পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার বলেছেন, পার্বত্য সমস্যা কোন অর্থনৈতিক সমস্যা নয় একটি রাজনৈতিক সমস্যা। তাই এ সমস্যাকে রাজনৈতিকভাবে শান্তিপুর্ণ উপায়ে সমাধান করতে হবে। আজ পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসকারীদের জীবনের নিরাপত্তা নেই। বর্তমান সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে নির্বাচনী ওয়াদা দিলেও রক্ষা করেননি।
শুক্রবার পার্বত্য চুক্তির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত গণ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি জেলা শাখার উদ্যোগে জেলা জিমনেসিয়াম মাঠে আয়োজিত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি জেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও সাবেকস সদস্য উষাতন তালুকদার। অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্যে দেন যুব ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি খান মাসুদুজ্জামান, আদিবাসী ফোরামের পার্বত্যাঞ্চল শাখার সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, এমএন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা, ডা. গঙ্গামানিক চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শান্তি দেবী তঞ্চঙ্গ্যা প্রমুখ। অনুষ্ঠানে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শত শত পাহাড়ী লোকজন অংশ নেন।
সমাবেশে আদিবাসী ফোরামের পার্বত্যাঞ্চল শাখার সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা বলেন, চুক্তি বাস্তবায়নে আর কত বছর অপেক্ষা করতে হবে? আমাদের দুর্ভাগ্য চুক্তির ২৫ বছরেরও পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়ন হয়নি। চুক্তি স্বাক্ষরকারী উভয় পক্ষ বসে চুক্তির কি কি বিষয় অবাস্তবায়িত রয়েছে সেগুলো ঠিক করে তার একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ করতে হবে সরকারকে। তিনি সবাইকে ধৈর্য্য ও ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসার আহŸান জানান।
যুব ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি খান আসাদুজ্জামান বাদল বলেন, চুক্তির প্রথম শর্তে পাহাড়ে মানুষের আতœপরিচয় দেওয়ার হয়নি সেখানে চুক্তির ৭২টি ধারাগুলোই অকার্যকর। পার্বত্য চুক্তি সই হয়েছে শান্তির লক্ষে কিন্তু পাহাড়ে শান্তি মিলেনি। তিনি চুক্তি বাস্তবায়নে সামনে অনেক লড়াই সংগ্রাম করতে হবে, যে লড়াই চুক্তি বাস্তবায়নে, দেশকে রক্ষা করা লড়াই।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার সরকারের উদ্দেশ্য বলেন, আপনারা বলেছেন চুক্তির ৭২টা ধারার মধ্যে ৪৮টি ধারা বাস্তবায়ন হয়েছে। এই ৪৮টা ধারা বাস্তবায়ন হয়েছে বলে আসছেন কত বছর ধরে? এর মধ্যে বেশীও হয়নি কমেওনি। শুধু ৪৮টায় ধরে রেখেছেন। বিশেষ শাসন ব্যবস্থা তো ১৯০০ সালে সালে ছিলো, চুক্তিতে জেলা পরিষদ পুলিশের কনষ্টেবল থেকে এসআই পর্ষন্ত নিয়োগ দিতে পারবে। কিন্তু পুলিশ নিয়োগের বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কানে গেলে নিয়োগ দেওয়া যাবে না বলে থাকেন। মনে হচ্ছে এখানে স্বাধীন পুলিশ হয়ে যাবে। এভাবে হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট দেখিয়ে ভুলিয়ে রাখছেন। সাংবিধানসহ নানান আইন যাচাই-বাছাই করে আপনরা চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। চুক্তি করেছেন অবশ্যই চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে। এখানে জেলা পরিষদে কোন ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার জেলার ক্ষমতার মালিক। পার্বত্য জেলা পরিষদ তো গম-চাউল ভাগ করে দেওয়ার মালিক আর দু-একটু শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারে। এছাড়া তো আর কোন ক্ষমতা নেই এসব পরিষদের। তিনি জুম্মদের জাতীয় ও জন্ম ভূমি অস্তিত্ব সংরক্ষণে পার্বত্য চুক্তির পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়নসহ আতœনিয়ন্ত্রাধিকার প্রতিষ্ঠায় বৃহত্তর আন্দোলন সংঠিত করার আহŸান জানান।
এদিকে চুক্তির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ইনষ্টিটিউট প্রাঙ্গনে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এতে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুই প্রæ চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্য মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত স্থানীয় কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাঙামাটি রিজিয়নের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারলে ইমতাজ উদ্দিন, রাঙামাটি বিজিবি সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল তরিকুলইসলাম,জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মুছা মাতব্বর প্রমুখ।
এর আগে রাঙামাটি সকরারী কলেজ ক্যাম্পাস থেকে শুরু হয়ে একটি বর্নাঢ্য র্যালী বের হয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ইনষ্টিটিউট প্রাঙ্গনে গিয়ে শেষ হয়। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.