বিলাইছড়ি উপজেলার দূর্গম বড়থলী ইউপি চেয়ারম্যান আতোমং মারমাকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় শুক্রবার রাতে সাহ্লাসিং মারমাকে প্রধান আসামী করে ৮ জনের নাম উল্লেখসহ আরো অজ্ঞাত ১০ থেকে ১২ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদিকে শনিবার বান্দরবানের রুমা উপজেলা সদরে আতোমং মারমার দাহক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
জানা গেছে, গেল ২১ মে ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জেএসএস সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী বীরোত্তম তংচংগ্যা ও আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী অভিলাষ তংচংগ্যা নির্বাচন করেন। এতে নির্বাচনে বিজয়ী বীরোত্তম তংচংগ্যা পক্ষে কাজ শেষে বড়থলি মারমা পাড়ায় তার আত্বীয়ের বাসায় অবস্থানকালে গুলি করে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এতে তিনি হাতে,পায়ে ও পাছায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুত্বর আহত হন। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে বান্দরবানের রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এর পর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বান্দরবান জেলা সদর হাসপাতালে ও পরে চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি আইসিইউ-তে দীর্ঘ নয় দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৪৮ মিনিটে মারা যান।
এদিকে, শুক্রবার আতোমং মারমার লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্তের পর তার স্বজনরা বান্দরবানের রুমা উপজেলায় নিয়ে যায়। শনিবার রুমা উপজেলা সদরের ২নং ওয়ার্ড এর কেন্দ্রীয় শ্নশানে তার দাহক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিলাইছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আকতার হোসেন জানান, শুক্রবার রাতে নিহতের বড় ভাই ক্যাচিমং মারমা বিলাইছড়ি থানায় বাদী হয়ে ৩০২/৩৪ ধারায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। যার মামলা নং -০১। তবে তদন্তের স্বার্থে এজাহারে উল্লেখিত বিবাদীদের নাম ও সংখ্যা জানানো যাচ্ছে না।
বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিরোত্তম তংচংগ্যা জানান, আতোমং হত্যার মামলায় বিলাইছড়ি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে সাহ্লাসিং মারমাসহ ৮ জনের নাম উল্লেখসহ আরো ১০ থেকে ১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, আতোমং মারমা লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর শুক্রবার রাতে বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলা হয়ে বড়থলি নেওয়া হবে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জানান, যেহেতু ২১ মে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দিনে ঘটনাটা ঘটেছে, তাই এটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও পরিকল্পামাফিক বলে মনে হচ্ছে। তিনি আরো জানান, চিকিৎসাধীন অবস্থায় আতোমং মারমা স্বীকারোক্তি দিয়েছেন তার ইউনিয়নের ওয়ার্ড মেম্বার ওয়েভার ত্রিপুরাসহ কয়েকজন মিলে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। কারণ ওয়েভার ত্রিপুরা বর্তমানে ওয়ার্ড মেম্বার এবং মৃত আতোমং মারমার ইউপি নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রতিদ্বন্ধীতা করবেন বলে শুনেছি। তাছাড়া আতোমং মারমা জেএসএস বড়তলী ইউনিয়নের সভাপতি এবং ওয়েভার ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি। তাই তাদের মধ্যে রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত দ্বন্ধও থাকতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পরের দিন ১৯ মার্চ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সুরেশ কান্তি তঞ্চঙ্গ্যাকেও দূর্বৃত্তরা গুলি করে হত্যা করে। এ নিয়ে বিলাইছড়ি উপজেলায় দুটি নির্বাচনে নির্বাচনী সহিংসতায় দুই জন হত্যাকান্ডের শিকার হলেন।
--হিবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.