পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ন বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে পাহাড়ে নারী অধিকার সম্ভব

Published: 08 Mar 2020   Sunday   

আর্ন্তজাতিক নারী দিবসে বক্তারা বলেছেন, সম্পাদিত পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে পাহাড়ী নারীরা পার্বত্য চট্টগ্রামের শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত। পার্বত্য চুক্তির পূর্বে পাহাড়ী নারীরা যে আন্দোলন করতে হয়েছে চুক্তির পরেও তাদেরকে আন্দোলন করতে হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ন বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে পাহাড়ে নারী অধিকার সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন। 


রোববার রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের যৌথ উদ্যোগে আর্ন্তজাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।


জুম্ম নারীর সমঅধিকার ও সমর্যাদা নিশ্চিত করুন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হোন এই শ্লোগানকে সামনে রেখে জেলা শিল্পকলা এডাকেমী মিলনায়তনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের(টিআইবি) সদস্য এ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা। পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির সাংগঠনকি সম্পাদক রীতা চাকমার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও সাংসদ উষাতন তালুকদার,বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের পার্বত্যাঞ্চল শাখার সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, এমএন. লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা, জেএসএস এর স্টাফ সদস্য আশিকা চাকমা, জেলা যুব সমিতির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক নান্টু ত্রিপুরা, জেলা পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জগদীশ চাকমা। সভা সঞ্চালনা করেন রিনা চাকমা।


সভায় বক্তারা আরো বলেন, সারা বিশ্বে নারীদের উপর সহিংসতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশের নারী সমাজও বঞ্চিত হচ্ছে। নারীদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ভাবে অবহেলা করা হচ্ছে। ধর্মীয় দোহায় দিয়ে নারী সমাজকে পিছনে রাখা হচ্ছে। অথচ নারী ছাড়া এই বিশ্বে কোন অগ্রগতি সম্ভব না।


বক্তারা বলেন, পার্বত্য এলাকার পাহাড়ী নারীদের উপর সহিংসতা মাত্রা সবচেয়ে বেশি। এখানে বহিরাগত সেটেলার দ্ধারা আদিবাসী নারী ধর্ষণ, হত্যা, হয়রানি, যৌন নির্যাতন আশংকা জনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষের জন্য ফাউডেশনের ২০১৯ সালের এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে ৪৫ শতাংশেরও বেশি নারী কর্মক্ষেত্রে বা প্রতিষ্ঠানিক স্তরে বহু ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ৬১ শতাংশ জানিয়েছেন যে তারা বাজার এলাকায়, ৪৫ শতাংশ মাঠে, ৬ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, ৩ শতাংশ কর্মস্থলে সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছেন। আবার, ৩৩ শতাংশ নারী শরীরিক নির্যাতন, ৩৮ শতাংশ মানসিক নির্যাতন, ১৯ শতাংশ অর্থনৈতিক নিপীড়ন এবং ৫ শতাংশ যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অপরদিকে কাপেং ফাউডেশনের তথ্য মতে জানা যায়- ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ২৬টি আদিবাসী নারীর উপর সহিংস ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে ১৪টি সমতল অঞ্চলে এবং বাকী ১২টি পার্বত্য অঞ্চলে। যৌন বা শারীরিক নির্যাতনমূলক ৩৩টি ঘটনার মধ্যে ১২টি পাহাড়ে এবং ২১টি সমতল অঞ্চলে। এসব ঘটনায় কমপক্ষে ৭ জন নারীকে ধর্ষণ এবং ৫ জন  নারী ও কিশোরীকে হত্যা বা ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। আর ৭ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। অন্যান্যের মধ্যে ৩ জনকে গণধর্ষণ ও ৬ জনকে শারীরিক নির্যাতন এবং ২ জনকে যৌন নির্যাতন করা হয়েছে। আর ২০১৮ সালে প্রায় ৫৩ জন আদিবাসী নারী ও শিশু বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছে। তন্মধ্যে সমতলে ২২ জন আর ৩১ জন পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে। তাদের কোন সুবিচার মেলেনি।


বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঊষাতন তালুকদার বলেন, পার্বত্য এলাকার মানুষ শান্তি প্রিয় এবং সহজ সরল। এখানে রাজনৈতিক ভাবে সরকার আদিবাসীদের দমন- পীড়ন করছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। উল্টো চুক্তি বিরোধী কাজ করা হচ্ছে। অবহেলার মাত্রা চরম পর্যায়ে পৌছে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে যে কোন অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তার জন্য সরকার দায়ী থাকবে বলে তিনি সর্তক করেন। তিনি সবা্ইকে শান্তি প্রতিষ্ঠারও আহ্বান জানান।


প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুস্মিতা চাকমা বলেন, সারাবিশ্বে বর্তমানে ৭৪ কোটি নারী অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনৈতিক জীবনধারায় বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে, যাদের সামাজিক নিরাপত্তা, সরকারি সেবা ও অবকাঠামোর সুবিধা লাভে কোন সুযোগ নেই বললেই চলে। নারীরা পুরুষের তুলনায় ২.৬ গুণ বেশি অবৈতনিক ও গৃহস্থালি কাজ করে থাকে। বিশ্বে মাত্র ৪১ শতাংশ প্রসূতি তাদের নবজাতসহ মাতৃকালীন সুবিধা পেয়ে থাকে। বাকি ৫৯ শতাংশ প্রসূতি নারী মাতৃকালীন সুবিধা থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত। তিনজন নারীর মধ্যে অন্তত একজন নারী তাদের জীবনে সহিংসতার শিকার হয়ে থাকে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত