তীব্র তাপদহে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে স্বাভাবিকের চেয়ে আট ফুট পানি কম রয়েছে। পানির উচ্চতা কমায় কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে একটি ইউনিট চালু রেখে মাত্র ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এদিকে রাঙামাটিতে বিদ্যূতের ঘন ঘন লোডশেডিং অন্যদিকে তীব্র তাপদাহে শহরবাসী জনজীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে।
কর্ণফূলী পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র জানায়, ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্পন্ন ৫টি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় ৪টি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন চালু থাকা ১টি ইউনিট থেকে প্রতিদিন ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। হ্রদে রুলকার্ভ অনুযায়ী বর্তমান সময়ে হ্রদে পানি থাকার কথা ৮৩ দশমিক ৬০ ফুট মিন সী লেভেল (এমএসএল)। মঙ্গলবার হ্রদে পানির উচ্চতা ছিল ৭৫ দশমিক ৭৮ ফুট এমএসএল। যা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৮ ফুট কম রয়েছে। হ্রদে পানির উচ্চতা ৬৮ ফুট এমএসএলের নিচে নেমে গেলে বিপদসীমা হিসেবে ধরা হয়। তখন কেন্দ্রে সবকটি ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
অন্যদিকে, তীব্র তাপদাহে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি আস্বাভাবিকভাবে কমে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে জেলার দশ উপজেলার মধ্যে বরকল, বাঘাইছড়ি, জুড়াছড়ি, নানিয়ারচর, লংগদু ও বিলাইছড়ি উপজেলার সাথে নৌ চলাচলের মারাতœক বিঘœ ঘটছে। পানি কমে যাওয়ায় হ্রদের বুকে জেগে উঠেছে ছোট বড় অসংখ্য দ্বীপ বা ডুবোচর। ফলে এসব উপজেলায় বসবাসরত লোজনের যাতায়াতের অবর্ননীয় দূর্ভোগের পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব উপজেলায় উৎপাদিত পণ্য চাষী থেকে ব্যবসায়ীরা সঠিকভাবে বাজারজাত করতে না পারায়ও লোকসানে পড়তে হচ্ছে। রাঙামাটি লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মঈন উদ্দীন সেলিম জানান, হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় রাঙামাটি সদরের সাথে ৬ উপজেলার মধ্যে ৪টি উপজেলায় লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। লংগদু ও বরকল উপজেলায় কোন রকমে লঞ্চ চললেও বিভিন্ন স্থানে আটকে যাচ্ছে। লঞ্চ বন্ধ থাকায় ওই উপজেলাগুলোতে পণ্য আনানেওয়া দ্বিগুন বৃদ্ধির পাশাপাশি লোকজনের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
অপরদিকে, রাঙামাটি শহরে শুধুমাত্র ১০মেগাওয়াট বিদ্যূতের চাহিদা থাকলেও মাত্র ৫০ শতাংশ বিদ্যুতের লোড দেওয়া হচ্ছে। যার কারণে ঘন ঘন লোডশেডিং মুখে পড়তে হচ্ছে। এতে শহরবাসী বিদূতের চরম ভোগান্তি অন্যদিকে তীব্র তাপদহে শহরবাসী জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে।
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের জানান, রুলকার্ভ অনুযায়ী হ্রদে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৮ ফুট কম। পানি না থাকায় একটি মাত্র ইউনিট চালু রেখে প্রতিদিন ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। তবে সহসায় ভারী বৃষ্টি হলে পানি বৃদ্ধি পেলে বিদ্যুৎ উৎপাদনও বাড়বে। তিনি আরো জানান, কাপ্তাই হ্রদে সম্পূর্ণ প্রকৃতির উপর নির্ভর। এখানে আমাদের কিছুই করার নেই।
উল্লেখ্য,১৯৬০ সালে বিদ্যূৎ উৎপাদনের জন্য রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্নফ‚লী নদীর উপর বাঁধ দেওয়া হয়। এ বাঁেধর ফলে ২৫৬ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে বিশাল জলধারা সৃষ্টি হয়।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.