সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ না নিয়ে চুক্তি বিরোধী কার্যক্রম চালাচ্ছে

Published: 20 May 2020   Wednesday   

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের ২২ বছরেও চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়িত না হওয়ায় যেমনি প্রতিষ্ঠিত হয়নি শাসনতান্ত্রিক অংশীদারিত্ব তেমনি সুনিশ্চিত হয়নি জুম্ম জনগণের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ভূমি অধিকার। ফলে সরকার চুক্তি বাস্তবায়নের কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে চুক্তি বিরোধী কার্যক্রম গ্রহণ করে চলেছে, যা পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে আরো জটিল থেকে জটিলতর করে তুলছে। তাই অবিলম্বে চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা না হলে অন্যথায় পাহাড়ের জুম্ম তরুণ ও যুব সমাজ অধিকতর আন্দোলনের পথ বেছে নিতে বাধ্য থাকবে। এতে তারা পিছপাও হবে না।

 

বুধবার(২০ মে) পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির সভাপিত জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার(সন্তু লারমা) সমর্থিত পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের(পিসিপি) ৩১ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন গণ মাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বার্তায় এই হুশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে।


পিসিপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মিলন কুসুম তঞ্চঙ্গ্যার স্বাক্ষরিত প্রেস বার্তায় আরো বলা হয়, করোনাভাইরাসের চরম মহামারী সংকটেও পার্বত্য চট্টগ্রামে একদিকে বহিরাগত ভূমিদস্যুরা পাহাড়িদের ভূমি দখলে নিচ্ছে। অন্যদিকে আইন-শৃংখলা বাহিনী জনসংহতি সমিতি নেতা-কর্মী ও সাধারণ পাহাড়িদের ঘরে ঘরে তল্লাশি চালাচ্ছে, নিরীহ জুম্মদের আটক ও তদের ধরে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করছে। সারা দেশ যেখানে করোনা আতঙ্কে আতঙ্কিত সেখানে জুম্ম জনগণ সেনাশাসন ও করোনা উভয়ের সাথে যুদ্ধ করে এক অনিশ্চিত ও নিরাপত্তাহীন পরিবেশের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করতে বাধ্য হচ্ছে। এ ছাড়াও প্রশাসনের ছত্রছায়ায় সংস্কারবাদী ও এএলপি নামধারী দলছুট সশস্ত্র গোষ্ঠী লাগামছাড়া অপহরণ, লুটপাত ও চাদাবাজি জুম্ম জনগনের জীবনকে আরও আতংকিত করে তুলেছে। সব কিছুর মূলেই রয়েছে পার্বত্য চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ার।


প্রেস বার্তায় বলা হয়, মহামারী এই করোনা ভাইরাসের প্রভাব ইতোমধ্যে বাংলাদেশে আঘাত হানা শুরু করেছে। দেশের আপামর জনসাধারনের সাথে দেশের প্রান্তিক থেকে প্রান্তিকতায় বসবাসকারী পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণও চরম উদ্বেগের সাথে জীবন অতিবাহিত করছে। সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষজন। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় চলছে চরম খাদ্য সংকট ও নিরাপত্তাহীনতা। । এর মাঝে সবচেয়ে যেটির খুব জরুরী সেটি হলো বিশ্ব স্বাস্থ্যা সংস্থার স্বাস্থ্যা বিষয়ক নির্দেশনা মেনে চলা। আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়া। তাই, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ মনে করে, কোন অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে নয়, বরং সচেতনতা এবং সর্বোচ্চ পরিষ্কার-পরিছন্নতাই পারে এই ভাইরাস থেকে পরিত্রাণ দিতে এবং সেই সাথে মহামারীর এই দুর্যোগ সময়ে নিজ নিজ এলাকায় দুর্গতের পাশে দাঁড়ানোর জন্যে আপামর ছাত্র ও যুব সমাজকে আহব্বান জানাচ্ছে।


প্রেস বার্তায় আরো বলা হয়, বিশ্বের পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা চিন্তা করে এ বছর পিসিপি তার প্রতিষ্ঠবার্ষিকী অন্যভাবে পালন করবে। "জুম্ম-স্বার্থপরিপন্থী ও চুক্তিবিরোধী সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষে বৃহত্তর আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ুন" এ শ্লোগানকে নিয়ে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ Voice of PCP থেকে জুম্ম ছাত্রদের দ্রোহী ও প্রতিবাদী কবিতা, গান, অনলাইনে প্রতিবাদী গানের শো ইত্যাদী আয়োজন করা হয়েছে। এসব আয়োজনের সাথে সংহতি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, বাগাছাস সহ বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র ও যুব সংগঠন।

 

এছাড়া শুভেচ্ছা জানাবেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও জাতিসংঘের এক্সপার্ট মেকানিজম অন দ্যা রাইটস অফ ইনডিজিনাস পিপলস (এমরিপ) কাউন্সিলের সদস্য বিনোতাময় ধামাই, সাবেক ছাত্রনেতা এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক বসুমিত্র চাকমা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবী, গানের দল মাদল, প্লুং ব্যান্ড সহ পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের বহু শুভাকাঙ্খী ব্যক্তিত্ব এবং রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠন। পাশাপাশি প্রেস বার্তায় সংগঠনের ৩১ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সর্বস্তরের জুম্ম জনগণসহ বিশ্বে আপামর নির্যাতিত, নিপীড়িত ও অধিকারহারা জনতাকে জানাই পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে রক্তিম অভিবাদন ও শুভেচ্ছা এবং সেইসাথে জন্মলগ্ন পর থেকে এই আপোষহীন লড়াই সংগ্রামে যারা জুম্ম জনগণের জন্য আত্মত্যাগ করেছে সেই বীর শহীদদের শ্রদ্ধা ও লাল সালাম জানানো হয়েছে।


উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালের ৪ঠা মে লংগদু গণহত্যার প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে ২০ মে প্রতিবাদী ছাত্র সংগঠন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ জন্ম লাভ করে। সেই সংগঠন অনেক চড়াই-উতরাই এবং নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আজকে ৩১টি বছর পূর্ণ করলো।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত