বান্দরবানের লামা উপজেলায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জোর পূর্বক পাহাড় কেটে অস্থায়ী বেড়ার ঘর নির্মাণ করে জমি জবর দখল চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
লামা পৌরসভা এলাকার লাইনঝিরি গ্রামের বাসিন্দা মৃত ইদ্রিস মুন্সির ছেলে মো. ছায়েদ আলী (৭৫), তার ছেলে মুজিবুল হক (৩৫) ও ফজল করিম (৪০) পাহাড় কেটে এ ঘর নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ করেন মো. আলী আজম (৬৭)। আলী আজম সম্পর্কে অভিযুক্ত ছায়েদ আলীর সৎ ভাই। এ ঘটনার আইনী প্রতিকার চেয়ে মো. আলী আজম বাদী হয়ে গত ৩ডিসেম্বর বড় ভাইসহ তিনজনকে বিবাদী করে লামা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, ১৯৮০ সালে লামা পৌরসভা এলাকার লাইনঝিরি গ্রামের বাসিন্দা মো. আলী আজম ২৯৩নং ছাগল খাইয়া মৌজার জি/২০৫নং আন্দরে চার একর তৃতীয় শ্রেণীর জমি বন্দোবস্তি পান। বন্দোবস্তির পর তিনি বহু অর্থ ও কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে লাইনঝিরিস্থ ওই জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির বনজ ফলজ গাছের বাগান সৃজন করে পরিবার পরিজন নিয়ে ভোগ করে আসছেন। বর্তমানে বাজার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই জমির ওপর মো. ছায়েদ আলী সহ অন্যদের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। তারা জমি দখলে নিতে বিভিন্ন সময় অপচেষ্টা শুরু করেন।
এ ধারাবাহিকতায় গত ২৩ অক্টোবর সকালে ছায়েদ আলী সহ অন্যরা সংঘবদ্ধ হয়ে জমি জবর দখলের উদ্দেশ্যে বোলড্রোজার(মাটি কাটার যন্ত্র) দিয়ে জমির পাহাড় কাটা শুরু করেন। এ সময় আলী আজম পাহাড় কাটায় বাঁধা দিলে প্রাণ নাশের হুমকির পাশাপাশি বোল ড্রোজার লাগিয়ে প্রায় ১৫ শতক আয়তনের পাহাড় কেটে সাবাড় করে ফেলে মো. ছায়েদ আলী সহ অন্যান্য আসামীরা। পরে এ ঘটনায় তিন জনকে বিবাদী করে মো. আলী আজম উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৪ ধারায় একটি ফৌজদারী মামলা করেন (যাহার পিটিশন নং-৬৫/২০২০, তারিখ- ২৫/১১/২০২০ইং)। এ প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ বিচারকের আদেশ পেয়ে মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিরোধীয় নালিশী জমিতে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে দুই পক্ষকে নির্দেশ দেন থানা পুলিশ। কিন্তু মো. ছায়েদ আলী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গত ৩ ডিসেম্বর ভোরে লোকজন নিয়ে বিরোধীয় জমিতে বাঁশের বেড়া দিয়ে একটি অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে বাঁশের বেড়া ফেলে পাহাড় কাটার স্থান আড়ালের চেষ্টা করেন অভিযুক্ত ছায়েদ আলী গং। এ ছাড়া লাইনঝিরি থেকে মধুঝিরি পর্যন্ত সড়কের অংশে বোলডোজার দিয়ে ২০টি স্পটে পাহাড় কাটা চলছে।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, এতদিন জানতাম বিরোধীয় জমি আলী আজমের। কিন্তু সম্প্রতি ওই জমিত ছায়েদ আলী দাবী করছেন। জমি দখল-বেদখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ নিয়ে যে কোন সময় অপ্রতিকর ঘটনাও ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
বোলডোজার দিয়ে পাহাড় কাটার সত্যতা স্বীকার করে মামলার বিবাদী ছায়েদ আলী ও মুজিবুল হক বলেন, কারো জমিতে নয়; আমরা আমাদের জমিতে ঘর নির্মাণ করেছি। তাছাড়া আলী আজমের জমির অবস্থান আমাদের জমিরও পশ্চিমে।
এদিকে মামলার বাদী আলী আজম বলেন, আমার ভোগদখলীয় যায়গায় বিবাদীগণ দখল সত্ব দেখাতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও তা অমান্য করে জোর করে কাঁচা ঘর নির্মান করে। বাদী আশংকা প্রকাশ করে বলেছেন, বিবাদীগণ পূঃনরায় উক্ত যায়গায় জোর করে পাকা ঘর নির্মান করতে পারে যে কোন সময়।
এ বিষয়ে লামা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোল্লা রমিজ জাহান জুম্মা বলেন, মামলার বিবাদী ছায়েদ আলীগং কর্তৃক আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিরোধীয় জমিতে ঘর নির্মাণের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.