারটেকার মংচু অং মারমা ও চুইস অং মারমাকে যৌথ বাহিনী আটক করে। এ ঘটনায় ডা. রেনিন সোয়ে ও আটক তিন জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইন ও বিদেশী নাগরিক আইনে রাজস্থলী থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়। ইতোমধ্যে আটক তিন জন রাঙামাটি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বর্তমানের তারা রাঙামাটি  কারাগারে আছেন। 

রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(অপরাধ) শহীদ উল্লাহ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ ও বিজিবির সদস্য রাজস্থলী উপজেলার মুসলিম পাড়ার নির্মানধীন একটি মসজিদ থেকে বুধবার ভোর রাত সাড়ে ৩টার দিকে আরাকান আর্মির শীর্ষ নেতা ডা.রেনিন সোয়ে-কে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এর আগে গ্রেফতারকৃত আরাকান আর্মির সদস্য ও বাড়ীর দুই কেয়ার আদালতের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি জবানবন্দীতে তারা বলেছেন ডা.রেনিন সোয়ে একজন আরাকার আর্মির নেতা। থানচির বড় মদকে বিজিবির সদস্যরা যে ১০টি ঘোড়া আটক করেছেন সেগুলো রাজস্থলী ডা.রেনিন সোয়ে বাড়ীতে লালন-পালন করা হয়েছিল এবং সেখান থেকে ঘোড়াগুলো সীমান্তে নিয়ে পাচার করা হচ্ছিল বলে তারা অদালতের কাছে স্বীকার করেছেন।

তিনি আরও জানান, ডা.রেনিন সোয়ের যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইজ বুক রয়েছে তার মনিটরিং করা হচ্ছে।

একটি সূত্র জানিয়েছে,গ্রেফতারকৃত ডা.রেনিন সোয়ে রাজস্থলী থানায় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ের স্বীকার করেছেন যে, ২৮ আগস্ট রাজস্থলীতে তার সুরম্য প্রাসাদে যৌথ বাহিনী অভিযান চালানোর পরে তিনি প্রথমে রাঙামাটি ও বান্দরবানের গহীন অরন্যে প্রবেশ করে মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় পালিয়ে যান। সেখান থেকে তিনি ভারতের নয়া দিল্লীতে অবস্থান করছিলেন।

সূত্র আরও জানায়, গত ২ অক্টোবর ডাঃ রেনিন সোয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করলে পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে পুলিশ তার গতিবিধির উপর তীব্র নজর রাখে। এরপর তিনি ১৩ অক্টোবর তিনি রাজস্থলীতে প্রবেশ করে রাজস্থলী সদর থেকে ৫কিলোমিটার দুরে অবস্থিত ইসলামপুর এলাকায় অবস্থান করছেন বলে গোপণ সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে  যৌথ বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে এসে রাজস্থলীতে ২০ বছরের অধিক সময় আগে ১৯৯৬ সালে তিনি রাজস্থলী বাজারের কাছাকাছি তাইতং পাড়া এলাকার হ্লাচিং নূ মারমাকে বিয়ে করেন এবং দুই কন্যা সন্তানের পিতা হন। রাজস্থলীতে ৫ থেকে ৬ বছর অবস্থান করার পর তিনি বাংলাদেশের নাগরিত্ব নিয়ে নেদারল্যান্ডে যান। সেখানে তিনি নাগকরিত্ব পাওয়ার স্ত্রী কন্যাদের নেদাল্যন্ডে রেখে পুনরায় রাজস্থলী চলে আসেন। এবং ৩-৪ বছর আগে কোটি টাকারও অধিক টাকা ব্যয়ে একটি বিলাস বহুল ত্রিতল বাড়ী নির্মান করেন। এর পর থেকে তিনি বাংলাদেশে প্রায় সময়ই আসা যাওয়া করে থাকতেন এবং অনেক সময় ঢাকা, কক্সাবাজার, বান্দরবান ও রাজস্থলীতে অবস্থান করেছিলেন।

সূত্র মতে, ডা. রেনিন সোয়ে আরাকান আর্মির উচ্চ পদস্থ  একজন কর্মকর্তা। ডাঃ রেনিন সোয়ে দীর্ঘ দিন যাবত রাজস্থলীতে অবস্থান করে আরাকান আর্মির পক্ষে নানান কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। 
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত