গুইমারায় নিহত ৩জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর,১৪৪ ধারা বলবৎ

Published: 29 Sep 2025   Monday   

খাগড়াছড়িতে স্কুল ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষনের ঘটনার প্রতিবাদে ও জড়িতদের গ্রেফতারের দাবীতে জুম্ম ছাত্র-জনতা ব্যানারে ডাকা সড়ক অবরোধকালীন সহিংসতা ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের জারি করা খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা বলবৎ রয়েছে। তবে নতুন করে আর কোন সহিংস ঘটনা না ঘটলেও উদ্ভূত পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি।
ঘটনার একদিন পর গুইমারায় সহিংসতায় গুলিতে নিহত তিন জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। নিহতরা হলেন রামসু বাজার এলাকার আলাকাই মারমার ছেলে তৈইচিং মারমা (২০), আমতলী পাড়ার থুহলাঅং মারমার ছেলে আথুইপ্রু মারমা (২১) ও চেং গুলি পাড়ার হাসু মারমার ছেলে আখ্রাউ মারমা (২২)। নিহতরা সবাই খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার হাফছড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন ডা. মো. ছাবের জানান, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। এরপর মরদেহ স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) আহসান হাবীব পলাশ বলেন, সহিংসতায় ১০ জন আহত হয়েছেন। এদের একজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বাকিদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ।
এদিকে জুম্ম ছাত্র জনতার ডাকা অর্নিদিষ্টকালের জন্য সড়ক অবরোধ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা-খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম খাগড়াছড়ি সড়কে সোমবার দুপুর ১২টা থেকে সড়ক অবরোধ শিথিল করেছে। গুইমার ঘটনায় আহতদের উন্নত সুচিকিৎসা এবং নিহতদের লাশ সৎকারের সুবিধার্থে জুম্ম ছাত্র জনতার ফেসবুক পেইজ থেকে এ শিথিলের ঘোষনা দেওয়া হয়। জুম্ম ছাত্র জনতার ফেসবুক মিডিয়া সেল পেইজ-এ বলা হয়, গত রোববার খাগড়াছড়ির গুইমারায় সহিংস ঘটনায় আহত জুম্ম ভাই-বোনদের উন্নত সুচিকিৎসা ও নিহতদের লাশের সৎকারের সুবিধার্থে ঢাকা-খাগড়াছড়ি এবং চট্টগ্রাম খাগড়াছড়ি সড়কে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দুপুর ১২টা থেকে সড়ক অবরোধ শিথিল থাকবে । শুধুমাত্র এ দুই সড়ক বাদে বাকি সড়কগুলোতে অবরোধ যথারীতি বলবৎ থাকবে। তবে অবরোধ তুলে নেওয়ার ফলে খাগড়াছড়ি থেকে দুরপাল্লার গাড়ি ছেড়ে গেছে। এতে আরো বলা হয়, একইসাথে আহতদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে একটি চিকিৎসক দল আসবেন। তাদের আগমনে যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে সর্বস্তরের সহযোগিতারও কামনা করা হয়েছে।
অন্যদিকে সোমবার বিকালে খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর এলাকায় বিজিবির খাগড়াছড়ি সদর হেডকোয়াটারে প্রেসব্রিফিং করেছেন বিজিবি‘র খাগড়াছড়ি সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল মো: আব্দুল মোত্তাকিম। এসময় তিনি বলেন, খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি উত্তরণে বিজিবি বেসামরিক প্রশাসনের সাথে নিরলসভাবে কাজ করছে। উদ্ভুত অবস্থা যাতে অবনতি না ঘটে সেজন্য ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপের কারণে কেউ বড় ধরণের নাশকতার সুযোগ পায়নি। সেনাবাহিনী, অন্যান্য বাহিনীর সদস্য ও প্রশাসনের চেষ্টায় পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। তিনি আরো বলেন, পাহাড়ি-বাঙ্গালী শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে বিজিবির তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। তবে ধৈর্য ও সহনশীলতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিজিবির কঠোর অবস্থানের কারণে খাগড়াছড়ি ও আশপাশ এলাকায় কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অবরোধটি প্রত্যাহার করা হলেও ১৪৪ ধারাও তুলে নেয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, সীমান্তে কঠোর নজরদারি রাখা হয়েছে যতে ওপাশ থেকে অবৈধ অস্ত্র ঢুকতে না পারে। পাহাড়ে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে।
প্রেসব্রিফিংকালে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি ব্যাটালিয়নের (৩২ বিজিবি) অধিনায়ক অধিনায়ক লে: কর্ণেল কামরান কবির উদ্দিন, সহকারি পরিচালক মো: হাসানুজ্জামান ও ইউছুপ আলী।
অপরদিকে, সোমবার ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগ নিরন চাকমার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় পাহাড়িদের ওপর সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলা তদন্তের জন্য জাতিসংঘের অংশগ্রহণে একটি উচ্চ পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনসহ আট দফা দাবি জানিয়েছেন। অন্যান্য দাববিগুলোর মধ্য রয়েছে সিঙ্গিনালায় কিশোরীকে গণধর্ষণের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার এবং দ্রুত বিচার আদালতে বিচারের মাধ্যমে সাজা প্রদান,গুইমারায় রামেসু বাজারে হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তি প্রদান, নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও আহতদের দ্রুত সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করা, খাগড়াছড়ির মহাজনপাড়া ও য়ংড বৌদ্ধ বিহার এলাকায় হামলাকারী সেটলারদের গ্রেফতার এবং শাস্তি প্রদান করা, গ্রেফতারকৃতদের অবিলম্বে ও নিঃশর্তে মুক্তি দেয়াসহ ইত্যাদি। বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়,রোববার গুইমারার উপজেলায় মারমা অধ্যুষিত রামেসু বাজারে পাহাড়িদের ওপর বিনা উস্কানিতে হামলা ও গুলি চালানো হয়। এতে পাহাড়ীদের দোকানপাট ও বসতবাড়িতে ব্যাপক লুটপাট চালানোর পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া দেয় সেটেলাররা। হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে অন্তত ৩ জন পাহাড়ি নিহত হয়েছেন। এছাড়া কয়েকজন গুরুতর আহতসহ অন্তত ৩০ জন পাহাড়ি আহত হয়েছেন। হামলাকারী সেটলাররা পাহাড়িদের অন্তত ১৬টি বসতবাড়ি, ৫০টি দোকান, মাহেন্দ্র গাড়ি ১টি ও ১৬টি মোটর সাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত