কাউখালীতে নিহত ৬ষ্ঠ শ্রেনী ছাত্রী সামশুন নাহারের লাশ দাফন

Published: 04 May 2015   Monday   

রাঙামাটি কাউখালীর নাইল্যাছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেনীর শিক্ষার্থি সামসুর নাহারের (১২) ময়না তদন্ত শেষে লাশ দাফন সম্পন্ন হয়েছে রোববার। 

 

সোমবার বিকালে নিহত সামসুর নাহারের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় স্বজনদের সাথে। দুইভাই দুই বোনের মধ্যে নাহার ছিল মেজো, আর আগেই আরেক ছোটবোন মারা গেছে।  ৫ বছর বয়সি ভাই জাহেদ উঠোনে একাই খেলছিল। ছোট চাচার ঘর উঠোনের উত্তর পাশেই। এ প্রতিবেদককে দেখে ছুটে আসেন চাচী ঝর্না বেগম(২৬)। তিনি আক্ষেপ করে বললেন মেয়েটা সুস্থ ছিল। কেন যে এমন হলো !

 

তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জানান, সন্ধ্যায় মামার হাত থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছিল নাহার। ঘরে ঢুকেই বাবা বাবুল মিয়া ‘লেখা নাই পড়া নাই’ এই বলে পায়ের জুতা খুলে মেয়েকে মার দেয়। এর পরেই সড়কে গিয়ে নাহার খিঁচুনি দিয়ে মাটিতে পড়ে যায়। বিষ পান করেছে মনে করে তার মুখে কাকড়লের মুথা ছেঁচে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। অবস্থা বেগতিক হলে প্রতিবেশিরা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

 

মৃত্যুর খবর পেয়েই ঢাকা থেকে ফিরে এসেছেন চাচা জাফর ইসলাম (৩৬)। তিনি জানান ‘মৃত্যুর দুইদিন আগে সামসুর নাহার তার সাথে ঢাকায় যেতে বায়না ধরেছিল। তখন ঢাকায় নিয়ে গেলে আজ এমনটা হতোনা’।

 

প্রায় ঘন্টাখানেক অপেক্ষার পর বাড়িতে এসে নিহতের মা নাছিমা বেগম(৩২) জানান, সন্তানকে মেরে ফেলার জন্য কেউ লালন পালন করে না। ঘটনার দিন তার স্বামী মেয়েকে জুতো দিয়ে মেরেছিল। কিন্তু কি কারণে মারা গেল বুঝতে পারছেন না। তবে তিনি এ প্রতিবেদকের হাত টেনে ধরে বলেন ‘আমাদের বাঁচান’। অবশ্য প্রায় আড়াই ঘন্টা অপেক্ষা করে বেশ ক’জনকে দিয়ে খবর পাঠানোর পরেও সামসুর নাহারের বাবা বাবুল মিয়ার সাক্ষাত পাওয়া যায়নি।

 

প্রতিবেশিরা কেউ এ বিষয় নিয়ে কোন কথা বলতে চাননি। তবে মোঃ শাহজাহন, পারভেজ সহ অনেকেই বলছেন ময়না তদন্ত রিপোর্ট আসলেই থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন।

 

সামসুর নাহার উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের উত্তর নাইল্যাছড়ির জনৈক বাবুল মিয়ার কন্যা। নিহতের পরিবারের সদস্যরা এঘটনাকে বিষপানে আত্নহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে রাত সাড়ে দশটার দিকে পুলিশ এসে লাশ নিজেদের হেফাজতে নিয়ে মর্গে পাঠায়। মৃত্যু নিয়ে পুলিশ ও ডাক্তারের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেশিদের দেয়া তথ্য মতে হত্যভাগ্য কিশোরীকে তার পিতা-মাতা প্রায় সময় মারধর করতো। শনিবার সন্ধ্যায়ও মারধর করার পর মুমূর্ষ অবস্থায় সামশুন নাহারকে প্রতিবেশী জাহাঙ্গীর ও খোকন কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। এরপরই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুরতুজা রশীদ ঐ কিশোরীকে মৃত ঘোষনা করলে পিতা-মাতা ও স্বজনেরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পালিয়ে যান।

 

কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুরতুজা রশীদ বলেছেন প্রাথমিকভাবে বিষপানের কোন আলামত পাওয়া যায়নি। অবশ্য কাউখালী থানার এস,আই সামশুজ্জমান জানান, বিষপানে ওই কিশোরী আত্নহত্যা করেছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে। সন্দেহ হওয়ায় লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলেই দোষিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 --হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত