লামায় জি.এম. ঝিরি বহুমূখী প্রকল্পের কৃষি উৎপাদনে আশানুরুপ সফলতা

Published: 09 May 2015   Saturday   

বান্দরবানের লামা উপজেলায় পতিত পাহাড়, অনাবাদি জমি ও পাহাড়ি ঝিরি ও ছড়াতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ, পরিকল্পিত ফলদ বাগান ও বনায়ন করে সাফল্য অর্জন করেছে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা হামেলা হোসেন ফাউন্ডেশন। এ সংস্থারটি উৎপাদিত ফলমুল ও মাছ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখন ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে। এ বছর এ সংস্থাটি মৌসুমী ফল লিচু ও আম উৎপাদনের বাম্পার ফলন ঘটিয়েছে লামা উপজেলায়। এ সংস্থাটির সাফল্য দেখে এলাকার লোকজনও বনায়ন, ফলদ বাগান ও মাছ চাষে এগিয়ে আসতে শুরু করেছে।

 

সম্প্রতি সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বান্দরবানের লামা উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের পূর্ব চাম্বি আমতলী এলাকায় ২০০৫ সাল থেকে ১শ একর পাহাড়ি জমি মালিকদের (জয়নাল মেম্বার) থেকে শেয়ারের ভিত্তিতে ৩০ বছরের জন্য লিজ নিয়ে হামেলা হোসেন ফাউন্ডেশন। সংস্থাটির নিজস্ব অর্থায়নে গড়ে তোলে মৎস্য ও কৃষি চাষ, পশুপালন এবং পর্যটন। বর্তমানে এ প্রকল্পের শতাধিক স্থানীয় লোকজনের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। লিজ নেয়া এসব জমির মধ্যে ২০ একর জমিতে (জি.এম. ঝিরিতে) বাধঁ দিয়ে মাছ চাষ, ৫০ একর জমিতে আম, ১৫ একর জমিতে লিচু এবং ১৫ একর জমিতে  চাষ করা হয়েছে বনায়ন।


জি.এম. ঝিরি বহুমূখী প্রকল্পটির নির্বাহী পরিচালক মোঃ কামাল উদ্দিন (রাবার কামাল) জানান,এলাকার চাহিদা পূরনের পর বছরে প্রায় ৫০ মেট্রিক টন আম্রপালী, ১৫ মেট্রিক টন লিচু, ১শ মেট্রিক টন জ্বালানী কাঠ ও ১০ মেট্রিক টন নানান জাতের মাছ দেশের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে।


তিনি আরও জানান, ২০০০ সালের পর থেকে বান্দরবানের লামায় বাণিজ্যিকভাবে নিজামপুর এগ্রো প্রোডাক্টস্ লিমিটেড, গোল্ডেল ভ্যালি এগ্রো প্রোডাক্টস্ লিমিটেড ও মেরিডিয়ান এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড -এর আম্রপালীর চাষ শুরু হয়। এ পর্যন্ত বান্দরবানে ব্যক্তি মালিকানা এবং সরকারী উদ্যোগে প্রায় লক্ষাধিক একর জমিতে আম চাষ করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, আমের পাশাপাশি লিচু চাষও লাভজনক হওয়ায় অনেকে আমের সাথে সাথে লিচু, মালটা ও সফেদা চাষ করা হচ্ছে।

 

সরেজমিনের সময় কথা হয় বাগানে শ্রমিক কৃষক মনছুর আলীর সাথে। তিনি জানান, পূর্বচাম্বী  এলাকার লোকিজন দরিদ্র। এলাকায় কাজ না থাকায় পার্শ্ববর্তী লোহাগাড়া উপজেলায় গিয়ে কাজ করতে হয়।  সেখানকার স্থানীয় শ্রমিকের জন্য আমরা সবসময় কাজ পেতাম না।  অনেক দূরে গিয়ে কাজ করা কষ্টকর। বর্তমানে এলাকায় এসব বাগান হওয়ায় শ্রমজীবি লোকজন বাড়িতে বসে কাজ করতে পারছে। তাছাড়া নিয়মিত কাজ করার সুযোগ পাওয়ায় স্থানীয় লোকজন অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে। তবে এলাকার রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভাট, বিদ্যুৎসহ নানান সমস্যা থাকায় বাগানিরা উৎপাদিত মালামাল সঠিক সময়ে বাজারজাত করতে পারছেন না। এতে করে নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত  হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। 

 

পূর্বচাম্বী ওয়ার্ড মেম্বার শাহেব আলী জানান,  এ এলাকাটি অত্যন্ত দরিদ্র এলাকা। এসব কোম্পানী এবং বাগান মালিকরা  মাছ চাষ, ফলদ বাগান,ও বনায়ন করার কারণে সাধারন মানুষের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। অনাবাদী জমি আবাদের আওতায় এসেছে।

 

হামেলা হোসেন ফাউন্ডেশনের সদস্য জয়নাল মেম্বার জানান ,এ বছর জি.এম. ঝিরি বহুমূখী প্রকল্পে (মৎস্য, কৃষি, পশুপালন ও পর্যটন) আম্রপালী ও লিচুর ফলন আশানুরূপ হয়েছে। পর্বত্য এলাকায় উৎপাদিত ফরমালিন মুক্ত ফল ও পণ্যসমূহ দেশের আনাচে-কানাচে মানুষের হাতে পৌছে দিতে  সম্ভব হবে। তিনি আরও জানান, ১৯৯১ সালে জি.ই.সির মত একটি বিদেশী কোম্পনির চাকুরি ছেড়ে বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে বান্দরবানের লামায় রাবার চাষ ও আম বাগান আরম্ভ করি ১৯৯৩ সালে। আশাকরি  এ প্রকল্পের মাধ্যমে  স্থানীয়  শ্রমজীবি নারী-পুরুষরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

 

লামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রুস্তম আলী বলেন, হামেলা হোসেন ফাউন্ডেশন-এর জি.এম. ঝিরি বহুমূখী প্রকল্পটি আমার নজর কেড়েছে। পরিকল্পিত চাষাবাদে দিগুন ফলন উৎপাদন করা যায়। কৃষি কাজের উন্নয়নে কারিগরী যে কোন সহযোগতিা দেয়া হবে।


লামা উপজেলার নির্বাহী অফিসার সামসুন নাহার সুমি বলেন, কামাল উদ্দিন (রাবার কামাল) ও অধ্যাপক কাজী শাহাদাত হোসাইনের মত উদ্যোক্তারা ব্যক্তির উদ্যোগে যেভাবে লামা উপজেলায় কৃষি বিপ্লব ঘটিয়েছেন তা অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য। এছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দারিদ্রতা দূরীকরণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জীবন যাত্রার নিরাপত্তা বিধানে হামেলা হোসেন ফাউন্ডেশন যুগোপযোগী ভূমিকা রেখে আসছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত