আসন্ন রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে চলছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নানান দৌঁড়ঝাঁপ। এর মধ্যে এগিয়ে রয়েছে তরুন বয়সী ও বর্তমান মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী এবং গেল নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব।
তবে সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গেল ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন হাবিবুর রহমান হাবিব । মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্ধিতা করেছিলেন। এতে তিনি ‘জগ’ প্রতীক নিয়ে পেয়েছিলেন মাত্র ২৯ ভোট। তবে যাই হোক এবারের রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামীলীগ থেকে ১১জন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন বলে আলোচনায় শুনা যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৭ সালে টাউন কমিটি দিয়ে গঠিত হলেও ১৯৭২ সালের ৮ মে যাত্রা শুরু করে এ প্রথম শ্রেনীর রাঙামাটির পৌর সভাটি। এ পৌরসভার আয়তন ৬৪ দশমিক ৭২ বর্গকিলোমিটার। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত রাঙামাটি পৌরসভার বর্তমান ভোটার রয়েছেন ৫৭ হাজার ৭৮৪ জন(পুরুষ ৩২,১০৮,নারী ২৫,৬৮৬ জন)।
এদিকে, তফসিল এখনও ঘোষণা না হলেও রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি। আসন্ন পৌর নির্বাচনে এবারে আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য মেয়র পদে কে কে সম্ভাব্য প্রার্থী হচ্ছেন তা নিয়ে অফিস পাড়া, রেস্তোঁরা ও চায়ের দোকানসহ সর্বত্রই এখন আলোচনা ও গুঞ্জন চলছে। কে পাচ্ছেন আওয়ামীলীগ থেকে দলীয় মেয়রের মনোনয়ন। তবে এ পৌরসভার আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন চেয়েছেন, বর্তমান মেয়রসহ মোট ১১ জন। শেষ পর্যায়ে তাদের মধ্যে সম্ভাব্য তালিকার শীর্ষে বর্তমান মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী এবং সাবেক মেয়র হাবিবুর রহমান। এ দু’ জনের মধ্যে যে কেউ পেতে পারেন নৌকা।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মুছা মাতব্বর জানান, ইতোমধ্যে দলীয় নির্ধারিত ফরমে মনোনয়ন প্রত্যাশিদের তথ্য কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বিস্তারিত তথ্যাদি কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করবে কেন্দ্র।
অন্যদিকে, জানা গেছে বর্তমান মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী ও সাবেক মেয়র হাবিবুর রহমান ছাড়াও নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন চেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ নেতা অমর কুমার দে, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. সোলায়মান চৌধুরী, সহ-সভাপতি আবু সৈয়দ, মঈন উদ্দিন সেলিম, যুবলীগ নেতা মুজিবুর রহমান দীপু, সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য মনিরুজ্জামান মহসিন রানা, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নুর মোহাম্মদ কাজল, সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সেলিম ও জেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুল আলম।
দলীয় নেতাকর্মী অনেকের মতে, হাবিবুর রহমানের আগে দলীয় মনোনয়নে দু’বার মেয়র নির্বাচিত হলেও এবার জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ ওই সময় পৌরসভার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য তেমন কিছুই করতে পারেননি। দলীয় ভূমিকাও তেমন ছিল না তার। বিএনপি সরকারের আমলে মেয়র থাকায় তখন উল্টো দলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি। ওই সময়ে বিএনপির নেতা ও খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়ার সংবর্ধনা এবং রাঙামাটির সংসদ সদস্য উপমন্ত্রী মণিস্বপন দেওয়ানের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তৎকালীন মেয়র হাবিবুর রহমান। ফলে আওয়ামী লীগের স্থানীয় বেশির ভাগ নেতাকর্মী তার সংস্পর্শ ত্যাগ করেন। নেতাকর্মীরা এখন আর তার পক্ষে নেই।
এ ব্যাপারে হাবিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা তিনি জানান তিনি নির্বাচনে অংশ গ্রহণে ইচ্ছুক। তাই মনোনয়ন চেয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন পেলে নির্বাচন কররবন। না পেলে করবেন না। তিনি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে নেই। দল যাকে মনোনয়ন দেয়, তাকে নিয়ে কাজ করবেন।
এদিকে, দলীয় মনোনয়ন নিয়ে আবার নৌকার হাল ধরতে চান, বর্তমান মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী। গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে ১৭ হাজার ৯৪৩ ভোটে রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ওই সময়ের জেলা যুবলীগের সভাপতি মো. আকবর হোসেন চৌধুরী বর্তমানেও বহাল রয়েছেন। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী জেএসএস সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. গঙ্গা মানিক চাকমা পেয়েছিলেন, ১০ হাজার ১৯৮ ভোট। দলীয় নেতাকর্মী অনেকের মতে, মনোনয়ন পেলে এবারও বিপুল ভোটে জিতবেন আকবর।
মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী জানান, নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে রাঙামাটি পৌরসভার উন্নয়নে অনেকগুলো কাজে বিপুল সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি। পৌরসভার উন্নয়নে বাস্তবায়ন করেছেন মেগা প্রকল্প। ২০১৭ সালের পাহাড় ধ্বসে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের সহায়তায় এবং পরিস্থিতি মোকাবেলায় জোরালো ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। তা ছাড়া পাহাড় ধ্বসের ওই দুর্যোগের পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে গিয়ে দুই বছর সময় লেগেছিল। ফলে পাঁচ বছর মেয়াদের মধ্যে প্রকৃতপক্ষে কাজ করতে পেরেছিলেন কেবল তিন বছর। তাই গত নির্বাচনে দেয়া প্রতিশ্রুতির অনেকগুলো কাজ প্রক্রিয়াধীন থাকলেও সেগুলো অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে। সেগুলো সফল বাস্তবায়নে আবার দলীয় মনোনয়ন চান তিনি। মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটে জিতবেন।
তিনি আরো জানান, নির্বাচনের আগে আগে প্রথম প্রতিশ্রুতি ছিল- পৌরসভায় বসবাসকারী সব সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি ও সহাবস্থান বজায় রাখা। এ লক্ষে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়েছি। ফলে বর্তমানে রাঙামাটি পৌর এলাকায় শান্তি ও সম্প্রীতি বিরাজ করছে। এ পৌর এলাকার উন্নয়ন ও পৌরবাসীর সুবিধার জন্য শহরে অটোরিকশা স্টেশন, পুলিশ বক্স, ফুটপাত ও কিচেন মার্কেট নির্মাণ, রাস্তা প্রশস্তকরণ, পৌরসভার নিজস্ব জমি বা স্থাবর সম্পত্তি উদ্ধার ও রেকর্ডীয়করণ, গরু-ছাগল অবাধ বিচরণ বন্ধে খোয়ার নির্মাণসহ বিভিন্ন গণমুখী উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করেছি। কিন্তু বারবার চেষ্টার পরেও পৌরসভার এখতিয়ারভূক্ত জলাশয়, হাটবাজার, ঘাট ও বাস টার্মিনাল ইজারা দিতে পারিনি। প্রশাসনিক ও আইনি জটিলতার কারণে এ কাজগুলো বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বারবার বাধাগ্রস্ত হতে হয়েছে।
তিনি প্রক্রিয়াধীন কর্মকান্ড বাস্তবায়নে আবার দলীয় মনোনয়ন পেতে চাই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় নেতা এবং রাঙামাটির সংসদ সদস্য জননেতা দীপংকর তালুকদার ও দলীয় নেতাকর্মীদের দোয়া-আশির্বাদ প্রত্যাশা করেছেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.