ব্যাপক ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য এবং বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় খাগড়াছড়িতে চলছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান মাসোব্যাপী দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব । ২৪ ঘন্টার মধ্যে চীবর তৈরি করার পর তা ভিক্ষুদের দানের মাধ্যমে কায়িক, বাচনিক ও মানসিক পুণ্য সঞ্চয় হয় বলেই বৌদ্ধ শাস্ত্রে এই দানকে `শ্রেষ্ঠ দান` কিংবা দানোৎতম কঠিন চীবর(ভিক্ষুদের পরিধেয় বিশেষ কাপড়) দান বলা হয়। এবারের বৌদ্ধ নরনারীরা বলেছেন কোভিড-১৯ এর পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা রক্ষার জন্য ও প্রার্থনা করবেন তারা।
আষাঢ়ী পূর্ণিমার পর দিন থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের তিন মাসব্যাপী ওয়া বা বর্ষাব্রত (পালিতে উপোসথ) পালন শুরু হয়। এই তিন মাস বর্ষাব্রত পালনের পর বৌদ্ধ স¤প্রদায়ের মাঝে আনন্দের বার্তা বয়ে আনে প্রবারণা পূর্ণিমা। এই প্রবারনা পূর্ণিমার পর দিন থেকে বিহারে বিহারে শুরু দানোৎসব কঠিন চীবর দান। ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রথমে চরকার মাধ্যমে তুলা থেকে সুতা তৈরি করে, সুতা বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রং দিয়ে বেইনের মাধ্যমে তৈরী করা করা হয় কাপড় সেই কাপড় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় বস্ত্র চীবর বা (কাপড়) তৈরি করা হয়। এই চীবর পরের দিন বিকালে দায়ক-দায়িকারা উৎসর্গ (দান) করেন ভান্তেদের উদ্দেশ্যে।
খাগড়াছড়িতে প্রতিদিনই কোন না কোন বিহারে আয়োজন করা হচ্ছে এই কঠিন চীবর দানোৎসব এই দিনে শুধু চীবর দান নয় সাথে থাকে সংঘ দান অষ্ট পরিস্কার দান,কল্পতরু দান,বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পিন্ড দানসহ নানা বিধ দান। শুধু তাই নয় সকাল থেকে থাকে নানা পুজা বুদ্ধ পুজা ফুল পুজাসহ বিভিন্ন পুজা ও বিশ^ শান্তি ও তথা সকল প্রাণির হিত সুখ মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা ও সন্ধ্যায় প্রদীপ পুজা আর ফানুস উড়ানো। বুদ্ধ সময়ে বুদ্ধের মহা উপাসিকা বিশাখা এই কঠিন চীরব দান প্রর্বতন করেন। বুদ্ধ ধর্ম মতে এই দানে ফল অপরিসীম। এই চীবর শুধু ২৪ ঘন্টার মধ্যে তৈরি বলে কঠিন চীবর দান তা নয়। ভান্তেরা সীমা ঘর বা ঘ্যাং ঘরে গিয়ে মন্ত্র দ্বারা ও কঠিনে পরিনত করেন। এই দুই মিলে কঠিন চীবর দান।
তবে এই বছর কোভিড-১৯ ও সাম্প্রদায়িতা থেকে মুক্ত পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করবেন বৌদ্ধ নরানারীরা।
খাগড়াছড়িতে বৌদ্ধ নরনারীরা যাতে সুন্দর ও নিরাপদ ভাবে মাসব্যাপি কঠিন চীবরদান উদযাপন করতে পারেন সেজন্য প্রতিটি বৌদ্ধ বিহারে পুলিশী নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি পুলিশ মোঃ আব্দুল আজিজ। তিনি আরো জানান জেলার গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ বিহার খাগড়াছড়ি সদরের য়ংড বৌদ্ধ কিহার, ধর্মপুর আর্যবন বিহার ও পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুঠির এর চীবরদান অনুষ্ঠান গুলো তিনি নিজেই পরিদর্শন করেছেন।
এই বছর খাগড়াছড়িতে য়ংড বৌদ্ধ বিহার, ধর্মপুর আর্য বন বিহার, পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুঠিরসহ ১৮ টি শাখা বন বিহার ও অন্যান্য বৌদ্ধ বিহারসহ প্রায় ৬ শতাধিক বৌদ্ধ বিহারে এই কঠিন চীবর দানোৎসব পালন করা হবে।
মাসব্যাপী শুরু হওয়া এই চীবর দানের মাধ্যমে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে পূনর্জন্ম ও কর্মফলে বিশ্বাসী বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের কায়িক, বাচনিক ও মানসিক বাসনা পূর্ণ হবে এবং দেশ জাতি সকলে মঙ্গল বয়ে আনবে এমনটাই প্রত্যাশা বৌদ্ধধর্মালম্বীদের।
---হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/এ,ই