রাঙামাটিতে তিন দিন ব্যাপী পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিবাসী সংস্কৃতি মেলা শুরু

Published: 08 Apr 2015   Wednesday   

রিনাফ্লুুং ট্র, টিংটেং ও শিঙায় বেজে উঠুক আদিবাসী জীবনের গান শ্লোগানকে সামনে রেখে বুধবার থেকে  তিন  দিন ব্যাপী পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিবাসী সংস্কৃতি মেলা শুরু হয়েছে।

 

রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গনে জুম ঈসথেটিকস কাউন্সিলের(জাক) উদ্যোগে বুধবার বিকালে ১৪ তম পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিবাসী সংস্কৃতি মেলার  মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে উদ্ধোধন করেন বিশিষ্ট সমাজকর্মী রেভা. এল ডলিয়েন বম। এসময় মং(ঘন্টা)  বাজিয়ে ১১টি জাতিগোষ্ঠীর ১১ বার ঘন্টা বাজানো হয়। এর পর জাকের শিশু শিল্পীরা উদ্ধোধনী সংগীত পরিবেশন করে। পরে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি  ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর মংসানু চৌধুরী। জাকের সভাপতি এ্যাডভোকেট মিহিরবরণ চাকমা সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট আদিবাসী লেখক ও গবেষক জিরকু সাহু, মথুরা বিকাশ  ত্রিপুরা, প্রয়াত বিশিষ্ট লেখক ডাঃ ভগদত্ত খীসার ছেলে ডা: পরশ খীসা ।  স্বাগত বক্তব্যে রাখেন সংস্কৃতি মেলা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক শান্তি ময় চাকমা।  অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রামে সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য মরণোত্তর সন্মাননা দেয়া হয় বিশিষ্ট লেখক ডাঃ ভগদত্ত খীসা এবং রেভা. এল ডলিয়েন বম ও সিংইয়ং ম্রোকে। উদ্ধোধনী দিনে বম,ম্রো ও ত্রিপুরা সাংস্কৃতিক দলের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।

 

আয়োজক কমিটি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত এগার ভাষাভাষি ১৪টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য ও সংহতির বন্ধন সুদৃঢ়ের পাশাপাশি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরতে এ মেলার আয়োজন।

 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর মাংসানু চৌধুরী বলেছেন, আদিবাসীদের স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জোরদার করতে হলে স্বনিয়ন্ত্রণের দাবী আরও অগ্রগ্রামী করতে হবে। এ স্বতন্ত্র কেবল সংস্কৃতি করে দিতে পারে। তাই সংস্কৃতিক স্বতন্ত্র অক্ষুন্ন রাখতে তার কোন বিকল্প নেই।

 

আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক সত্বা সংকটের মূখে দাঁড়িয়ে একটি সংকটকাল অতিক্রম করছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সংস্কৃতিক অভিযোজনের ঢেউ আছড়ে পড়ছে আমাদের সংস্কৃতির কুলসীমায়। ভিন্ন সংস্কৃতি সভ্যতা ও জীবনাচার্যের অপ্রতিরোধ্য আগ্রাসন বেসামালে আমাদের সংস্কৃতি। আমাদের চিন্তাভাবনা, দর্শন, মূল্যবোধ এখন পরমপরাকে সেভাবে ধারন করে না। আমরা আমাদের সংস্কৃতির মূল চেতনা থেকে দূরে সরে এসেছি। অন্ধ অনুপ্রীতির কারণে আমাদের ঐতিহ্য ও তার প্রীতির অভয়ব দিয়ে সংস্কৃতি পরিস্ফুট করছে তার অনেকখানি খসে পড়ছে। তাই এখন প্রশ্ন তোলার সময় এসেছে, সময় এসেছে আরও প্রশ্ন করার। আমরা কি সবাই পাহাড়ের অরণ্যে ঘেরা লালিত স্বতন্ত্রবোধ ও দায়বদ্ধতা  রয়েছি নাকি উৎসবের আমেজ উপভোগ করতে এসেছি। তাই যদি হয়ে থাকে এ পাহাড় অরণ্যে পরম মমতা বৈচিত্র্যমন্ডিত জীবনধারন নির্মাণ করে দিয়েছে তার প্রতি অপ্রতিরোধ্য অনুশাসনবোধ থেকে আমরা পদধূলি দিচ্ছি?

 

তিনি বলেন, একটি সংস্কৃতি একটি জাতির মৌলিক ও অবিচ্ছেদ্দ্য উপকরণ। সংস্কৃতি একটি জাতি গোষ্ঠীকে অন্য জাতিগোষ্ঠী থেকে আলাদা করে চিহিৃত করতে পারে। এভাবে আলাদাভাবে চিহিৃত করতে আমরা গর্ববোধ করি। আর এ গর্ববোধ হচ্ছে  স্বতন্ত্র।

 

তিনি আরও বলেন,  পাহাড়ের আদিবাসী মানুষের যে সংস্কৃতিকে পরম মমতায় গড়ে দিয়েছে লাবণ্য মোড়া, সেই সংস্কৃতিকে আমরা ছুরি-কাচি চালিয়ে তার অদৌল থেকে পাহাড়ের জীবনাচরন  থেকে কেটে বাদ দিয়েছি। আমরা আমাদের ভাষা, আচার-আচরনিক, খাদ্যাভাস, অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য, বিলাসিতা সামজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা পাওয়ার মোহে সংস্কৃতিকে জলানজলি দিতে পারি না। আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের স্বতন্ত্র সত্বায় অন্য দশ জনের মধ্যে আলাদা করে দেখার অধিকার রয়েছে। এ জন্য স্বতন্ত্র অধিকারকে প্রতিষ্ঠায় জোরদারে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

 

তিনি জাকের উদ্যোগে আদিবাসী মেলার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, আদিবাসী সংস্কৃতিকে শানিত করতে এবং সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে জাক যে উদ্যোগ নিয়েছে তা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। জাকের কর্মীবাহিনী সংস্কৃতি সচেতন এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু তাদের এ উদ্যোগ প্রেরণা, কর্মত, আগ্রহ  ও উজ্জীবিত করলেও অর্থ সংকটের কারণে তাদের সকল কাংখিত প্রয়াসকে বাধাগ্রস্থ করে রাখে। ফলে হুমকির মুখে অদিবাসী সংস্কৃতি।

 

এদিকে, মেলার দ্বিতীয় দিনে বৃহস্পতিবার রয়েছে বিকালে রয়েছে আদিবাসী কবিতা পাঠের আসর, আদিবাসী জীবন যাত্রার উপর প্রামাণ্য চিত্র এবং বম,মারমা(জো গীতিনৃত্য নাট্য) ও মোনঘর সাংস্কৃতিক দলের পরিবেশনায় আদিবাসী সংস্কৃতিক সন্ধ্যা রয়েছে। শুক্রবার বিকালে রয়েছে কবিতা পাঠের আসর ও  তংচংগ্যা, ত্রিপুরা, চাকমা সংস্কৃতিক দলের সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। এছাড়াও রয়েছে সন্ধ্যা ৭টায় ঝিমিত ঝিমিত চাকমার রচিত নাটক `ফিরিই` মঞ্চস্থ হবে।

 

তিন দিন ব্যাপী এ মেলায় আদিবাসী জীবন ও কর্মভিত্তিক স্থিরচিত্র প্রদর্শনী, আদিবাসীদের বেইন বুনন, বেত শিল্প ও আদিবাসী খাদ্য খাদ্য প্রদর্শীত হচ্ছে।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত