পার্বত্য ভিক্ষুসংঘ বাংলাদেশ’র প্রতিষ্ঠাতা ও ষষ্ঠ সংগীতিকারক রাজগুরু অগ্রবংশ মহাথেরোর ১৪তম মহাপ্রয়াণ দিবস উপলক্ষে বুধবার রাঙামাটিতে নানা কর্মসুচি পালন করেছে পার্বত্য ভিক্ষুসংঘ বাংলাদেশ।
রাঙামাটির বিভিন্ন বুদ্ধ বিহারে দিবসটি উপলক্ষে সকালে রাজগুরুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, রাজগুরুকে বন্দনা ও তাঁর অমরকীর্তি স্মরণে আলোচনা সভা ও বিভিন্ন মানবিক সেবা কার্যক্রম আয়োজন করা হয়।
রাজগুরুর ১৪তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে বুধবার সকালে কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া চেলাছড়া দশবল বৌদ্ধ বিহারে বিনামুল্যে চক্ষু চিকিৎসা সেবা, ডায়াবেটিস পরীক্ষা, মাক্স, চশমা, শীতবস্ত্র (কম্বল) ও ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে। চট্টগ্রামের লায়ন্স কাব, রয়েল কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতাল ও ফ্যাকো সেন্টার এবং চেলাছড়া দশবল বুদ্ধ বিহারের যৌথ আয়োজনে এসব মানবিক সেবা দেয়া হয়।
চেলাছড়া দশবল বুদ্ধ বিহার প্রাঙ্গণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য ভিক্ষুসংঘ বাংলাদেশের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক ও ছাবা বুদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ শুভদর্শী মহাথেরো। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন রয়েল কমিউিনিটি চক্ষু হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. নারায়ণ চন্দ্র দেবনাথ। চেলাছড়া দশবল বুদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ চাকমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো দেশনা দেন চট্টগ্রাম বিশ্বমৈত্রী বুদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ বিজয়ানন্দ মহাথেরো ও চেলাছড়া দশবল বুদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ গুণপ্রিয় থেরো।
রাজগুরু অগ্রবংশ মহাথেরোর ১৪তম মহাপ্রয়াণ দিবসে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা সেবা, মাক্স, চশমা, ওষুধ ও শীতবস্ত্র কম্বল বিতরণের মত মহতী উদ্যোগ নেয়ায় লায়ন্স কাব অব চট্টগ্রাম ও রয়েল কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান সেবাগ্রহণকারী লোকজন ও উপস্থিত ভিক্ষুসংঘের নেতৃবৃন্দ।
এতে দুই শতাধিক মানুষের ডায়বেটিস পরীক্ষা, চক্ষু চিকিৎসা, ওষুধ, চশমা ও মাক্স ও ৫০ পরিবারের মাঝে ৫০টি কম্বল, বিতরণ করা হয়। ডা. নারয়াণ চন্দ্র দেব নাথ, ডা. মুশফিক আহমেদ চৌধুরী ও ডা. এনায়েত হোসেনের নেতৃত্বে রয়েল কমিউনিটি হাসপাতালের একটি টিম বিনামুল্যে চিকিৎসা সেবা, ডায়াবেটিস পরীক্ষা ও রোগীদের বিভিন্ন পরামর্শ দেন এবং ওষুধ বিতরণ করেন।
পার্বত্য ভিু সংঘ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা চাকমা রাজগুরু অগ্রবংশ মহাথেরো ১৯১৩ সালে ২৩ জানুয়ারি রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার কুতুবদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বহু গ্রন্থ প্রণেতা অগ্রবংশ মহাথেরো ১৯৩৫ সালে প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেন এবং ১৯৩৯ সালে বৌদ্ধ ভিক্ষু হন। ১৯৪৮ সালে বৌদ্ধধর্মীয় ত্রিপিটক শাস্ত্রে বার্মার কামায়ুত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ এবং ১৯৫৪ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পালিতে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৪-৫৬ সালে তৎকালীন বার্মার রেঙ্গুনে অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ সংগীতিতে অংশগ্রহণ করেন। ওই সময়ই অগ্গমহাপন্ডি উপাধি লাভ করেন। ১৯৫৮ সালে চাকমা রাজগুরু পদে অভিষেক হয়। ২০০৪ সালের ১৯ জানুয়ারি মায়ানমার সরকার রাজগুরু অগ্রবংশ মহাথেরোকে ‘অগ্গ মহা সদ্ধম্মজ্যোতিকা ধ্বজ’ উপাধিতে ভুষিত করেন। ২০০৮ সালের ৫ জানুয়ারি রাঙামাটির চাকমা রাজ বিহারে তার মহাপ্রয়াণ ঘটে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.