আগামী ৭ জানুয়ারী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। মঙ্গলবার দলটির রজত জয়ন্তী (২৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী) উপলক্ষে আয়োজিত শিশু-কিশোর র্যালি, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচীর অনুষ্ঠানে নেতৃবৃন্দ এ আহ্বান জানিয়েছেন।
ইউপিডিএফের প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের প্রধান নিরন চাকমার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইউপিডিএফের রজত জয়ন্তী (২৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী) উপলক্ষে খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলায় বিশাল এক শিশু রালি অনুষ্ঠিত হয়। এতে সহস্রাধিক শিশু, কিশোর-কিশোরী অংশগ্রহণ করেন। র্যালিটি পানছড়ি সদরের পুরোনা বাস টার্মিনাল থেকে শুরু হয়ে পানছড়ি কলেজ মাঠে গিয়ে শেষ হয়। এছাড়া খাগড়াছড়ি জেলা সদর, মানিকছড়ি উপজেলা সদর, রাঙামাটির কতুকছড়ি, নানিয়ারচরে শিশু র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিশু র্যালি ছাড়াও খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা, পানছড়ি, গুইমারা, রামগড়, মানিকছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি; রাঙামাটি জেলার কতুকছড়ি, কাউখালী, বাঘাইছড়িসহ বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভা, পতাকা উত্তোলন, অস্থায়ী শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মতবিনিময়, চা চক্র ইত্যাদি কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
এসব অনুষ্ঠানে নেতৃবৃন্দ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমান পরিস্থিতিতে যেখানে জনগণের ওপর সর্বত্র শাসক গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ, নিপীড়ন ও খবরদারী বিরাজমান, যেখানে ন্যুনতম গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই, বরং আইন-শৃংখলা বাহিনীর পষ্য খুনীদের উৎপাতে জনজীবন বিপযস্ত এবং যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক কাযক্রম চালাতে দেয়া হচ্ছে না, সেখানে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। গত ১১ ডিসেম্বর পানছড়িতে ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী দিয়ে চার ইউপিডিএফ নেতাকে হত্যার মাধ্যমে এই কথার সত্যতা আবার প্রমাণিত হয়েছে। শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম নয়, সারা দেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোন পরিবেশ নেই। তাই প্রধান বিরোধী দলসহ গণতন্ত্রমনা সকল দল এই নির্বাচন বর্জন করছে।
নেতৃবৃন্দ আগামী ৭ জানুয়ারী অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন, ভোটদানে বিরত থাকুতে, ভোট কেন্দ্রে না যেতে, মূল্যাবান সময় নষ্ট না করতে, কোন প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ গ্রহণ না করা, কাউকে ভোট দানে উৎসাহিত না করা, অন্যকে ভোট দানে বিরত থাকতে নিরুৎসাহিত করা, গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সংগ্রাম করা ও একজন ভোটার হিসেবে প্রহসনের নির্বাচন বর্জন করে নাগরিক ক্ষমতা’ প্রয়োগ করে অত্যাচারী সরকার ও দালালদের মুখে চপেটাঘাত করার আহ্বান জানান।
ইউপিডিএফ সভাপতির বিবৃতিঃ
একই বিবৃতিতে ইউপিডিএফের সভাপতি প্রসিত খীসা পার্টির কর্মী, সমর্থক ও জনগণের উদ্দেশ্যে দেওয়া এক বার্তায় বলেন, জেল-জুলুম, মামলা-হুলিয়া, ষড়যন্ত্র-অপপ্রচার, গুপ্ত হামলা-হত্যা এককথায় অবর্ণনীয় দমন-পীড়ন মোকাবিলা করে ইউপিডিএফ ২৫ বছর ধরে অবিচলভাবে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই সংগ্রাম জারি রেখেছে। এ সংগ্রামে কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ের বেশ ক’জন সম্ভাবনাময় প্রতিশ্রুতিশীল সংগঠক নেতা-কর্মীসহ ৩৫৬ জন আত্মবলি দিয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা ইউপিডিএফ বরদাস্ত করবে না। তিনি সকল হুমকি রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ইউপিডিএফের পতাকাতলে সমবেত হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা ইউপিডিএফ বরদাস্ত করবে না উল্লেখ করে বিবৃতিতে প্রসিত খীসা অভিযোগ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে অতীতে বিভিন্ন সময়ে দালাল (‘দুলো’) বেঈমান আবির্ভূত হলেও সন্তু লারমার মতো কেউ এত ধূর্ততার সাথে আঁতাত করে আইন-শৃংখলা বাহিনী ও শাসক গোষ্ঠীদের নীলনক্সা বাস্তবায়নে পারদর্শিতা দেখাতে পারেনি। কুসুমপ্রিয়-প্রদীপ লাল হত্যা (৪ এপ্রিল ১৯৯৮) থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক ১১ ডিসেম্বর বিপুল-লিটন-সুনীল-রুহিন হত্যায় তার নির্দেশ ও আইন-শৃংখলা বাহিনীর সাথে যোগসাজশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এ যাবৎকালে সন্তু লারমার মতো কেউ আর পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে এত ক্ষতি করতে পারেনি। তিনি হলেন সাক্ষাৎ মীর জাফর ও বিভীষণ। আন্দোলন গুটিয়ে অলিখিত চুক্তি ও আত্নসমর্পণ করে আঞ্চলিক পরিষদের গদি লাভের বিনিময়ে পাহাড়ের সংগঠন ও আন্দোলন ধ্বংস করেছেন। জনসংহতি সমিতি দু’বার (১৯৮২ ও ‘২০১০) ভেঙেছেন, প্রতিবাদী ছাত্রসমাজ মোকাবিলা করতে ছাত্রবেশী ধান্দাবাজদের মাস্তান—গুণ্ডা (৩০ জুন ১৯৯৭) বানিয়েছেন, পাহাড়ের সুবিধাবাদী দালালদের কুড়িয়ে নিয়েছেন ।
--প্রেস বিজ্ঞপ্তি।