বিলাইছড়িতে নৌ চলাচলে ভোগান্তি,স্বাভাবিক করতে উদ্যোগ

Published: 20 Apr 2023   Thursday   

চলতি মৌসুমে র‍াইখ্যাং নদীর খাল অতিরিক্ত  শুকিয়ে যাওয়ায়  বিলাইছড়িতে নৌ চলাচলে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে যাত্রী ও নৌ চালকদের ভোগান্তি  চরমে পৌঁছেছে। রয়েছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ। 

 
বিলাইছড়ি উপজেলার সাথে রাঙ্গামাটি সদরের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম হলো নৌ পথ। প্রতি বছর ফাল্গুন-চৈত্র ও বৈশাখ -জৈষ্ঠ্য মাসের মাঝামাঝি সময়ে রাইখ্যাং নদীর খাল অতিরিক্ত শুকিয়ে যাওয়ার কারনে যাত্রী ও নৌ চালকদের  সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এতে করে যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া গুনার পাশাপাশি সময়েরও অপচয় হয়। এবং ডাবল পরিবহনের কারণে বিলাইছড়িতে  দ্রব্যমূল্যের উপর ও প্রভাব পরে। 
 
চলতি মৌসুমে বিগত বছরগুলোর তুলনায় অতিরিক্ত পানি শুকিয়ে যাওয়ায় ও নদীতে চর জাগার কারণে যাত্রী ও নৌ চালকদের ভোগান্তি  সব বছরগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে। এতে করে নৌ চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বিলাইছড়ির সাথে ফারুয়া অনেক আগেই স্বাভাবিক  বোট চলাচল বন্ধ রয়েছে। প্রতি বছরের মত বর্তমানে  রাঙ্গামাটি থেকে এস ব্যান্ট পর্যন্ত  লঞ্চে আসার পর ছোট কান্ট্রি বোটে করে বিলাইছড়িতে আসতে হচ্ছে। এতে করে যেখানে স্বাভাবিক অবস্থায় বিলাইছড়ি হতে রাঙ্গামাটি পর্যন্ত ভাড়া ছিল সাধারণ  ৮০ টাকা ও কেবিনে ১০০ টাকা। সেখানে এখন দুই বোটে ১৩০ টাকা গুনতে হচ্ছে। এবং বিলাইছড়ি থেকে কাপ্তাই ছোট বোটে করে সর্বোচ্চ ১২ জন যাত্রীর ১৮০০ টাকা করে দেওয়া লাগতেছে। যার স্বাভাবিক ভাড়া ছিল ৮০ টাকা। 
 
জানা যায়, ২-৩ বছর আগে বিলাইছড়ি -রাঙ্গামাটির ভাড়া ছিল ৫৫ টাকা ও বিলাইছড়ি -কাপ্তাই ভাড়া ছিল ৫০ টাকা। সেই থেকে করোনার সময় কিছু বাড়ানো হলো এবং দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় তখনও বাড়ানোর পর স্বাভাবিক ভাড়া রাঙ্গামাটি ও কাপ্তাই ৮০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। তবে বিলাইছড়ি- রাঙ্গামাটি লঞ্চে কেবিনে গেলে ১০০ টাকা দিতে হয়। 
 
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন  যাত্রী অভিযোগ করেন, বিলাইছড়িতে একবার ভাড়া বাড়ালে তা আর কমেনা। এবং পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ভাড়া বাড়ানো হয়। তারা আরও বলেন, পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বোট বেজে যাওয়ায় মানবিক কারণে  এস ব্যান্ট থেকে বিলাইছড়ি বাজার ঘাট পর্যন্ত ৬০ টাকা দেয়া যায়, কিন্তু এস ব্যান্ট থেকে রাঙ্গামাটি পর্যন্ত অর্ধেক রাস্তায় ৭০ টাকা ভাড়া বেশি নেয়া হচ্ছে। কারণ বিলাইছড়ি থেকে রাঙ্গামাটির ভাড়া হচ্ছে ৮০ টাকা। বোট মালিকরা টিকই তাদের ভাড়া নিচ্ছে, মাঝখানে যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হচ্ছে। 
 
বিলাইছড়ির বোট চালক জুয়েল চাকমা জানান, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এই বছর তারাতাড়ি পানি কমে যাওয়ায় ৮-৯ জনের অধিক যাত্রী নেওয়া যায়না। এবং বোট চড়ে উঠে গেলে সবাইকে নেমে ঠেলতে হয়। তিনি আরও জানান, বোট বেজে গেলে তেল বেশি লাগে, কিন্তু যাত্রীরা অনেক সময় বেশি ভাড়া দিতে চাই না।
 
বিলাইছড়ি বাজার ব্যবসায়ী কল্যান সমিতির সভাপতি জানান, বিলাইছড়ি-কাপ্তাই ১৭০০-১৮০০ টাকা কমে বোট ছাড়েনা। তাছাড়া মালামাল আনার ক্ষেত্রে ডাবল পরিবহনের জন্য খরচ বেশি পরছে। যাতে করে বিলাইছড়িতে দ্রব্যমূূল্য বাড়ছে। তিনি জানান, আমাদের ব্যবসায়ীদের দাবি আগের মত সময় সূচি অনুযায়ী বোট ছাড়া হোক। ভাড়া কিছুটা বেশি নিলেও ভোগান্তি কমবে। তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম থেকে মালামাল আনতে গেলে কাপ্তাই  জেটি ভাড়া বাবদ বস্তা প্রতি ৫০-১০০ টাকা পর্যন্ত দেয়া লাগে। নিয়ম অনুযায়ী বিলাইছড়ি থেকে মালামাল নিয়ে গেলে জেটি ভাড়া নেওয়ার কথা। তাই একদিকে ডাবল পরিবহন, অন্যদিকে জেটির ভাড়া নেওয়ার কারণে বিলাইছড়িতে দ্রব্য মূল্যের দাম বেড়ে যায়। 
 
বিলাইছড়ির লাইন ম্যান সাগর চাকমা জানান,  গত বছরের চাইতে এই বছর পানি বেশি কমার কারণে নৌ চলাচলে ভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি জানান, বিলাইছড়ি-কাপ্তাই লাইনটা আমরা নিয়ন্ত্রণ করি। এবং তার সাথে বিলাইছড়ি-এস ব্যান্ট পর্যন্ত  আমাদের নিয়ন্ত্রণে, তবে রাঙ্গামাটি পর্যন্ত সেটা রাঙামাটি থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ভরা মৌসুমে বিলাইছড়ি-কাপ্তাই ৮০ টাকা নেয়া হয়। তবে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বর্তমানে সর্বোচ্চ ১২ জন যাত্রী নিয়ে ১৮০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। বাড়তি ভাড়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি জানান  বোট চড়ে উঠে গেলে তেল বেশি খরচ হয়, তাছাড়া বেশি লোকও নেয়া যায়না। তিনি আরও জানান, চালকদের অভিযোগ বোট বেজে গেলে যাত্রীরা নামতে চাইনা, অনেক যাত্রী নাকি গালাগালি করে। তিনি জানান, আশারবানী হলো গতকাল (১৯ এপ্রিল) থেকে  ৪০ দিনের কর্মসূচির লোকজন দিয়ে চরগুলো খনন করার কারনে কিছুটা ভোগান্তি কমবে। তবে বৃষ্টি হলে সেই  মাটিগুলো আবার খালে গিয়ে পড়বে। আমরা প্রতিটি বোট থেকে ৫০ টাকা করে উত্তোলন করতেছি। কাজকরা লোকজনকে চা-নাস্তা খাওয়ানোর জন্য, এবং বাঁশও কিনতে হচ্ছে। 
 
রাঙ্গামাটি লঞ্চ মালিক সমিতির সদস্য ও কাজল কোম্পানির মালিক কাইয়ুম উদ্দিন জানান, রাঙ্গামাটি লঞ্চ মালিক সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভাড়া নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন,  অন্যান্য রুটের তুলনায় বিলাইছড়ির কম ভাড়া নেয়া হয়। সরকারি কিলোমিটার হিসাবে ভাড়া নিলে ৮০ টাকা থেকে আরও ভাড়া বাড়তি নিতে হবে। তবে সরকারি হিসাব অনুযায়ী রাঙ্গামাটি-বিলাইছড়ি কত কিলোমিটার ধরা তার সঠিক  জবাব দিতে পারেন নাই। সমিতির অফিসে গিয়ে দেখার কথা বললেন। 
 
১ নং বিলাইছড়ি ইউপির চেয়ারম্যান ও বিলাইছড়ি বোট মালিক সমিতির সেক্রেটারি সুনীল কান্তি দেওয়ান জানান, আমি ইউএনও স্যারকে প্রস্তাব দেওয়ার পর, তিনি সম্মতি জ্ঞাপন করলে দূর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের ৪০ দিনের কর্মসূচির লোকজনদের দিয়ে নদী ড্রেসিং করা হচ্ছে। তিনি জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড বেশ কয়েক বছর যাবত নদী ড্রেসিং করার জন্য সার্ভে করে গেলেও, এখনো কাজ শুরু করতে পারেনি। লাস্ট ১/২ মাস আগেও একবার সার্ভে করে গেছে। বাড়তি ভাড়ার বিষয়ে তিনি জানান, পানি কমে যাওয়ায় বেশি যাত্রী নেওয়া যাচ্ছেনা, তাই যাত্রীদের থেকে কিছু  বাড়তি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। তাছাড়া রাঙ্গামাটির লাইনটা আমাদের সমিতির নিয়ন্ত্রণে নেই। 
 
 
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, প্রতি বছর এই সময়ে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় নৌ চলাচল ব্যাহত হয়। এই বছর আগের বছরগুলোর তুলনায় আগেভাগে পানি শুকিয়ে যাওয়ার কারনে নৌ চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাই নৌ চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ৪০ দিনের কর্মসূচির লোকজন দিয়ে যেখানে বেশি চর জেগেছে সেসব জায়গাগুলোতে খনন করা হচ্ছে। তবে এটি পর্যাপ্ত নয়। তিনি এই বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতা কামনা করেন। এবং এই খাল খননের সাময়িক উদ্যোগের জন্য তিনি উপজেলার জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। 
--সম্পাদনা/সিআর.
 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত