পাহাড়ে স্থানীয় প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনসহ প্রতিনিধি মনোনয়ন,আইন প্রণয়নের দাবী

Published: 18 Aug 2024   Sunday   

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নসহ সাংবিধানিকভাবে এবং অন্যান্য আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে আদিবাসীদের অধিকার সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের কাছে দাবী জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটি।

একই সাথে সংগঠনের পক্ষ থেকে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনসহ প্রতিনিধি মনোনয়ন, আইন-নীতি প্রণয়ন, পরিমার্জন ও প্রাসঙ্গিক প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের সাথে পাহাড়-সমতলের সচতেন আদিবাসী ছাত্র, যুব-নাগরিক সমাজের সাথে আলোচনাসহ আট দফা দাবী জানানো হয়েছে।

রোববার পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ানের সই করা গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবী জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে সাধারণ পাহাড়ি ছাত্র-যুবকদের গ্রাফিটি অংকনসহ অন্যান্য বিক্ষোভ ও শান্তিপূর্ণ কার্যক্রমের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলা হয়, ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানের পরবর্তীতে আদিবাসী জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সকল স্তরের মানুষের অংশ গ্রহণে রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কারের সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে রাষ্ট্র গঠন পর্যায়ে এ যাবত আদিবাসীদের অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করা হয়নি। এখন অতীতের সেই ভুল শোধরানোর সুযোগ এসেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সমতল অঞ্চলের আদিবাসীরা যুগ যুগ ধরে অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী ব্যবস্থার শিকার হয়ে আসছে। স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত কোনো সরকারই স্থানীয়, আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ের নীতিনির্ধারণী পদে আদিবাসী প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিবর্গকে যথাযথভাবে অর্ন্তভুক্ত করেনি। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় আদিবাসীদের স্বকীয় পরিচিতি ও অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি বলে স্বশাসনের দাবীতে পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র সংগ্রাম হয়েছিলো। এ সমস্যাকে রাজনৈতিকভাবে সমাধানের উপায় হিসেবে তৎকালীন সরকার ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অন্যতম মৌলিক চেতনা ছিল রাষ্ট্র পরিচালনায় পাহাড়ি আদিবাসীসহ সকল সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে এ এলাকায় টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা। কিন্তু এ চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি। পার্বত্য অঞ্চলে সুশাসন ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠন করা হলেও সেগুলোকে ক্ষমতায়ন করা হয়নি।

আইন অনুযায়ী এ অঞ্চলের স্থায়ী অধিবাসীদের প্রত্যক্ষ ভোটে এ পরিষদগুলো এখনো গঠন করা হয়নি। এ প্রতিষ্ঠানগুলো এ যাবত ক্ষমতাসীন দলগুলোর নত-র্কমীদের পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে পার্বত্য অঞ্চলের জনগণ তাদের পছন্দের লোককে স্থানীয় শাসন তথা রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে নির্বাচিত করার সুযোগ পায়নি। ক্ষমতার অপব্যবহার, সর্বব্যাপী দুর্নীতি ও দলীয়করণের কারণে পাহাড়ের জনগণ কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। একই সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত করাসহ পাহাড়ি আদিবাসীদের মৌলিক অধিকার খর্ব করার বিভিন্ন পাঁয়তারা চালু রয়েছে।

বিবৃতিতে সচেতন আদিবাসী ছাত্র, যুব ও নাগরিক সমাজের সাথে যথাযথ আলোচনা ও সম্মতির সাপেক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিয়োগ, ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরনার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু পুর্নবাসন বিষয়ক টাস্কর্ফোসের চেয়ারম্যান নিয়োগ, অন্তর্বর্তীকালীন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগ, নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন, ১৯০০ সালের আইন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন-১৯৯৮ এবং পার্বত্য জেলা পরিষদ (সংশোধনী) আইন-১৯৯৮ সম্পর্কিত সিভিল মামলাসমূহের শুনানি স্থগিত রাখার জন্য এটর্নি জেনারেলকে যথাযথ নির্দেশনা প্রদান, বিধি প্রণয়নসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ সাপেক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনকে কার্যকর করা, কার্যপরিধি পরিবর্তনের মাধ্যমে ‘ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরর্ণাথী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু পুনর্বাসন বিষয়ক টাস্কর্ফোস’ কর্তৃক স্বীকৃত ও অস্বীকৃত ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরর্ণাথী ও অভ্যন্তরীণ পাহাড়ি উদ্বাস্তুদের অন্তর্বর্তীকালীন ও চূড়ান্ত পুনর্বাসন নিশ্চিত করা, সরকারি চাকুরীতে ৫ শতাংশ আদিবাসী কোটা ও আদিবাসী শিশুদের জন্য স্ব স্ব মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন বা নীতির আলোকে সাংবিধানিকভাবে দেশের আদিবাসীদের পরিচয় ও তাঁদের অধিকারের স্বীকৃতি প্রদান করা এবং অন্যান্য আইনি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বৈষম্যহীন ও মৌলিক অধিকার সম্বলিত একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করা, যাতে দেশের সকল আদিবাসীসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, শিশু ও নারীরা নিরাপদে বসবাসের অধিকার লাভ করতে পারে তার দাবী জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে সমতলের আদিবাসীদের প্রতিনিধিত্ব ও তাঁদের উত্থাপিত দাবিদাওয়াগুলোকে আমলে নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জোর দাবিও জানানো হয়েছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত