বান্দরবানে রাজগুরু বিহার এলাকায় বসবাসরত তিন পাড়ার শতাধিক পরিবার উচ্ছেদের আতঙ্কের!

Published: 04 May 2015   Monday   

বান্দরবান শহরের  রাজগুরু (খিয়ংওয়া কিয়ং) বিহারের ভিটা এলাকায় বসাবাসরত শতাধিক পরিবার এখন উচ্ছেদ আতঙ্কে রয়েছে!

 

বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি পরিচয় দিয়ে ক্যাং ভিটা এলাকা হতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসা প্রায় ১শত পনের পরিবারকে উচ্ছেদ করার প্রক্রিয়া চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান থায়াইচপ্রু মাষ্টারের বিরুদ্ধে। ফলে বিপাকে পড়েছেন তিন গ্রামের শতাধিক পরিবার। বিহার পরিচালনা কমিটির এমন দুর্ব্যবহার ও সেচ্ছাচারিতার  কারণে এলাকারবাসীরা অতিষ্ট হয়ে ওঠেছে। আর এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেকোন সময় এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশষ্কা করছেন এলাকাবাসী।

 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৭৬ সালে তখনকার বান্দরবানের প্রয়াত রাজগুরু বিহারের ভান্তে উসুমানা মহাথেরো ও বোমাং সার্কেলের বোমাংরাজা মংশৈপ্রু চৌধুরী এলাকার গরীব ও ভূমিহীনদের ক্যাং এলাকায় বসবাস করার জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ইদানিং সময়ে বিহার পরিচালনা কমিটির পরিচয় দিয়ে থোয়াইচপ্রু মাষ্টার, বাচমং মারমা ও মংশৈপ্রু মারমাসহ কয়েকজন প্রভাবশালী লোকের বিরুদ্ধে ক্যাং ভিটা এলাকায় বসবাসরত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মারমাদেরকে উচ্ছেদ করার হুমকি ও ভয় ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 

কলা পাড়ার কারবারী ক্যহ্লাচিং মারমা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ক্যাং ভিটা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে এসেছি। কখনও কোন ঝামেলা ছিলনা। কিন্তু হঠাৎ করে জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান থায়াইচপ্রু মাষ্টারসহ বেশ কয়েকজন মিলে বিহার পরিচালনা কমিটির পরিচয় দিয়ে বর্তমানে তিন পাড়ার প্রায় ১১৫টি পরিবারকে রাজগুরু বিহারে এক জরুরী সভা ডেকে তিন পাড়ার লোকজনদের নোটিশ জারি করে ক্যাং ভিটা এলাকা ত্যাগের জন্য হুমকি প্রদানসহ প্রকাশ্যে  নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এতে করে তিন পাড়ার ১১৫টি পরিবার উচ্ছেদ আতঙ্কে এবং চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

 

অভিযোগ উঠেছে, হিার পরিচালনা কমিটির নাম ভাগিয়ে কথিত ওই তিন জনের যাগসাজশে  শহরের ডিসি বাংলোর সামনে, পার্বত্য ভিক্ষু পরিষদের পাশে সংরক্ষিত ক্যাং ভিটার জায়গা গুলি  প্রভাবশালী নেতাদের কাছে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

 

এদিকে এলাকায় বসবাসরত জাদী পাড়া, কলা পাড়া ও টাউন হল পাড়াবাসীর লোকজন গত ২৫ এপ্রিল বোমাং রাজার বরাবরে বিহার পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ নিয়ে  একটি আবেদন করেছেন।

 

আবেদন পত্রের সূত্রে জানা যায়, রাজগুরু ক্যাং ভিটার উপর বসবাসরত তিন পাড়াবাসী নিরীহ লোকদেরকে জোর পূর্বক স্বঘোষিত ক্যাং কমিটি অবৈধ ভাবে জায়গা ভাড়ার জন্য চুক্তিপত্র করা ও অন্যথায় ক্যাং ভিটা হতে উচ্ছেদ করার ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদানের বিষয়টি  উল্লেখ রয়েছে।

 

থোয়াইসাপ্রু মারমা (কালিসে) কারবারী ও টাউল হল পাড়া মংছোহ্রী মারমা জানান, ওই কমিটির লোকজনের উদ্দেশ্য হলো নিরীহ লোকদের উচ্ছেদ করতে পারলে নিজেরা  জায়গাগুলো দখল করে আবার ওই প্রভাবশালী নেতাদেরকে কোটি কোটি টাকার দামে বিক্রি করে রাতারাতি কোটিপটি বনে যাবেন। তাছাড়া ওই প্রভাবশালী কমিটির লোকজন রাতের অন্ধকারে যে কোন সময় অগ্নিসংযোগ ও আক্রমণ করে উচ্ছেদ করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁরা।       

 

এ ব্যাপারে বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি  থোয়াইচপ্রু মাষ্টারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, ক্যাং ভিটা এলাকার মোট জায়গার পরিমাণ ছিল ১৩ একর ৫৭শতক । কিন্তুু বিভিন্ন সময়ে জায়গাগুলো অবৈধভাবে দখল হয়ে গিয়ে অর্ধেক পরিমাণের জায়গাও নেই এখন। তাই আমি রাজগুরু বিহার কমিটির দায়িত্ব পাওয়ার পর  থেকে ভান্তের সাথে পরামর্শ করে বেদখল হয়ে যাওয়া জায়গা উদ্ধর করার জন্য কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নামে আদালতে মামলা করেছি। আর আমার বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ করেছে তারা সবাই ওই মামলার আসামি।

 

এদিকে এলাকার সচেতন মহলের মতে, ক্যাং ভিটা এলাকায় এই ভূমিহীন পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করা হলে প্রভাবশালীরা এসব ভূমি দখল করে নিতে পারে। এতে করে ভূমি হারাবে ক্যাং কমিটি, আর হারিয়ে যেতে পারে বিহারের বিভিন্ন স্থাপনাও।

 

অন্যদিকে ক্যাংভিটা এলাকায় বসবাসকারীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৬ এপ্রিল নোটিশ জারির মাধ্যমে তাঁর অনুমতি বা পরামর্শ ছাড়া  কোন প্রকার চুক্তি বা আর্থিক লেনদেন না করার নির্দেশ দিয়েছেন বোমাং রাজা বোমাংগ্রী উচপ্রু চৌধুরী ।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত