বৈসাবির সাজে উৎসবে মাতোয়ারা খাগড়াছড়ি

Published: 10 Apr 2015   Friday   

বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামে বসাবসরত পাহাড়ী-বাঙালীদের প্রাণের উৎসব ঐতিহ্যবাহী ‘বৈসু-সাংগ্রাই-বিজু (বৈসাবি)’ ও নববর্ষকে ঘিরে উৎসবে মাতোয়ারা এখন পাহাড় রাণী খাগড়াছড়ি। এ উৎসবকে ঘিরে তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানের পাহাড়ী পল্লীতে বইছে প্রাণের উচ্ছ্বাস। বৈসু, সাংগ্রাই, বিজু এই তিন নামের আদ্যাক্ষর নিয়েই বৈসাবি নামের উৎপত্তি।

 

চাকমা সম্প্রদায়ের ‘বিজু, মারমাদের ‘সাংগ্রাই’ ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ‘বৈসু’ ও চৈত্র সংক্রান্তি পালনের জন্য শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জে ও পাড়া-মহল্লায় ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সারাদেশে বাংলা বর্ষবরণ উদযাপিত হলেও প্রতিবছর চৈত্র মাসের শেষ ২ দিন এবং পহেলা বৈশাখে এ উৎসব পালিত হয়। পুরানো বছরের সকল দুঃখ, গ্লানি, হতাশাকে পেছনে ফেলে নতুন বছরে শান্তি-সম্প্রীতিতে সুখী সুন্দর জীবন গড়ার প্রত্যাশা নিয়ে পাহাড়িরা নানান আনুষ্ঠানিকতায় এই উৎসব পালন করে থাকে।

 

বৈসাবিকে ঘিরে পাহাড়ের হাটে-বাজারে এখন থেকেই কেনা-কাটার ধুম পড়েছে। কাপড় ও মুদির দোকানেই ভিড় হচ্ছে বেশি। প্রধান সামাজিক এই উৎসব উপলক্ষে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে বিভিন্ন সংগঠনের শোভাযাত্রা, ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার।

 

পার্বত্য জেলা পরিষদ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, মারমা উন্নয়ন সংসদ, মারমা  ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ, ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম, জুম্ম সাংস্কৃতিক সংসদ, জাবারাং কল্যাণ সমিতিসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ’র উদ্যোগে ঐতিহ্যবাহী উৎসব বৈসাবি ও চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে আজ শনিবার (১১ এপ্রিল) বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ২০ গুণীজনকে পরিষদের পক্ষ থেকে দেয়া হবে সংবর্ধনা।  এছাড়া হস্ত ও কুটির শিল্পসহ বিভিন্ন পণ্যের ৬ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। বৈসাবি ও নববর্ষ মেলা উপলক্ষে আগামীকাল রবিবার (১১ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টায় খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার শুভ উদ্বোধনের মাধ্যমে এ জেলায় উৎসব আয়োজনের সূচনা হবে।

 

এদিকে গতকাল (শুক্রবার) ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের আয়োজনে ইন্সটিটিউট প্রাঙ্গনে তিন দিনের বেইন বুনন, চিত্রাংকন, পাঁজন রান্না, পানি খেলাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা শেষ হয়েছে। এ অনুষ্ঠানে খাগড়াছড়ি জেলার সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, রিজিয়ন অধিনায়ক স. ম. মাহবুব-উল-আলম, ইনস্টিটিউটের পরিচালক সুসময় চৌধুরীসহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

 

এদিকে উৎসব আয়োজন সফল করতে  কিরণ মারমাকে আহবায়ক ও খাগড়াছড়ি পৌরসভার কাউন্সিলর মিলন দেওয়ানকে (মনাঙ) সদস্য সচিব করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি ‘সর্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটি’ গঠন করা হয়েছে।

 

এ কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে বৈসাবি উপলক্ষে আগামীকাল ১২ এপ্রিল রবিবার থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রবিবার ভোরে খবংপজ্জ্যায় বালুঘাট থেকে চেঙ্গী নদীতে  ফুল ভাসানো, একই দিন সকাল ৯টায় বৈসাবি শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর উপজেলা মাঠে সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পানি খেলা ও গড়িয়া নৃত্য অনুষ্ঠিত হবে এবং ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় নতুন বছরের সুখ-শান্তি কামনায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হবে। ১৩-১৬ এপ্রিল  বয়স্কদের পারস্পরিক শুভেচ্ছা বিনিময়।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত