বরকল উপজেলার শুভলং ইউনিয়নের দুর্গম কৈতুরখীল মারমা পাড়ার অসহায় ছিন্নমুল লোকজন শীতে কাপছে। বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা শীতে কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। অথচ রাঙামাটির বিভিন্ন স্থানে অসহায় ছিন্নমুল লোকজনদের মাঝে সরকারী-বেসরকারীভাবে শীত বস্ত্র বিতরণ করা হলেও এই দুর্গম মারমা পাড়া গ্রামের মানুষের কাছে এক টুকরো শীতের কাপড় পৌছায়নি।
সরজমিনে জানা যায়, রাঙামাটির বরকল উপজেলার শুভলং ইউনিয়নের দক্ষিণে অবস্থিত কৈতুরখীল মারমা পাড়া। এই পাড়ায় ৫৪ পরিবারের বসবাস। পাড়ার বাসিন্দারা জুম চাষ, দিন মজুর আর পাহাড়ের বাগান করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। পাড়ার লোকজন গরীব ও অসহায় হওয়ার কারণে তীব্র শীত নিবারণের জন্য শীতের কাপড় কেনার তেমন একটা সামর্থ্য নেই। তাই তীব্র মীতের মধ্যেও ছিন্নমূল ও হতদরিদ্রদের জীবিকা সন্ধানে বের হতে হচ্ছে। বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা শীতে কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। অথচ সরকারী ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে অন্যান্য স্থানে শীত বস্ত্র দেওয়া হলেও এই দুর্গম কৈতুরখীল মারমা পাড়ার অসহায় ছিন্নমুল মানুষের কথা কেউই খবর রাখে না। ফলে তাদেও কপালে জুটেনি শীতবস্ত্র।
মারমা পাড়ার প্রবীন কার্ব্বারী অংচলা মারমা জানান, এই গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের আয়ের উৎস জুম ও দিন মজুরি। তাদের পক্ষে শীতের কাপড় কেনার সামর্থ নেই।
মিচিং মারমা জানান, ১০ বছর আগে স্বামী মারা গেছে। ১ ছেলে ১ মেয়ে তার। অন্যের জমিতে দিনমজুরির কাজ করে কোন মতে সংসার চলে। প্রতিদিন সকাল ও রাত্রে ছেলে মেয়েরা শীতে কাঁপতে হয়। কোন মতে একটি চাঁদর দিয়ে বুকে জড়িয়ে রাত কাটায়।
তিংমা মারমা জানান কএই কথা তার মেয়ের বয়স ২ বছরে তার স্বামী মারা যায়। সে থেকে বাবার ঘরে উঠেছে। বাবা জুম চাষ করে সংসার চালায়।
৬৫ বৎসর বয়স্ক তয়াংক্রা মারমা ও ৬০ বৎসর বয়স্ক অংতোআই মারমা জানান, বয়স্ক হওয়ার কারণে আয় রোজগারও করা সম্ভব হচ্ছে না। কাপড়গুলে বহু পুরানে হওয়ায় শীত নিবরারণ করা যায় না।
পাড়ার কার্ব্বারী মঞ্চ মারমা বলেন, এই পাড়ার সবাই জুম ও দিন মজুরির উপর নির্ভর। যেখানে নুন আনতে পান্টা পুরিয়ে যায়, সেখানে কারোর পক্ষে শীতের কাপড় কেনার সম্ভব নয়।
ওয়ার্ড মেম্বার কালা চোগা চাকমা বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে অপ্রতুল কম্বল বরাদ্দ পেয়েছেন। তার ওয়ার্ডে সাড়ে ৩শ পরিবারের মধ্যে অধিকাংশ জুম চাষী ও জেলে। সরকারিভাবে এ পর্যন্ত মাত্র ২৫টি কম্বল বরাদ্দ পেয়েছেন। তার মধ্যে এই পাড়াতে মাত্র ৩টি কম্বল বিতরণ করতে পেরেছেন।
বরকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মনজুরুল হক বলেন, সরকারি প্রাপ্ত বরাদ্দ শীতবস্ত্র প্রথম পর্যায়ের প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের জনসংখ্যা অনুপাতে দেওয়া হয়েছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.