এমএন লারমা ৮১তম জন্ম বার্ষিকী আজ

Published: 15 Sep 2020   Tuesday   

 

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সংসদ শহীদ মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার(এমএন লারমা) ৮১তম জন্মবার্ষিকী। তিনি ১৯৩৯ সারে ১৫ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মহাপ্রুম নামক স্থানে(বর্তমানে কাপ্তাই বাধের কারণে বিলুপ্ত) জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা চিত্ত কিশোর লারমা, মাতা শুভাষিনী দেওয়ান। এমএন লারমার তিন ভাই ও এক বোন। সবার বড় জ্যোতি প্রভা লারমা(মিনু) ছিলেন একজন সমাজকর্মী। বড় ভাই শুভেন্দু লারমা(বুলু) ছিলেন একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী, দক্ষ সংগঠক ও বিপ্লবী। সব চেয়ে ছোট ভাই বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা(সন্তু লারমা)।

 

এদিকে, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামরে মুখপাত্র ধনঞ্জয় চাকমার স্বাক্ষরতি এক প্রসে র্বাতায় বলা হয়, এমএন লারমা ৮১তম জন্ম র্বাষকিী উপলক্ষে মঙ্গলবার বাংলাদশে আদবিাসী ফোরামরে উদ্যোগে র্ভাসয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠতি হয়ছে।ে অনলাইন নিউজ পোর্টাল আইপি নিউজ এ অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে। এতে সভাপতত্বি করনে আদবিাসী ফোরামরে সাধারন সম্পাদক সঞ্জীব দ্রুং। আলোচনায় অংশ ননে বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, বশিষ্টি সাংবাদকি আবু সাঈদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মেসবাহ কামাল , বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. জোবাইদা নাসরীন কনা।


আলোচনা সভায় বক্তারা বলনে, মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা বহু জাতি, বহু বর্ণ, বহু ভাষা, বহু ধর্ম তথা বহুত্ববাদী বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত, নির্যাতিত, প্রান্তিক ও মেহনতি মানুষের অধিকারের জন্য মরণপণ লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে এমএন লারমা এখনো প্রাসঙ্গিক।


বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমএন লারমার জীবন-সংগ্রামকে স্মৃতিচারন করে বলেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামকে ধন্যবাদ এ অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য। আমরা যখন বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথা বলি তখন অনেকেই প্রশ্ন তুলেন। এমএন লারমা পাহাড়ীদের অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। ৬০ দশকের কাপ্তাই বাঁধ নিয়ে তিনিই প্রথম প্রতিবাদ করেছিলেন। তিনি শুধু চাকমাদের কথা ভাবেননি। তিনি সকল মেহনতি মানুষের অধিকারের জন্য সংগ্রামমুখর ছিলেন। তিনি নারীমুক্তির জন্য নিজেকে সমর্পিত করেছেন। তিনি শুধু জুম্ম জাতিসত্ত্বার জন্য বা সংকীর্ণ অর্থে লড়াই করেননি তিনি বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতেও নিজেকে সমর্পিত করেছেন। তিনি পার্লামেন্টেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।


তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর করে একটি স্বর্ণ দুয়ার খুলেছিল। সেখানকার ভূমি অধিকার এখনো প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। ভাগ কর, শাসন কর, ধ্বংস কর নীতি চলমান। তাই ঐক্যবদ্ধভাবে অধিকার আদায়ে এগিয়ে যেতে হবে।


বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম এমএন লারমাকে স্মরণ করে বলেন, তাঁর সাথে আমার দেখা হয়েছে। তাঁর দল ১৯৯৭ সালে সরকারের সাথে চুক্তি করেছে। আমি এ চুক্তিকে সমর্থন করি।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মেসবাহ কামাল ক্ষোভ ও আক্ষেপ জানিয়ে বলেন, রাষ্ট্র যখন একে একে গণতান্ত্রিক পন্থা রুদ্ধ করে দেয় তখন প্রকৃতিগতভাবে অন্য পন্থা অবলম্বন করতে হয়। মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা অধিকারের জন্য সেই সৃজনশীল পথে অগ্রসর হয়েছেন। তিনি নিজের জাতিসত্ত্বা এবং অপরাপর মেহনতি মানুষের জন্য কাজ করেছেন। তিনি মার্কসবাদী নেতা হয়েও জাতীয়তাবাদ সামনে নিয়ে এসে অগ্রসর হয়েছেন। যে উন্নয়ন অন্য জাতি বা এলাকাকে ডুবিয়ে দেয়, সেরকম গণবিরোধী উন্নয়নের ঘোর বিরোধী ছিলেন এমএন লারমা। তিনি কাপ্তাই বাঁধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মুখর ছিলেন। এমএন লারমা বহুত্ববাদের জন্য সংগ্রাম করেছেন। বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ আটটি বিভাগকে নিয়ে ৯টি প্রদেশ করে প্রাদেশিক শাসন করা উচিত এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদ কার্যকর করে পার্বত্য চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ন করা উচিত। তবেই দেশে গণতন্ত্র বিকশিত হয়েছে বলে মনে করা যাবে।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস এমএন লারমাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, এমএন লারমার সংসদীয় বক্তব্য পড়লে বুঝা যায় তিনি কোন মাপের রাষ্ট্র চিন্তাবিদ ছিলেন। সেই সময়ে বহুত্ববাদ চর্চার তীব্র আকাঙ্কা তিনি ব্যক্ত করেছেন। অথচ, তাঁর সমসাময়িক মূলধারার রাজনীতিবিদরা এটা কল্পনাও করতে পারেননি। বাংলাদেশ কেবল বাঙালির না, মুসলমানদের জন্য না। এটা সবার বাংলাদেশ। এখানে বহুত্ববাদ চর্চা করতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থার আমুল পরিবর্তনের ঘটিয়ে বিজ্ঞানমনস্ক ও সত্যিকার নাগরিক সৃষ্টি করে বাংলাদেশের পরিবর্তন ঘটাতে হবে।


সাংবাদিক ও লেখক আবু সাঈদ খান বলেন, সবার বাসযোগ্য দেশ গঠন করতে হলে এমএন লারমার চিন্তা ও আদর্শ চর্চার বিকল্প নেই। এমএন লারমা দেশকে ভালোবাসতেন। এজন্য তিনি সংসদে দাঁড়িয়ে বারবার সবার বাসযোগ্য দেশ গঠনের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি প্রথম মার্কসীয় দৃষ্টিকোণ থেকে জাতীয় সংসদে দেশের সকল জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক পরিচয় কি হবে তা তুলে ধরেছেন। মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি কমরেড এম এন লারমা ধারণ করেছিলেন।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. জোবাইদা নাসরীন কনা মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার অধিকার আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, এমএন লারমা আজীবন সংগ্রামী ছিলেন। ১৯৫৭ সালে হোস্টেলে খাবারের সময় নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিতর্ক করেন। তিনি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের উগ্র বাঙালী জাতীয়বাদ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং নিজের স্বকীয়তা তুলে ধরেন। আদিবাসীদের যে সংগ্রাম সেটা ভূমি রক্ষার সংগ্রাম, অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম। এমএন লারমা সেই অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামই করেছেন।


বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রংয়ের সভাপতিত্বে ও ফোরামের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হরেন্দ্রনাথ সিংয়ের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত অনলাইন আলোচনায় প্যানেল আলোচক হিসেবে অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য মেইনথিন প্রমীলা প্রমুখ।


প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা ১৯৩৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি শহরের অনতিদূরে সেই সময়ের এক বর্ধিষ্ণু গ্রাম মহাপূরমের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৮ সালে রাঙামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হতে ম্যাট্রিক পাশ করেন। এরপর তিনি চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে ১৯৬০ সালে আইএ পাশ করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি বিএ পাশ করেন। এরপর তিনি ১৯৬৮ সালে বিএড পাশ করেন এবং ১৯৬৯ সালে এলএলবি পাশ করেন। তাঁর উদ্যোগে ১৯৭২ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি গঠিত হয়। জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে বীরেন্দ্র কিশোর রোয়াজা ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত