বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্তরের মমতা দিয়েই পাহাড়ের সমস্যা সমাধানে এগোচ্ছেন-পার্বত্য মন্ত্রী

Published: 26 Feb 2020   Wednesday   

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমাজ ব্যবস্থায় হেডম্যান (মৌজা প্রধান) ও কার্বারীদের (পাড়া প্রধান) মর্যাদা অত্যন্ত সুপ্রাচীন। এক’শ বছরের প্রাচীন এই সামাজিক নেতৃত্ব বংশ পরম্পরায় সরকারি ভূমি ব্যস্থাপনা, সাধারণ প্রশাসনকে সহযোগিতা ছাড়াও সমাজিক বিচার-আচারেও গুরুত্বপূর্ন। এখন থেকে তিন পার্বত্য জেলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এবং পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পে তাঁদের অংশ গ্রহণকে অবশ্যই থাকবে। শুধু তাই নয়, তাঁরা নিজেদের এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের উপস্থিতি ও শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতেও তদারকি করতে পারবেন।

 

তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্তরের মমতা দিয়েই পাহাড়ের সমস্যা সমাধানে এগোচ্ছেন। ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভুত মনের বেদনা বুঝতে পেরেছেন। সকল পক্ষের কল্যাণে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ‘ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তিচুক্তি’ স্বাক্ষর করেছেন।

 

‘মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার প্রথাগত প্রতিষ্ঠানের সেবা হবে জনতার" এই শ্লোগানে অনুষ্ঠিত বুধবার  খাগড়াছড়িেেত হেডম্যান সন্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি এ কথা বলেন।

 

পার্বত্য মন্ত্রী তিন পার্বত্য জেলার হেডম্যান-কার্বারীদের সম্মেলনে তিনি তাঁদের কল্যাণে ১০ লক্ষ টাকার একটি কল্যাণ ফান্ড গঠন, জেলা লিগ্যাল এইড কমিটিতে হেডম্যান-কার্বারীদের প্রতিনিধি অর্ন্তভুক্তি, আগামী অর্থ বছরে তিন জেলার হেডম্যানদের জন্য আধুনিক ও স্থায়ী কার্যালয় নির্মাণে মেগা প্রকল্প গ্রহণ এবং প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের মাধ্যমে সম্মানী বৃদ্ধির অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

 

খাগড়াছড়ি পৌর টাউন হলে সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্ক`র আয়োজনে অনুষ্ঠিত সন্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্ক`র সভাপতি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংরক্ষিত আসনের নারী এমপি বাসন্তী চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মেসবাহুল ইসলাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস্-চেয়ারম্যান আশীষ কুমার বড়–য়া, খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো: আব্দুল আজিজ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক খোন্দকার মো: রিয়াজুল করিম, চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায়, মং সার্কেল রাজা সাচিং প্রু চৌধুরী, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অবৈতনিক সদস্য চিংকিউ রোয়াজা, খাগড়াছড়ি পৌর মেয়র রফিকুল আলম, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো: শানে আলম এবং এএলআরডি এর উপ-নির্বাহী পরিচালক রওশন জাহান মনি। খাগড়াছড়ি জেলা হেডম্যান এসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক হিরন জয় ত্রিপুরার সঞ্চালনায় সম্পন্ন সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্ক`র সাধারণ সম্পাদক শান্তি বিজয় চাকমা। এর আগে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন শরণার্থী টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি।     

 

 সম্মেলনে জেলার ৩০০ জন হেডম্যান ও ৭০০ জন কার্বারি অংশ নেন। এ ছাড়াও তিন পার্বত্য জেলার হেডম্যান-কার্বারি নেতারাও যোগ দেন। সম্মেলনে তিন জেলার হেডম্যান কার্বারীদের পক্ষ থেকে পার্বত্যমন্ত্রী বীর বাহাদুরের কাছে একটি দাবিনামা তুলে ধরা হয়।

 

এর আগে সকাল ১০ টার দিকে দকে টাউন হল প্রাঙ্গন থেকে একটি বর্ণাঢ্য  র‌্যালী বের হয় শহরের প্রধান প্রধান সড়ক পদক্ষিন করে টাউন হলে গিয়ে শেষ  হয়। এবারের সম্মেলনে ২০২০-২৩ মেয়াদকালের জন্য খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও গুইমারার হেডম্যান কংজরী চৌধুরী ও রাঙামাটির হেডম্যান শান্তি বিজয় চাকমাকে সা: সম্পাদক করে ২১ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।

 

সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য মন্ত্রী আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন দেশের অন্যসব অঞ্চলের মতো করে পাহাড়ের মানুষকেও দেখতে এসেছিলেন। তিনিই পাহাড়ের মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার  স্রোত সূচনা করেন। সেই ধারাকে অব্যাহত রেখেছেন তাঁরই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সকলে মিলে বর্তান সরকারের অগ্রগতিকে এগিয়ে নেয়াই পার্বত্যবাসীর নাগরিক দায়িত্ব।

 

উদ্বোধকের বক্তব্যে খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী পদ-মর্যাদায় শরণার্থী টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, পাহাড়ের সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি তিন পার্বত্য জেলায় ৩’শ জন হেডম্যান এবং ৭’শ জন কার্বারী সরকারিভাবে স্বীকৃত। তাঁরা নামমাত্র ভাতা পাচ্ছেন। কিন্তু ঐতিহ্যিক ও প্রথাগত এই কাঠামোর প্রতি দেশ স্বাধীনের পর পর জাতির পিতাই প্রথম মনোযোগ দিয়েছিলেন। বিগত ২০১২ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেডম্যান-কার্বারীদের তাঁর গণভবনের কার্যালয়ে ডেকে সম্মানী বৃদ্ধি করেছেন।

 

সভাপতির বক্তব্যে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী বলেন, হেডম্যান-কার্বারীদের অবদান অনেক হলেও তাঁদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের অভাব লক্ষনীয়। হেডম্যান-কার্বারীদের সম্মানী প্রদানের প্রক্রিয়াটি সহজ করার পাশাপাশি প্রথাগত এই কাঠামোকে সরকারি সহায়তার মাধ্যমে পাহাড়ে শক্তিশালী গ্রাম আদালত গড়ে তোলা সম্ভব।

 

সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চাকমা সার্কেলের চীফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নাম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বলেন, ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুই গেজেটের মাধ্যমে আমাকে সার্কেল চীফের সরকারি স্বীকৃতি প্রদান করেন। তখন আমি স্কুলের ছাত্র। আমি তাঁর সান্নিধ্য পেয়েছি। তিনিই সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের জনক এবং তাঁর অবদানের কথা পার্বত্যাঞ্চলের মানুষ ভুলতে পারে না।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

 

 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত