পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ. কে আব্দুল মোমেন এমপি বলেছেন,মায়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে রাজি হলেও তাদের আন্তরিকতার অভাবের কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা যাচ্ছে না। মায়ানমার একটার পর একটা ইস্যু নিয়ে আসায় গেল সাড়ে ৩ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরৎ নিয়ে যায়নি।
সোমবার রাঙামাটি চিংলা মং চৌধুরী মারি ষ্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু অ্যাডভেঞ্চার উৎসবের উদ্বোধন করতে গিয়ে পররাষ্ট মন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন।
এর আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের আয়োজনে এবং বাংলাদেশ অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন,সেনাবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী ড.একে আব্দুল মোমেন এমপি। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন খাদ্য মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি, রাঙামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোঃ ইফতেকুর রহমান, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ, জেলা পুলিশ সুপার মীর মোদ্দাছদের হোসেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডেও ভাইস চেয়ারম্যান নূরুল আলম নিজামী।
আলোচনা সভা শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী ড.একে আব্দুল মোমেন এমপি বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন। আলোচনা শুরুর আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালিত পাড়া কেন্দ্রের বিভিন্ন জাতিসত্বার সাংস্কৃতিক শিশু শিল্পীরা জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন। এর পর পর উৎসবের টিম সংগীত পরিবেশন করা হয়। এর আগে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পররাষ্ট মন্ত্রী।
আলোচনা সভা অন্ঠুানে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী ড.একে আব্দুল মোমেন এমপি বলেন, বাংলাদেশের একদমাংশ জুড়ে নয়রানাভিরাম অপরার প্রকৃতি সৌর্ন্দয্য লীলাভরা এই পার্বত্য চট্টগ্রাম। এ অঞ্চলে রয়েছে বসবাসকারী মানুষয়ে বৈচিত্র্যময় জীবনধারা, সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্য থাকায় আরো বহুগুন বৃদ্ধি করেছে। তিনি আরো বলেন, অ্যাডভেঞ্চার না হলে এখানে কোন প্রাপ্তি নেই। অ্যাডভেঞ্চাররা যদি সফলকামী হয় তাহলে তাদের জীবনে বড় প্রাপ্তি।
তিনি আমাদের দেশে দুটো বড় সম্পদ হচ্ছে একটা হচ্ছে মানুষ আর একটি হচ্ছে পানি, নদী নালা আর জলাশয়।এই দুটা সম্পদকে কাজে লাগাতে পারি তাহলে কেউ আমাদেরকে ধাবাই রাখতে পারবে না। এই দুটো সম্পদকে যথাযথ ব্যবহার করা গেলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সোনার বাংলা এবং ২০৪১ সালে মধ্যে যে স্পিট লক্ষ্য রয়েছে তা পৌছাতে পারবো। তাই দেশের তরুনা হলেন সেই স্পিট লক্ষের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। তবে তা এমনিতে হবে না এ জন্য ত্যাগ স্বীকারসহ নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। বঙ্গবন্ধু বলেছেন সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হলে সোনার মানুষ দরকার। আর শিক্ষাটা হচ্ছে একটা বড় হাতিয়ার।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় সংখ্যা হচ্ছে তরুনরা। আগামী ১৫ বছর হাটতে হবে শুধু আমাদের নতুন প্রজন্মকে কাজে লাগানোর। সে কারণে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার উপর জোড় দিয়েছেন। সেজন্য বাজেটে শিক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বাজেট রেখেছেন। তবে শুধু শিক্ষা না সেই সাথে প্রযুক্তি খুব জোড় দিয়েছেন তিনি। প্রযুক্তির কারণে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে। তাই শিক্ষা ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কোন বাধা না থাকে সেজন্য সরকার খুবই আন্তরিক।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দীপংকর তালুকদার এমপি বলেন, অ্যাডভেঞ্জারের মাধ্যমে বহুবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা, নতুনকে জানার ইচ্ছা ও নিজেকে জানার জাগ্রত করা। তাই ইচ্ছা তাগিদ থেকে মানুষ অনেক কিছু করতে পারছে ও নতুন কিছু করার সাহজ জাগাচ্ছে।
আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় পর্যায়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে দেশব্যাপী বিভিন্ন আয়োজনের অংশ হিসেবে পার্বত্যাঞ্চলের জনগনের অংশ গ্রহন নিশ্চিত করা, মুজিব বর্ষ উদযাপনে ভিন্ন মাত্রা যোগ করা, পার্বত্য চট্টগ্রামে সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে দেশীয় ও আর্ন্তজাতিকভাবে উপস্থাপন, রোমাঞ্চ প্রিয় তরুনদের উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে বিশ^ব্যাপী অ্যাডভেঞ্চারমূলক কার্যক্রমে তাদের অংশগ্রহন বৃদ্ধিতে উদ্বুদ্ধকরণ, অ্যাডভেঞ্চার কার্যক্রমের মাধ্যমে তরুনদের মাঝে সাহস ও দেশ প্রেম জাগ্রত করা, চ্যালেঞ্জিং বিভিন্ন ইভেন্টে তরুনদের অংশ গ্রহনের মাধ্যমে আত্নপ্রত্যায়ী ও উদ্যামী যুব সমাজ গড়ে তোলা, তরুনদের মধ্যে শৃংখলা,পরোপকার,সহনশীলতাসহ বিভিন্ন মানবিক গুনের বিকাশ ঘটানো, পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটনের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো ও এ অঞ্চলে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমকে জনপ্রিয় করে তোলার লক্ষে এই বঙ্গবন্ধু অ্যাডভেঞ্চার উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। ৫দিন ব্যাপী প্রতিযোগিতার মধ্য রয়েছে ট্রেইল রান ও পেলিং, কানিওনিং , কায়াকিং, ট্রেকিং, রোপ কোর্স, কেভ ডিসকভারি, হাইকিং ও ট্রেইল রান, ট্রেজার হান্ট, ক্যাম্প ওরিয়েননটশন, হাইকিং, ফুরমোন পাহাড় ট্রেকিংসহ ইত্যাদি। আগামী ১৫ জানুয়ারী অনুষ্ঠানের সমপানী ঘটবে।
এই অ্যাডভেঞ্চার উৎসবে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১শ জন প্রতিযোগি অংশ নিয়েছেন। তার মধ্যে পার্বত্য তিন জেলা থেকে ৫০ জন প্রতিযোগি অংশ নিচ্ছেন। উদ্বোধনের পর পর ১শ জন প্রতিযোগির মধ্যে রাঙামাটি জেলায় ৪০ জন, বান্দরবান জেলায় ৩০ ও খাগড়াছড়ি জেলায় ৩০ জন প্রতিযোগি বিভিন্ন ইভেন্টে যোগদান করতে চলে যান। ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী অ্যাডভেঞ্চারারের বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণ করছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ইতিপূর্বে মায়ামারের সাথে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে উল্লেখ্য করে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, মায়ানমারের নির্বাচন এবং কোভিট পরিস্থিতির কারণে বিগত সময়ে আর কোন আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে আগামী ১৯ জানুয়ারী চিনের মধ্যস্থতায় মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে পুনরায় আলোচনার দিন নির্ধারণ রয়েছে বলে তিনি জানান।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ভারত সরকার বার বার অঙ্গিকার করেছে তারা যখনই ব্যবহার করবেন বাংলাদেশও সাথে সাথে এই ভ্যাকসিন পাবে। এই ভারত সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত। আমরা ভারতকে বিশ্বাস করতে চাই, ভারতের এই ব্যাপারে বার বার আলোচনা হয়েছে তারা আমাদের নিশ্চয়তা দিয়ে। অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে তারাও ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলেও তিনি জানান।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.