পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) রাঙামাটি জেলা শাখার ২৩তম বার্ষিক শাখা সম্মেলন ও কাউন্সিল রোববার সম্পন্ন হয়েছে। এতে পুনরায় কুসুম তঞ্চঙ্গাকে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক জগদীশ চাকমা সাধারণ সম্পাদক এবং পিয়েল চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে মোট ২৭ সদস্য বিশিষ্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, রাঙামাটি জেলা শাখার নতুন কমিটি গঠন করা হয়।
পিসিপির জেলা শাখার তথ্য প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মেনন চাকমার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বার্তায় বলা হয়, স্থানীয় একটি রেষ্ট হাউসে আয়োজিত `জুম্ম জাতীয় অস্তিত্ব রায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে ছাত্র ও যুব সমাজ ইস্পাত কঠিন আন্দোলন গড়ে তুলি` শ্লোগানকে সামনে রেখে সন্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য সাধুরাম ত্রিপুরা (মিল্টন)। পিসিপির জেলা শাখার সভাপতি মিলন কুসুম তঞ্চঙ্গার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুমন মারমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি জেলা শাখার সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাগর ত্রিপুরা (নান্টু), হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ম্রানু সিং মারমা। সম্মেলন ও কাউন্সিলে পিসিপির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জগদীশ চাকমার সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি জিকো চাকমা।
সম্মেলনের প্রারম্ভে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আত্মবলিদানকারী সকল শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সন্মেলন শেষে শেষে মিলন কুসুম তঞ্চঙ্গাকে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক জগদীশ চাকমা সাধারণ সম্পাদক এবং পিয়েল চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে মোট ২৭ সদস্য বিশিষ্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, রাঙ্গামাটি জেলা শাখার নতুন কমিটি গঠন করা হয়। নবগঠিত পিসিপি রাঙামাটি জেলা শাখার কমিটিকে শপথনামা পাঠ করান পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি কাজল চাকমা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য সাধুরাম ত্রিপুরা (মিল্টন) বলেন, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ অনেক আশা আকাঙ্খা আর বিশ্বাস নিয়ে সরকারের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে উপনীত হয়েছিল। কিন্তু, দুঃখজনক হলেও সত্য যে আজ চুক্তির দুই যুগ পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু, চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়িত হয়নি। বরঞ্চ, অপারেশন উত্তরণের নামে পার্বত্য চট্টগ্রামে গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বদলে সেনা শাসন অব্যহত রয়েছে। অপারেশন উত্তরণের বদৌলতে পার্বত্য চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ সকল বিষয়ে এখানকার সেনা কর্তৃপ সিদ্ধান্ত -নির্ধারণী ভুমিকা পালন করে চলেছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চলেছে। তারই প্রমাণ হিসেবে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সপে কাজ করা জনসংহতি সমিতি, তার সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী আখ্যা দিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের, ধরপাকড়, ক্রসফায়ার, জেলে প্রেরণ, ক্যাম্পে আটক ও নির্যাতন, ঘরবাড়ি তল্লাশী ইত্যাদি নিপীড়ন -নির্যাতন জোরদার করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রনীতি যেরকম গনতান্ত্রিক হওয়ার কথা ছিল, সেই গনতান্ত্রিকতার ধারা থেকে বাংলাদেশ বহু যোজন দূরে রয়েছে। বহু সংস্কৃতির, বহু জাতির, বহু ভাষাভাষীর একটা সুন্দর দেশের স্বপ্ন এম এন লারমা দেখেছিলেন। তার সংসদীয় বক্তব্যগুলো থেকে তা প্রতীয়মান হয়। এম এন লারমার সেই স্বপ্নের দেশের বদলে আমরা আজকে স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশে ইসলামি সম্প্রসারণবাদ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে, উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটেছে। তার ফলে দেশে থাকা ৫০টির অধিক আদিবাসী জাতি তার সংস্কৃতি, তার কৃষ্টি, তার ভাষা হারাতে চলেছে। তাদের অস্তিত্ব আজ বিলীন হওয়ার পথে। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে আজকের পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীদের ডোর টু ডোর, ম্যান টু ম্যান গিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পিসিপির কেন্দ্রীয় সভাপতি সুমন মারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কিংবা পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন জাতির স্বাধীকার তথা অধিকার এসেছে, এই তরুণ ছাত্র সমাজের হাত ধরেই। সুতরাং, আজকের তরুণ ছাত্র সমাজ তার ঐতিহাসিক দায়িত্ব থেকে সরে আসতে পারেনা। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী অধিবাসীদের অধিকারের সনদ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে আজকের জুম্ম ছাত্র সমাজ পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। চুক্তি বাস্তবায়নে তিনি জুম্ম ছাত্র সমাজকে ইস্পাত কঠিন আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি, রাঙামাটি জেলা শাখার সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাগর ত্রিপুরা নান্টু বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জুম্ম অধ্যুষিত অঞ্চলের মর্যাদা হারাতে চলেছে। আমরা কি হারিয়ে যাব না টিকে থাকব, জুম্ম জনগণ আজ এমন একটি বাস্তবতায় দাড়িয়ে রয়েছে। আজকের তরুণ ছাত্র সমাজকে যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে। জুম্ম জনগণের ইতিহাস শুধুই হারানোর ইতিহাস উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে পাকিস্তান আমল, তৎপরবর্তীতে অধুনা বাংলাদেশে জুম্ম জনগণ সর্বদা নিষ্পেষিত, উপেতি ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে। এর থেকে উত্তরণের জন্য জুম্ম ছাত্র সমাজকে তার ঐতিহাসিক দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে বলে মতামত ব্যক্ত করেন।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ম্রানু সিং মারমা বলেন, ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধ স্থাপনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণকে উচ্ছেদের মাধ্যমে তাদের অস্তিত্ব বিলুপ্তকরণের যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল, সে ষড়যন্ত্র এখনো চলমান রয়েছে। সে ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের তরুণদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
--প্রেস বিজ্ঞপ্তি।